অথবা, প্রাকৃতিক রাজ্য সম্পর্কে হসের ধারনা সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ ইংল্যান্ডের বিশিষ্ট দার্শনিক টমাস হবস তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লেভিয়াথানে’ সামাজিক চুক্তি মতবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তার মতে, রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করত। মানব প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে হস তার প্রকৃতির রাজ্যের চিত্র অংকন করেছেন।
হবসের প্রাকৃতিক রাজ্য সম্পর্কে আলোচনাঃ হবস বলেন যে, প্রকৃতির রাজ্যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না। কাজেই নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাবে মানুষ সেখানে অসভ্য এবং বর্বর জীবনযাপন করত। জীবনের নিশ্চয়তা বা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কোনো ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। প্রত্যক মানুষ যেহেতু স্বার্থপর ও লোভী সেহেতু প্রত্যেকই আপন আপন স্বার্থ ও লোভ চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত ছিল। হবসের মতে সকল মানুষই প্রায় সমান। কাজেই প্রকৃতির রাজ্যে কেউ নিজেকে অন্য কারো অপেক্ষা ছোট ভাবত না। সবকিছু সমানভাবে পাবার আকাক্ষা প্রত্যেকের মনে জাগত। কিন্তু একই বস্তু দু’জন ব্যক্তি একই সঙ্গে পাবার আকাঙ্ক্ষা করলে তাদের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠত। সংঘাতে যে জয়ী হত সেও নিরাপদ হতে পারত না। একে অপরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করত। নিরাপত্তা ও খ্যাতির আশায় মানুষে মানুষে অবিরাম প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকত। ফলে সেখানে মানুষের জীবন ছিল নিঃসঙ্গ, হতভাগ্য, কদর্য, নিষ্ঠুর ও সংক্ষিপ্ত। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ সর্বক্ষণ দ্বন্দ্ব, কলহ, খুন-খারাবি ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিল। একরকম ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থা সেখানে সব সময়ই বিরাজ করত। এরূপ ভয়াবহ অবস্থায় মানুষের বুদ্ধি-বিবেক এবং যুক্তিকে কাজে লাগাবার কোন অবকাশই সেখানে ছিল না। কাজেই ন্যায়-অন্যায় বোধ মানুষের মধ্যে তখন জাগ্রত হয়নি ও শুভবুদ্ধির উদ্রেকও তাদের মধ্যে ঘটেনি। হবসের কথায়, ‘যেখানে সাধারণ ক্ষমতা নেই, সেখানে আইন নেই। যেখানে আইন নেই, সেখানে বিচারও নেই।’ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধীন সভ্য সমাজেই একমাত্র ন্যায়-অন্যায় বোধ থাকতে পারে।
পরিশেষঃ অতএব, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, প্রকৃতির রাজ্যের ভয়াবহ অবস্থা নিরসনের জন্য হস চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে মহাশক্তিশালী শাসকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
Leave a comment