প্রশ্নঃ মার্শালিং মতবাদ বলতে কি বুঝ? বিক্রয় ও রেহেনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ আলোচনা কর এবং উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ
মার্শালিংঃ সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে মার্শালিং নীতি বা বিন্যাসের নীতি বলতে পরবর্তী কোন ক্রেতা বা রেহেনগ্রহীতা কর্তৃক প্রাপ্ত অধিকারকে বুঝায়। এই নীতিটি একমাত্র বিক্রয় ও রেহেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৬ ধারায় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং ৮১ ধারায় রেহেনের ক্ষেত্রে বিন্যাসের নীতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৫৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি দুই বা ততোধিক সম্পত্তির মালিক এগুলি কোন এক ব্যক্তির নিকট রেহেন দেয় এবং পরে এই সম্পত্তি হতে এক বা একাধিক সম্পত্তি অন্য কারো নিকট বিক্রি করে, তবে বিপরীত চুক্তির অবর্তমানে ক্রেতা যে সম্পত্তি তার নিকট বিক্রি করা হয় নি, তা হতে যতদূর সম্ভব রেহেনের টাকা আদায় করার জন্য রেহে গ্রহীতাকে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, তা দ্বারা কোন রেহেনগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবার অন্য লোকের অধিকার অথবা মূল্যের বিনিময়ে উক্ত সম্পত্তির কোন একটিতে কোন ব্যক্তির অর্জিত স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
৮১ ধারার মতে, দুই বা ততোধিক সম্পত্তির মালিক যদি এগুলি একজনের কাছে রেহেন দেয় এবং পরে সেগুলির মধ্য হতে কোন সম্পত্তি অপর একজনের নিকট রেহেন দেয় তবে বিপরীত চুক্তির অবর্তমানে দ্বিতীয় রেহেগ্রহীতা তার নিকট যে সম্পত্তি রেহেন দেয়া হয় নি, তা হতে প্রথম রেহেগ্রহীতার পাওনা যতদূর সম্ভব আদায় করে নেয়ার দাবী করতে পারে। কিন্তু এরূপ দাবী প্রথম রেহেগ্রহীতা বা উক্ত সম্পত্তিগুলির কোন একটিতে মূল্যের বিনিময়ে স্বার্থপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।
উদাহরণঃ ক তার দুটি সম্পত্তি চ ও ছ খ এর নিকট রেহেন দিল। তারপর আবার টাকার প্রয়োজনে তার ছ সম্পত্তিটি গ এর নিকট রেহেন দিল। এমতাবস্থায় ক যদি খ ও গ এর পাওনা পরিশাধ না করে তবে তারা কোটের মাধ্যমে ফোরক্লোজ করে সম্পত্তিগুলি বিক্রি করতে পারে। ধরা যাক, খ তার পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করলো এবং ডিক্রী পেলো, খ এর নিকট জামানত রয়েছে চ ও ছ সম্পত্তি। এই দু’টি সম্পত্তির মধ্যে একটি বিক্রি তার টাকা উদ্ধার করার জন্য আদালতের নিকট আবেদন করলো। কিন্তু গ এর নিকট রেহেনের একমাত্র জামানত সম্পত্তি। এমতাবস্থায় যদি ক কে ছ সম্পত্তিটি বিক্রি করে তার টাকা উদ্ধার করতে অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে গ এর নিকট কোন জামানত থাকে না, অথচ ক এর নিকট চ সম্পত্তিটি তখনো থেকে যায়। এরূপ করা হলে দ্বিতীয় রেহেনগ্রহীতা গ এর স্বার্থের ক্ষতি হয়। এ সকল অবস্থা দূর করার উদ্দেশ্যে মার্শালিং নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে। এই নীতির বলে গ প্রথমে চ সম্পত্তিটি বিক্রি করার ব্যাপারে প্রথম রেহেন গ্রহীতা খ কে বাধ্য করতে পারে। ঐ সম্পত্তি বিক্রি করে খ এর পাওনা আদায় হয়ে গেলে ছ সম্পত্তিটি গ এর নিকট থেকে যাবে। আর পাওনা পরিশোধ হলে খ তখন ছ সম্পত্তিটি বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারবে। এটা বিক্রি করে খ এর প এর পাওনা পরিশোধের পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা গ এর পাওনা পরিশোধে ব্যবহার করা হবে। একে বলে মার্শালিং বা জামানত বিন্যাস।
বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্শালিং প্রয়োগ সম্পর্কে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৬ ধারায় বিধান রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি দুই বা ততোধিক সম্পত্তির মালিক একটি সম্পত্তি কোন এক ব্যক্তির নিকট রেহেন দেয় এবং তৎপর ঐ সম্পত্তির কিছু অংশ অন্য কারো নিকট বিক্রয় করে তবে বিপরীত চুক্তির অবর্তমানে ক্রেতা যে সম্পত্তি তার নিকট বিক্রয় করা হয়নি উহা হতে যতদূর সম্ভব রেহেনের টাকা আদায় করার জন্য রেহে গ্রহীতাকে বাধ্য করতে পারে; কিন্তু শর্ত থাকে যে, উহা দ্বারা কোন রেহেনগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবীদার অন্য লোকের অধিকার অথবা মূল্যের বিনিময়ে উক্ত সম্পত্তির কোন একটিতে কোন ব্যক্তির অর্জিত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করা যাবে না৷
Leave a comment