প্রশ্নঃ ‘অপরাধ স্বীকার’ বলতে তুমি কি বোঝ? অপরাধের স্বীকারোক্তি কে লিপিবদ্ধ করতে পারেন? অপরাধের স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার জন্য কি কি আনুষ্ঠানিকতা অবশ্যই পালন করতে হবে?
অপরাধ স্বীকারঃ সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তি বা দোষ স্বীকারের কোন সংজ্ঞা দেয়া হয় নি। সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে যে বিবৃতি দেয় তাকে স্বীকারোক্তি বলে। সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তি বলতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত দোষ স্বীকারমূলক বিবৃতি বুঝায় এবং ম্যাজিস্ট্রেট ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির নিকট এরূপ বিবৃতি দিলে তা বিচার বহির্ভূত স্বীকারোক্তি বুঝায়।
তবে শুধুমাত্র অপরাধটি স্বীকার করলে চলবে না অপরাধের সহিত সংযোগও স্বীকার করতে হবে। স্বীকারোক্তি হচ্ছে ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় এবং সাক্ষ্য আইনের ২৪ হতে ২৬ ধারায় এ সম্পর্কে বিধি বিধান রয়েছে।
অপরাধের স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকরনঃ বিচার-বিভাগীয় স্বীকারোক্তি একমাত্র আদালত বা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট করা হয় এবং ফৌজদারী কার্য বিধির ১৬৪ ধারা মতে তিনি তা স্বয়ং লিপিবদ্ধ করেন। তবে বিচার বহির্ভূত স্বীকরোক্তি পুলিশ বা অপর কোন ব্যক্তির নিকট করা যায় যা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা রেকর্ড করা হয়৷
স্বীকারোক্তি ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৬ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ ও স্বাক্ষরিত হতে হবে। অত:পর এটা তদন্তকারী বা বিচারকার্য পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হবে।
স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকারোক্তিকারীকে বুঝিয়ে দিবেন যে, তিনি স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য নয় এবং তিনি যদি তা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে তা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সাধারনত ম্যাজিস্ট্রেটের বসার কক্ষে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাজির করা হলে তাকে প্রশ্ন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিশ্চিত হবেন কোথায় এবং কখন কথিত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। দোষ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার জন্য নির্ধারিত ফরমে উল্লিখিত ব্যাখ্যাসমূহ ধীরে ধীরে তাকে বুঝিয়ে দিবেন এবং বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩ ঘণ্টা সময় দিবেন। এ সময় কোন পুলিশ অফিসার বা অন্য কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে তাকে দেয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে এবং তার আচরন লক্ষ্য করে নিশ্চিত না হন যে, সে স্বেচ্ছায় সব কিছু বলতে চাচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত তার বক্তব্য রেকর্ড করবেন না। পুলিশের খারাপ আচরন সম্পর্কে অভিযোগ আসলে তা আমলে নিতে হবে এবং শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন থাকলে ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে হবে।
ম্যজিস্ট্রেট ধীর স্থিরভাবে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার মাধ্যমে নিশ্চিত হবেন যে, আসামী স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করছেঃ
(ক) সে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আছে এবং কোন পুলিশ অফিসার নেই। (খ) সে স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য নয় । (গ) যদি সে স্বীকারোক্তি চায় তবে তা সাক্ষ্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। যে অপরাধ স্বীকার করবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি সম্পর্কেও তাকে ধারণা দিতে হবে। (ঘ) সে কারো ভয়ে বা প্ররোচনায় স্বীকারোক্তি করছে না। (ঙ) সে কারো প্রলোভনে অসত্য কিছু বলবে না।
স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করে তার নিচে ম্যাজিস্ট্রেট একটি স্মারক মন্তব্য লিপিবদ্ধ করবেনঃ “আমি আসামি করিমকে বুঝিয়ে দিয়েছি যে, তিনি স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য নন এবং যদি তিনি তা করেন তাহলে উক্ত স্বীকারোক্তি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, এ স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় করা হয়েছে। ইহা আমার উপস্থিতিতে ও শ্রুতিগোচরে গ্রহণ করা হয়েছে, এবং স্বীকারোক্তিকারীদের ইহা পড়ে শুনানো হয়েছে এবং ইহা নির্ভূল বলে তিনি স্বীকার করেছেন এবং তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন এতে তার পূর্ণাঙ্গ ও সত্য বিবরণ রয়েছে।
স্বাক্ষর………………
ম্যাজিস্ট্রেট ”
Leave a comment