অথবা, রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান তুলে ধর।
ভূমিকাঃ বিশ্বের গ্রাচীন সভ্যতাসমুহের মধ্যে গ্রিক সভ্যতা শীর্ষস্থানীয়। এই সভ্যতায় যেসব মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে তাদের গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা, সাম্য, গণতন্ত্র, নিয়মতান্ত্রিকতা, আইনের সার্বভৌমত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে গ্রিকরা যেসব তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে গেছেন সেগুলাে আজো আমাদের জীবনে সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদানঃ নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে-
(১) ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের একাত্মতাঃ ব্যক্তির স্বার্থকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সাথে জড়িত করে গ্রিক দার্শনিকগণ ব্যক্তি অপেক্ষা রাষ্ট্রকেই দিয়েছেন অগ্রাধিকার। ব্যক্তি বনাম রাষ্ট্র বলে কোনাে কথা তারা কল্পনাও করতে পারতেন না। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পােষণ করাকে গ্রিকগণ এক উন্নততর সত্তার প্রতি আনুগত্য পােষণ বলে মনে করত।
(২) আইনের প্রাধান্যঃ গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় আইন অনেকটা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে পড়ে এবং তাতে মানবিক উপাদানের গুরুত্ব বেড়ে যায়। এতদসত্ত্বেও আইন মূলত যুক্তিসঙ্গতই থেকে যায়। সরকারকে আইনের অধীন করা হয় এবং নাগরিকগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
(৩) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাঃ রাজনৈতিক সহনশীলতা ও গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে বােঝায় মুক্তচিন্তা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার। গ্রিক-পরবর্তী যুগে বিশেষ করে আধুনিক যুগে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়েছে। এই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে জড়িত রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রশ্নটি যা আবার গ্রিক ঐতিহ্য থেকে উৎসারিত হয়েছে।
(৪) স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রঃ গ্রিকদের মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতার স্পৃহা পরিলক্ষিত হয়। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশ প্রশংসনীয়। রাষ্ট্রের শাসনের ব্যাপারে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ অবশ্যম্ভাবী হওয়ার ফলে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৫) রাষ্ট্রীয় প্রয়ােজনের স্বীকৃতিঃ গ্রিকদের মতে, প্রকৃতির সাথে তাল রেখে এবং সঠিক প্রজ্ঞার ওপর নির্মিত করে মানুষের জীবনযাপন করা উচিত। প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের উন্নতিসাধন করা মানুষের অন্যতম কর্তব্য। মানুষ যেহেতু প্রজ্ঞা ও বিবেকের অধিকারী কাজেই তাদের অবশ্যই উন্নত জীবনযাপন করতে হবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলাের দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাই যে, আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তা প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার নিকট অনেকাংশে ঋণী। কেননা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় যা কিছু আমরা প্রত্যক্ষ করি তা অনেকাংশে গ্রিক চিন্তাধারাই ফলস্বরূপ। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় যেসব মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে।
Leave a comment