অথবা, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ আধুনিক সভ্যতার এ যুগে বিশ্বের মানুষ পরস্পর কাছাকাছি হয়ে আসছে। পৃথিবীর এক কোণের কোন ঘটনা অল্প সময়ের মধ্যে অন্যত্র পৌছে যাচ্ছে এবং তার প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের চিন্তা চেতনা আজ শুধু নিজ রাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নেই। এভাবে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকই আজ বিশ্ব নাগরিকে পরিণত হয়েছে।
জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সম্পর্কঃ নিম্নে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-
উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্যঃ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো আলােচনা করা হলাে-
(১) শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেঃ আন্তর্জাতিকতাবাদ সকল প্রকার বিবাদের মীমাংসা করে জাতিতে জাতিতে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। জাতীয়তাবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠার দ্বারা জাতীয় সমৃদ্ধি ও গৌরব বৃদ্ধির প্রয়াসী। কাজেই উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
(২) স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার সুযােগ বিদ্যমানঃ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সকল রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযােগিতার ওপর গুরুত্ব দেয়। অতএব আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতীয়তাবাদের বিরােধী শক্তি নয়।
(৩) আন্তর্জাতিকতাবাদ স্বদেশপ্রেমকে বিশ্বপ্রেমে পরিণত করেঃ আন্তর্জাতিকতাবাদ এক জাতিকে অন্য জাতির সাথে সম্পর্ক ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার সুযােগ দিয়েছে। কাজেই জাতীয় প্রেম আজ বিশ্বপ্রেমে রূপ নিয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, উভয়ের মধ্যে কোনাে দ্বন্দ্ব নেই।
উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্যঃ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো আলােচনা করা হলাে-
(১) জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের আকার লাভ করেঃ অনেক সময় দেখা যায়, রাষ্ট্র সামাজ্যবাদী হয়ে ওঠে ও রাষ্ট্র বিভিন্ন অজুহাতে অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। আস্তে আস্তে সেই রাষ্ট্রে তাদের কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী আকাক্ষা চরিতার্থ করে। এটা আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিপন্থী।
(২) জাতীয়তাবাদ জাতিতে জাতিতে অনৈক্যের সৃষ্টি করেঃ জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় একটি জাতি নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তােলে এবং অন্য জাতির প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পােষণ করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ কোনােভাবেই আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিপন্থী হতে পারে। তবে সংকীর্ণ বা চরম জাতীয়তাবাদ বিশ্বশান্তির পক্ষে হুমকিস্বরূপ। এটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভেদ ও অশাতি সৃষ্টি করে। তাই জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ কোনােটিকেই পরিহার করার উপায় নেই।
Leave a comment