প্রশ্নঃ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলাে লিখ।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগের সূত্রপাত ঠিক কখন থেকে তা নিশ্চিত করে বলা শক্ত। এ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, মধ্যযুগের রাষ্ট্রতত্ত্ব এক উষর মরুভূমির মতাে এবং তা প্রায়ই সম্রাট ও পােপের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ধূলােঝড়ে অশান্ত। সেখানে রয়েছে প্রাণহীন আলােচনার বিস্তীর্ণ এক অরণ্য আর রয়েছে মরীচিকার মতাে এক ধরনের অবাস্তবতা।

মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ মধ্যযুগ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে একটি বিশেষ সময় বলে বিবেচিত। সামগ্রিকভাবে মধ্যযুগের ওপর দৃষ্টিপাত করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

(১) ইসলাম ধর্মের প্রাধান্যঃ মধ্যযুগ অন্ধকার যুগ হলেও এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের অনেক স্থানেই পবিত্র ইসলাম ধর্মের বাণী পৌঁছে এবং দলে দলে লােক দীক্ষা গ্রহণ করে। ইসলাম ধর্ম এ যুগে একটি বিশেষ স্থান দখল করেছিল।

(২) পােপের কর্তৃত্ব বৃদ্ধিঃ পােপের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি ছিল মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি বিশেষ দিক। মধ্যযুগে পােপের কথাই ছিল আইন বিশেষ। পােপের প্রাধান্য যেন সমগ্র মধ্যযুগকে গ্রাস করে রেখেছিল। আধ্যাত্মিক ক্ষমতার নিকট পােপের পার্থিব ক্ষমতার অধীনতা পােপের চিন্তাধারায় লক্ষ্য করা যায়।

(৩) স্টোয়িকাদের প্রভাবঃ স্টোয়িকবাদের প্রভাব মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। স্টোয়িকবাদ মধ্যযুগের সমগ্র রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করত। মধ্যযুগে স্টোয়িকবাদের ন্যায় রাজনৈতিক দর্শন ও প্রাকৃতিক আইন ঈশ্বরের আইনের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

(৪) যাজকদের ভূমিকাঃ মধ্যযুগে জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যাজকদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় প্রশ্নসমূহ প্রাধান্য লাভ করে। যাজকগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতামত পেশ করতেন। তাদের অনুসিদ্ধান্তের উৎস ছিল ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি।

(৫) অবরােহ পদ্ধতি অনুসরণঃ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় অবরােহ পদ্ধতি অনুসরণের বিধান লক্ষ্য করা যায়। যাজকদল আরােহ পদ্ধতির পরিবর্তে অবরােহ পদ্ধতিতে তাদের যুক্তি বিশ্লেষণ করতেন। পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান বা পরীক্ষণের তারা বিশেষ ধার ধারতেন না।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উল্লেখিত বিষয়ের মধ্যে মধ্যযুগের আসল পরিচয় নিহিত। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা আধুনিক বিচারে ছিল প্রতিক্রিয়াশীল। কিন্তু তা বলে কোনােক্রমেই গুরুত্বহীন ছিল না। সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায় যে, উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনার মাধ্যমেই মধ্যযুগের আলােচনা ফলপ্রসূ হয়ে ওঠবে।