প্রশ্নঃ কোন কোন অবস্থায় অপরাধ সৃষ্টিতে ‘দোষী মন’ অত্যাবশ্যকীয় এবং কোন্ কোন্ অবস্থায় নয়? আলোচনা কর। ‘আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা অপরাধমূলক দায় থেকে মুক্তির কোন ক্ষেত্র নয়’- ব্যাখ্যা কর।

মেনস রিয়া (Mens rea): কোন অন্যায় বা নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটন করে কিংবা অবহেলা ক্রমে করে থাকে তবে তাকে সে কাজের জন্য দায়ী হতে হয়। ইচ্ছাকৃত কাজের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় যে, অন্যায়কারীর একটি অসৎ অভিপ্রায় বা দোষী মন ছিল। অবহেলার ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় যে, সংঘটনকারী সাবধানতা অবলম্বনে আইনগত কর্তব্য ভঙ্গ করেছে। কাজেই মেন্‌স রিয়া হচ্ছে একটা মানসিক উপাদান যা একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য আবশ্যকীয় বলে ব্রিটিশ কমন ল’য়ে সর্বদা বিবেচিত হয়েছে। তবে কোন বিধিবদ্ধ আইনে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে। কেননা এ সকল ক্ষেত্রে বলা হয় যে, কাজটি যদি বেআইনী হয় তবে তার সংঘটনের জন্য দায়ী হতে হবে। এতে সংঘটনকারীর মানসিক উপাদান যাই থাকুক না কেন তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে সুষ্পষ্টভাবে এর আবশ্যকতা অস্বীকার না করা পর্যন্ত মেনস রিয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুমান করা হয়। ১৯৪৬ সালে লর্ড গোড্ডার্ড [62 T.L.R 482 (DC.)] যে নীতিটি প্রতিষ্ঠিত করেন তা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন যে, জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না যতক্ষণ না তার একটি দোষী মন থাকে। অবশ্য যদি কোন সংবিধি দ্বারা এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয় তবে ত স্বতন্ত্র বিষয় হবে।

মেনস রিয়া মতবাদটি অপরাধ বিজ্ঞানে বেশ আলোচ্য বিষয়। এই মতবাদটি যেমন সকল ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা যায় না। তেমন এর প্রয়োজনীয়তা ও সকল ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যায় না। যেমন কোন ব্যক্তি যদি তার বাগানে তীর ধনুক চালনা অনুশীলন করে এবং ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোন ব্যক্তি এর দ্বারা আহত হয় তাহলে কি তীর ধনুক চালনাকারী দায়ী হবে, ‘মেস্ রিয়া’কে অস্বীকার করে শুধু কাজের জন্য দায়ী হলে সে ব্যক্তি অবশ্য দায়ী হবে। কিন্তু যেহেতু আঘাত করার মত দোষী মত এখানে অবর্তমান সেহেতু আঘাতকারী এক্ষেত্রে অব্যাহতি পেতে পারে। আবার গণ উৎপাতের ক্ষেত্রে উৎপাত সৃষ্টিকারীর অন্যের অসুবিধা বা ক্ষতি করার মত ‘মেস্‌ রিয়া না থাকলেও শুধু কাজটির জন্য তাকে দায়ী করা হয়। 

স্যার ষ্টিফেন সনের মতে ‘মেন্‌স্ রিয়া’ মতবাদটি বিভ্রান্তিকর এবং বর্তমানে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতবাদটির যখন উদ্ভব হয় তখন ফৌজদারী আইনে বিভিন্ন অপরাধের নাম শুধু উল্লেখ থাকতো। বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধের স্বতন্ত্র সংজ্ঞা এবং এর উপাদান দেয়া থাকে। তাই বর্তমানে এই মতবাদটি অবান্তর মনে হয়।

আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা বা ভূলঃ যে কোন মামলায় দু’টি প্রশ্ন জড়িত থাকে। একটি আইনের প্রশ্ন এবং অপরটি ঘটনার প্রশ্ন। যেমন, একটি খুনের মামলায় খুন কাকে বলে এবং খুনের শাস্তি কি, এগুলি হচ্ছে আইনের প্রশ্ন, কে খুন করেছে এবং কিভাবে খুন করেছে তা হচ্ছে ঘটনা বা তথ্যের প্রশ্ন। আইনের প্রশ্ন নিস্পত্তি হয় আদালতের মাধ্যমে প্রচলিত আইনের দ্বারা এবং ঘটনার প্রশ্ন নিস্পত্তি হয় সাক্ষ্যের দ্বারা। দেশের প্রচলিত আইন প্রত্যেক নাগরিকের জানা কর্তব্য। জাতীয় সংসদে প্রণীত আইন সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হয় এবং অন্যান্য আইন প্রয়োজনবোধে আইনজীবীদের নিকট হতে জানা যায়। কাজেই জনগণ ইচ্ছা করলেই আইনের বিধান সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল আইনগত দায় হতে অব্যাহতি পাবার অজুহাত হতে পারে না, কেন না বলা হয যে Ignorance of law is no excuse অর্থাৎ আইনের অজ্ঞতা অব্যাহতির কারণ হতে পারে না। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যদি কেউ যদি এরূপ যুক্তি প্রদর্শন করে যে, সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান না জেনে সে এরূপ কাজ করেছে তবে তা গ্রহণ করা যায় না। কেননা সকলেই তাহলে এরূপ যুক্তিই প্রদর্শন করে অব্যাহতি পেতে চাইবে। এতে সমাজে অচলাবস্থার হবে।

ব্যতিক্রমঃ আইন বলতে আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, উপ-বিধি, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি সবই বুঝায়। তবে বিদেশী আইন এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই বিদেশী আইনের অজ্ঞতা বা ভুল গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

এছাড়া দণ্ডবিধির ৭৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালতের নির্দেশক্রমে কিংবা আদালতের রায় বা আদেশ বলবৎ থাকাকালে কৃত কোন কার্য অপরাধ বলে গণ্য হবে না যদিও উক্ত আদালতের অনুরূপ রায় বা আদেশ দানকারীর কোন এখতিয়ার না থেকে থাকে। এ কাজটি অবশ্য সম্পাদনকারীর সরল বিশ্বাসে হতে হবে। এখানে আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে এবং এরূপ ভুল ঘটনার ভুল না আইনের ভুল তা স্পষ্টভাবে বলা হয় নি। কোনটা আইনের ভুল এবং কোনটা ঘটনার ভুল সে প্রশ্নটিই একটি আইনের প্রশ্ন। কাজেই আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কিত ভুলটিও আইনের ভুল বলা যায়।