প্রশ্নঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধর।

ভূমিকাঃ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। সমাজের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানই হচ্ছে প্রতিটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাজ। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় সরকারের কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুক্ত প্রতিযােগিতা বিদ্যমান থাকে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Features of Capitalistic Economic System): ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ নীচে তুলে ধরা হলো-

১. সম্পদের ব্যক্তি মালিকানাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণ ব্যক্তি মালিকানার উপর ন্যস্ত থাকে।

২. অবাধ প্রতিযােগিতাঃ সরকারের কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুক্ত প্রতিযােগিতা বিদ্যমান থাকে।

৩. ভােক্তার স্বাধীনতাঃ এখানে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিদ্যমান। কি, কখন এবং কিভাবে উৎপাদন করা হবে সম্পদের মালিক সে সিদ্ধান্ত নেয়।

৪. দাম ব্যবস্থাঃ চাহিদা ও যােগান ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবার দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করে। চাহিদার স্থিত অবস্থায় যােগান বাড়লে দাম কমে। আবার যােগানের স্থিত অবস্থায় চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে।

৫. মুনাফা অর্জনঃ উৎপাদন থেকে প্রাপ্ত আয় ও উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধানকে মুনাফা বলে। উৎপাদক সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ উৎপাদন করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে।

৬. সমাজের শ্রেণিবিভাগঃ ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। তুলনামূলকভাবে উচ্চবিত্তের সম্পদের মালিকানা সবচেয়ে বেশি, নিম্নবিত্তের সবচেয়ে কম এবং মধ্যবিত্ত মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। এই শ্রেণিবিভাগ থেকে সামাজিক বৈষম্যের চিত্রও পাওয়া যায়।

৭. অসম বণ্টনঃ ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বন্টনে অসমতা বা বৈষম্য দেখা যায়। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা থাকায় সম্পদের বন্টন অসম হয়। এক্ষেত্রে যার সম্পদ যত বেশি তার আয় তত বেশি।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যান্য বৈশিষ্টঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন ও দাম প্রক্রিয়া এবং উৎপাদনের উপায়সমূহ সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন। এখানে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে। এখানে ভােক্তা বা ফার্মের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা থাকে। এ কারণে এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনে মুনাফা বেশি, ফার্মসমূহ সেই পণ্য উৎপাদন করে। এভাবে কি প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। আবার যে প্রযুক্তিতে ব্যয় কম হবে বা উৎপাদন লাভজনক হবে সে পদ্ধতিতেই উৎপাদন হবে। এভাবে কি প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। আবার যে প্রযুক্তিতে ব্যয় কম হবে বা উৎপাদন লাভজনক হবে সে পদ্ধতিতেই উৎপাদন হবে। যা ‘কিভাবে প্রশ্নটির সমাধান করে। অন্যদিকে ভােক্তাদের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে সামাজিক উৎপাদন তাদের মধ্যে বণ্টিত হয়। এভাবে ‘কার জন্য প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়।

পরিশেষঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দাম প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। যা পূর্বেই আলােচনা করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথের ভাষ্য অনুযায়ী ‘অদৃশ্য হাত’ (invisible hand) দ্বারা বাজার ব্যবস্থা পরিচালিত। এখানে চাহিদা যােগানের চেয়ে বেশি হলে দাম বৃদ্ধি পাবে। ফলে চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পাবে। আবার চাহিদার চেয়ে যােগান বেশি হলে দাম হ্রাস পাবে। এতে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দামের ওঠানামাকে ‘অদৃশ্য’ হাত দ্বারা আখ্যায়িত করা হয়েছে।