প্রশ্নঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে ট্রাইব্যুনালের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা।
ভূমিকাঃ “দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস-১৯৭২” এর মাধ্যমে আইনজীবীদের পেশা সংক্রান্ত বিধি বর্ণিত হয়েছে। উক্ত বিধিতে কোন আইনজীবী তার দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এই শাস্তি কার্যকর বা বাস্তবায়নের জন্য গঠিত হয়েছে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীন ট্রাইব্যুনালের গঠনঃ “দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস-১৯৭২” এর ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিম্নোক্তভাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে-
(১) বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবেন।
(২) প্রত্যেকটি ট্রাইব্যুনালে তিনজন সদস্য থাকবেন।
(৩) এই তিনজনের মধ্যে দুইজন হবেন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য এবং একজন হবেন বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত যে কোন আইনজীবী।
(৪) উক্ত তিন সদস্যের মধ্যে আইন পেশায় যিনি সিনিয়র তিনি হবেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য যে, এটর্নি জেনারেল কোন ট্রাইব্যুনালের সদস্য হবেন না।
বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ “দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস-১৯৭২” এর অনুচ্ছেদ ৩৪ অনুযায়ী নিম্নে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হলো-
(১) নির্ধারিত কার্যপদ্ধতি অনুসরণ : বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীদের আচরণ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করবেন। [অনুচ্ছেদ-৩৪(১)]
(২) শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ : বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল মোকদ্দমার শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করবেন। উক্ত তারিখ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এবং এটর্নি জেনারেলকে নোটিশ প্রদান করবেন এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এবং এটর্নি জেনারেলকে সাক্ষ্য উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করবেন। [অনুচ্ছেদ-৩৪(২)]
(৩) চেয়ারম্যান কর্তৃক ক্ষমতা অর্পণ : অন্য আইনে যা-ই থাক ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান ট্রাইব্যুনালের যে কোন একজন সদস্যকে প্রাথমিক বিচার্য বিষয় নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। [অনুচ্ছেদ-৩৪ (৩)]
(৪) অভিযোগ খারিজ বা শাস্তি প্রদান : অনুসন্ধান শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল উক্ত অভিযোগ খারিজ অথবা শাস্তি প্রদান করতে পারেন। যদি বার কাউন্সিল স্ব-উদ্যোগে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন তাহলে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিবেন। [অনুচ্ছেদ-৩৪ (৪)]
(৫) সাময়িকভাবে সনদ স্থগিত : ট্রাইব্যুনাল যদি কোন আইনজীবী সনদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন তাহলে তার মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিবেন। এই মেয়াদে উক্ত আইনজীবী বাংলাদেশের যে কোন আদালতে আইন পেশা থেকে বিরত থাকবেন। [অনুচ্ছেদ- ৩৪ (৫)]
(৬) খরচ প্রদানের আদেশ : ট্রাইব্যুনাল ন্যায়সঙ্গত যে কোন খরচ প্রদানের আদেশ প্রদান করতে পারেন। অভিযোগটি যদি মিথ্যা বা তুচ্ছ হয় তাহলে অভিযুক্ত আইনজীবীকে অন্য প্রতিকারের পাশাপাশি অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অভিযোগকারীকে নির্দেশ দিবেন। [অনুচ্ছেদ-৩৪ (৬)]
(৭) খরচ আদেশের কার্যকারিতা : ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক খরচ আদেশের কার্যকারিতা হাইকোর্টের আদেশের ন্যায় হবে। [অনুচ্ছেদ-৩৪(৭)]
(৮) রিভিউ : উপরোক্ত ৪ বা ৬ দফার কোন আদেশ ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে বা আবেদনে পুনর্বিবেচনা বা রিভিউ করতে পারবেন।[অনুচ্ছেদ-৩৪ (৮)]
(৯) সনদ ফেরত নেওয়া : কোন আইনজীবীকে তিরস্কার বা তার পেশা পরিচালনা স্থগিত করা হলে আইনজীবীর তালিকায় তার নামের বিপরীতে উক্ত শাস্তির একটি নথি রক্ষিত হবে। কোন আইনজীবীকে তার পেশা পরিচালনা থেকে অপসারণ করা হলে আইনজীবী তালিকা থেকে তার নাম কর্তন করা হবে এবং তার সনদ ফেরত নেওয়া হবে। [অনুচ্ছেদ-৩৪(৯)]
উপসংহারঃ আইনজীবীগণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের একই পেশার সদস্যদের সাথে, মক্কেলদের সাথে আদালতের সাথে, সাধারণ জনগণের সাথে আদর্শ আচরণ নিশ্চিত করে থাকেন। যদি কোন আইনজীবী তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন বা পেশাগত অন্য কোন অন্যায় করেন তাহলে তাদের জন্য “দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস-১৯৭২” বিধিতে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই শাস্তি প্রদান করা হয় বার কাউন্সিলের অধীন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে।
Leave a comment