[Define sale. How is it made? How does it differ from a contract for sale?]
উত্তরঃ
বিক্রয় কাকে বলেঃ ‘বিক্রয়’ বলতে মূল্যের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তরকে বুঝায় । ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৪ ধারায় বিক্রয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারা মতে বিক্রয় হচ্ছে মালিকানা হস্তান্তর বা পরিশোধিত মূল্যে বা পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুত অথবা আংশিক পরিশোধিত এবং আংশিক পরিশোধে মূল্যের বিনিময়ে করা হয়।
চিটাগাং ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি: বনাম ইনকাম ট্যাক্স অফিসার [22 DLR, SC. 197] মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বলেন যে, পরিশোধিত বা পরিশোধ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ বা আংশিক পরিশোধিত এবং আংশিক পরে পরিশোধ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ কোন মূল্যের বিনিময়ে সম্পত্তি মালিকানা হস্তান্তর করাকে বলা হয় বিক্রয়।
চীনের এই সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মূল্যই হচ্ছে বিক্রয়ের মূল ভিত্তি। মূল্য স্থির না করে কোন বিক্রয়চুক্তি সম্পাদন করা হলে তা আইনে প্রয়োগযোগ্য হবে না। বিক্রয়ের দ্বারা ক্রেতার অনুকূলে বিক্রেতার সকল প্রকার স্বত্ব হস্তান্তরিত হয়ে যায়। সেই সম্পত্তির উপর অবশ্য বিক্রেতার বিক্রয়যোগ্য অধিকার থাকতে হবে এবং বিক্রয়ের পর বিক্রেতার উপর সেই অধিকার বর্তায়।
অতএব বিক্রয়ের উপাদান মূলত তিনটিঃ
(ক) বিক্রয় চুক্তি বা সেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়; (খ) দখল অর্পণ; (গ) মূল্য পরিশোধ।
বিক্রয় কিভাবে সম্পন্ন হয়ঃ
বিক্রয়ের জন্য উপাদান মূলত ৩টি। এই উপাদানগুলি পূরণ হলেই বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে থাকে। উপাদানগুলি হচ্ছে, (১) বিক্রয়-চুক্তি, (২) দখল অর্পণ ও (৩) মূল্য পরিশোধ।
(১) বিক্রয়-চুক্তিঃ বিক্রয়-চুক্তি বিক্রয়ের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ। একটি লিখিত দলিলে “বিক্রয়-চুক্তি” সম্পাদন করা হয়। এই দলিল রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে স্বত্ব হস্তান্তরিত হয় অর্থাৎ বিক্রয় সম্পন্ন হয়। স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকার কম হলে দলিল সেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক নয়। তবে দখল অর্পণ করতে হবে। দখল অর্পণ না করা হলে রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই করতে হবে। কাজেই ১০০ টাকার কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি দখল অর্পণ দ্বারা বা দলিল রেজিস্ট্রেশন দ্বারা বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে থাকে।
স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকা বা তদূর্ধ্ব হলে বিক্রয় দলিল অবশ্যই সেজিস্ট্রি করতে হবে। এছাড়া অদৃশ্যমান সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্য যাই হোক না কেন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৪ ধারায় এবং রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭ ধারায় যে সকল ক্ষেত্রে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সে সকল ক্ষেত্রেও দলিল সেজিস্ট্রি না হলে বিক্রয় সম্পন্ন হয় না।
(২) দখল অর্পণঃ স্বত্ব হস্তান্তরের জন্য সকল ক্ষেত্রে দখল অর্পণ বাধ্যতামূলক নয়। যে সকল স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকার কম সে সকল সম্পত্তির বিক্রয় সম্পন্ন করতে হলে দখল অর্পণ আবশ্যক। অবশ্য এর বিকল্প হিসেবে দলিল সেজিস্ট্রি করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন, ১০০ টাকার বা তার বেশি মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৪ ধারা ও রেজিস্ট্রেশন আইনে ১৭ ধারা মোতাবেক বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে দখল অর্পণ বাধ্যতামূলক নয়। রেজিস্ট্রেশন হলেই স্বত্ব হস্তান্তরিত হয়।
