প্রশ্নঃ “বলপূর্বক আদায়” ও “চুরি”-এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
চুরি (Theft): বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৮ ধারায় চুরির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারানুসারে কারো দখল হতে তার সম্মতি ব্যতিরেকে কোন অস্থাবর সম্পত্তি অসাধুভাবে গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে ঐ সম্পত্তি স্থানান্তর করলে তাকে চুরি বলা হয়।
বলপূর্বক আদায় বা ছিনতাই (Extortion): দন্ডবিধির ৩৮৩ ধারায় বলপুর্বক আদায়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তিকে ভয় দেখায়ে তার নিকট কোন সম্পত্তি বা মুল্যবান জামানত কিংবা জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য সীলমোহর ভুক্ত কোন বস্তু প্রদানে বাধ্য করে তাহলে সে ব্যক্তি বলপূর্বক আদায়ের দোষে দোষী সাব্যস্ত হবে।
‘বলপূর্বক আদায়” ও “চুরি”-এর মধ্যে পার্থক্যঃ উপরিউক্ত সংজ্ঞাগত পার্থক্য ছাড়াও চুরি ও ছিনতাই এর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমান-
(১) চুরি ও ছিনতাই উভয়ের মধ্যে অসাধু অভিপ্ৰায় বিদ্যমান। কিন্তু অসাধু অভিপ্রায় ব্যতিরেকে সরলবিশ্বাসে, অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যের সম্পত্তি নিজের মনে করে স্থানান্তর করলে তা চুরির পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু অসাধু অভিপ্রায়ের অবর্তমানে বা সরলবিশ্বাসে ছিনতাই সংঘটিত করা যায়।
(২) চুরির ক্ষেত্রে মালিক বা দখলকারের সম্মতি ব্যতিরেকেই বস্তু অপসারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ভীতি প্রদর্শন করা হয় না। কিন্তু ছিনতাই এর ক্ষেত্রে ভীতি প্রদর্শন করে বা জোরপূর্বক মালিক বা দখলকারের নিকট হতে বস্তু অপসারণ করা হয়। ছিনতাই এর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি বাদীকে কোন ক্ষতির আতংকে নিপতিত করে। এই ক্ষতিটি হচ্ছে স্বয়ং বাদী বা অন্য কোন ব্যক্তির উপর। চুরির ক্ষেত্রে গোপনে বস্তু অপসারণ করা হয় হেতু কোন আতঙ্কের সৃষ্টি হয় না।
(৩) অবস্থানুসারে একজন ব্যক্তি তার নিজ সম্পত্তি চুরির দায়ে দোষী বিবেচিত হতে পারে। বলপূর্বক বা ভয় দেখায়ে অন্যের দখল হতে নিজ সম্পত্তি ছিনিয়ে নিলেও ছিনতাই এর দায়ে দোষী বিবেচিত হতে পারে।
(৪) দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারা অনুযায়ী চুরির শাস্তি ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই; কিন্তু ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী ছিনতাই এর শাস্তি ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয়ই।
Leave a comment