প্রশ্নঃ মধ্যযুগ ছিল মূলত অরাজনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীল’- সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, মধ্যযুগ ছিল মূলত অরাজনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীল’ ব্যখ্যা কর।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগের শুভ সূচনা ঠিক কখন থেকে তা নিশ্চিতভাবে বলা শক্ত। এ সম্পর্কে দু’ধরনের অভিমত প্রচলিত রয়েছে। এক শ্রেণীর মনীষীগণ মনে করেন যে, খৃষ্টান গির্জার পতনের সময় থেকেই মধ্যযুগের সূচনা। পক্ষান্তরে অপর শ্রেণীর মনীষীগণ মনে করেন যে, খৃষ্টান ধর্মের আবির্ভাবের ফলে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে কিছু কিছু নতুন ভাবধারার সূত্রপাত ঘটে তা মধ্যযুগের আবির্ভাবকে সুগম করে।

মধ্যযুগ অরাজনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীলঃ মূলত মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীল। নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে আলােচনার মাধ্যমে এই বিষয় সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যেতে পারে।

(১) অরাজনৈতিকঃ অসৃজনশীল ও মধ্যযুগের প্রথম অংশে রাষ্ট্রচিন্তা কেবলমাত্র ধর্মীয় চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকি এ যুগের দ্বিতীয়াধেও রাষ্ট্রচিন্তা সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় প্রভাবের বাইরে ছিল না। পার্থিব জগৎ ও রাজনৈতিক বিষয়াদির ব্যাপারে মধ্যযুগ কখনাে মনােনিবেশ করেনি। দর্শন বা রাষ্ট্রচিন্তা সংক্রান্ত বিষয়াদি এ যুগের চিন্তাধারার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

(২) প্রচলিত মতবাদে বিশ্বাসীঃ মধ্যযুগে সাধারণত প্রচলিত ধ্যান-ধারণার অনুসরণ লক্ষ্য করা যায়। এই যুগে জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে গির্জার যাজকদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তারা প্রচলিত ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান বা পরীক্ষণের ওপর তাদের তেমন বিশ্বাস ছিল না। যাজকগণ আরােহ পদ্ধতির পরিবর্তে অবরােহ পদ্ধতিতে তাদের যুক্তি বিশ্লেষণ করতেন।

(৩) আধ্যাত্মিকঃ পার্থিব সংঘ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা মূলত আধ্যাত্মিক ও পার্থিব সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক চিন্তাজগতে মধ্যযুগ ছিল সভ্যতা জীর্ণ করা যুগ। এ যুগে বিজ্ঞানের আশিস তেমনটা দেখা যায় না। অনেক চিন্তাবিদ বলেছেন, মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রও ছিল না আর মুক্তচিন্তাও ছিল না। এ যুগে মূলত ইহকাল ও পার্থিব জগত নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত মধ্যযুগ ছিল অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীল।

(৪) সামন্তবাদী ধারণাঃ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় সামন্তবাদী ধারণার বিকাশ ঘটে। সমগ্র মধ্যযুগে বিশ্বব্যাপী সামন্তপ্রথা প্রচলিত ছিল। এ প্রথার মূল বৈশিষ্ট্য হলাে ভূমিকেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থা, ভূমিকেন্দ্রিক অধিকার, সুযােগ-সুবিধা ও পর্যায়ক্রমিক ক্ষমতার বিন্যাস প্রভৃতি।

(৫) অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন জীবনঃ বস্তুত রােম সাম্রাজ্যের পতনের ফলে পশ্চিম ইউরােপের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে যে বিরাট শূন্যতার সৃষ্ট হয় তা টিউটন বর্বরদের আদিম প্রাকৃতির গােত্রীয় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দ্বারা তা পূরণ করা একান্ত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অসৃজনশীল। এ যুগে রাষ্ট্রনীতি ছিল ন্যায়শাস্ত্র ও ধর্মতত্ত্বের গহ্বরে বন্দী। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্র ছিল না আর মুক্তচিন্তাও ছিল না।