(৩) মূল্য পরিশোধঃ বিক্রয়ের জন্য মূল্য পরিশোধ করা যদিও একটি অন্যতম উপাদান তবুও এর অবর্তমানে বিক্রয় অসম্পন্ন বা অসিদ্ধ হয় না। প্রথম দু’টি উপাদান পূরণ করা হলেই তৃতীয় উপাদানটি পূরণ করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। তাই বলা যায় যে, শুধু রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারা বা দলিল ও দখল অর্পণ দ্বারা স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বিক্রয় ও বিক্রয় চুক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
যদিও বিক্রয়-চুক্তির মাধ্যমে বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে থাকে তবু ‘বিক্রয়-চুক্তি’ ও ‘বিক্রয়’ এক নয়। এ দুটোর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমানঃ
১. ‘বিক্রয়’ হচ্ছে মূল্যের বিনিময়ে মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর। অর্থাৎ ‘বিক্রয় চুক্তির’ পূর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে বিক্রয়। অপরপক্ষে, বিক্রয় চুক্তি দ্বারা পরবর্তী সময়ে একটি বিক্রয় সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করা হয়।
২. বিক্রয়ের দ্বারা ক্রেতা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে স্বত্ব অর্জন করে এবং সে বিক্রীত সম্পত্তির মালিক হয়।
বিক্রয় চুক্তি দ্বারা ক্রেতা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে কোন স্বার্থ স্বত্ব লাভ করে না, কারণ চুক্তি দ্বারা সে অপর পক্ষের উপর ব্যক্তিগত অধিকার অর্জন করে– সম্পত্তির উপর নয়৷
৩. বিক্রয়ের দ্বারা ক্রেতা যে অধিকার লাভ করে তা সর্বজনীন (Right in rem) এবং যে কোন লোকের বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা যায়।
কিন্তু বিক্রয় চুক্তি দ্বারা যে অধিকার লাভ করে তাকে রাইট ইন পার্সোনাম (right in personum) অর্থাৎ ব্যক্তি বিশেষের উপর অধিকার অর্জন করে। এই অধিকার শুধু বিক্রেতার বিরুদ্ধে বিনামূল্যে হস্তান্তরগ্রহীতা এবং চুক্তির কথা জেনেও হস্তান্তরকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়।
৪. বিক্রয়মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের পর ৫৫ ধারায় ৬ উপধারা অনুসারে বিক্রীত সম্পত্তির উপর অপরিশোধিত মূল্যের জন্য আইনের দ্বারা চার্জ সৃষ্টি হয়।
কিন্তু বিক্রয় চুক্তি দ্বারা ৫৪ ধারা মতে শুধু বিক্রয়ের অঙ্গীকার করা হয়, সম্পত্তিতে ক্রেতা কোন স্বার্থে অর্জন করে না বা এতে কোন চার্জ সৃষ্টি হয় না।
৫. এক শত টাকা বা ততোধিক মূল্যে সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দলিল সেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক, কিন্তু যে কোন মূল্যের বিক্রয়-চুক্তি করা যায় যা রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক নয়৷
৬. বিক্রয় সম্পন্ন হবার সম্পত্তির কোন ক্ষতি হলে তা ক্রেতাকেই বহন করতে হয়। বিক্রয়-চুক্তির পর সম্পত্তির ক্ষতি হলে তা বিক্রেতাকেই বহন করতে হয়।
৭. বিক্রয়ের পর সাধারণত বিক্রেতার কোন দায় থাকে না যদি চুক্তিপত্রে অন্যরূপ শর্ত না থাকে। বিক্রয় চুক্তির পর সেই দলিল সম্পাদন ও সেজিস্ট্রি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষের দায়-দায়িত্ব থেকে যায়।
৮. বিক্রয়ের পর বিক্রেতা সেই সম্পত্তি অন্য কারো নিকটে হস্তান্তর করলে বা হস্তান্তরের প্রচেষ্টা নিলে ক্রেতা আইনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করতে পারে এবং সম্পত্তিতে কেউ অবৈধ দখলদার থাকলে তাকে উচ্ছেদ করতে পারে।
কিন্তু বিক্রয়-চুক্তির পর বিক্রেতা সেই সম্পত্তি অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করলে বা হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ক্রেতা বিক্রেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারে, কিন্তু সম্পত্তির কোন দখলদারকে উচ্ছেদ করতে পারে না। কেননা সম্পত্তির উপর তার কোন অধিকার অর্জিত হয় না।
Leave a comment