১.১১ অন্যান্য বিষয়ের সাথে হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক

Relations Between Accounting And Other Subjects

প্রশ্নঃ অন্যান্য বিষয়ের সাথে হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

ভূমিকাঃ প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যে হিসাববিজ্ঞান অনুসরণ করি তা প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে অনেক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। উৎপত্তিগতভাবে হিসাববিজ্ঞান গণিতের সাথে সম্পৃক্ত। পরবর্তীতে এটি হিসাব ব্যবস্থার প্রচলন এবং এ নিয়ে গবেষণা করতে করতে অনেক বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এ থেকে অনেক নতুন ধারণা উৎপত্তি হয়েছে এবং হচ্ছে। নিচে হিসাববিজ্ঞানের সাথে অন্যান্য বিষয়সমুহের সম্পৃক্ততা আলােচনা করা হলাে-

গণিতশাস্ত্রঃ লুকা প্যাসিওলি গণিত নিয়ে পর্যালােচনা করতে গিয়ে হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। গণিতশাস্ত্র সাধারণত কোনাে কর্মকাণ্ডের সংখ্যাভিত্তিক প্রকাশ। হিসাববিজ্ঞানেও ব্যবসায়ের আর্থিক কার্যাবলিসমূহ সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ বিবেচনায় হিসাববিজ্ঞানের সাথে গণিতের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে।

পরিসংখ্যানঃ হিসাববিজ্ঞানের ন্যায় পরিসংখ্যান বিভিন্ন ঘটনার ওপর তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবদ্ধকরণ, বিশ্লেষণ ও প্রয়ােজনীয় উপাত্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করে যাতে করে উক্ত প্রতিষ্ঠান তার প্রয়ােজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানঃ রাষ্ট্রের যাবতীয় আর্থিক কাজ যেমন: সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় হিসাব-নিকাশ ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য হিসাববিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ সঠিক হিসাব ব্যবস্থা চালু না থাকলে রাষ্ট্রের কাঠামাে ভেঙে পড়বে।

অর্থনীতিঃ হিসাববিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক আছে। হিসাববিজ্ঞানের ব্যবহারকারী যেমন: ক্রেতা ও বিক্রেতা বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হিসাব তথ্য সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে। পক্ষান্তরে অর্থনীতি ঐসব ক্রেতা, বিক্রেতা ও অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ এবং সেই সাথে তাদের ব্যয়ের ধরন নিয়ে আলােচনা করে থাকে। অর্থাৎ অর্থনীতি ক্রেতা ও বিক্রেতার আচরণ সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করে।

ব্যবস্থাপনাঃ বর্তমান ব্যবসায় জগতে ব্যবস্থাপনা বিষয়টি হিসাববিজ্ঞানের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ বিভিন্ন দায়িত্ব কেন্দ্রের আর্থিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। মূলত হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক তথ্য পাওয়া যায়।

আইনশাস্ত্রঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেমন: এক মালিকানা ব্যবসায়, অংশীদারি ব্যবসায়, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আইন যেমন: অংশীদারি আইন, কোম্পানি আইন ইত্যাদি দ্বারা পরিচালিত হয়। আইন অনুযায়ী তাদের হিসাব-নিকাশের ধরনও আলাদা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার ও হিসাববিজ্ঞানঃ দিন দিন হিসাববিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের ফলে হিসাবরক্ষকের হিসাব-নিকাশ কার্যক্রম জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আর এ জটিল কাজগুলাে সমাধান করা হচ্ছে কম্পিউটারে ব্যবহৃত হিসাববিজ্ঞান সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

সামাজিক বিজ্ঞানঃ প্রতিষ্ঠানের পণ্যসামগ্রী উৎপাদনে শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। প্রায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়িত্ববােধ থেকে ক্ষতির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তা ব্যয় করে থাকে। তাই হিসাববিজ্ঞান এখন সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অংশ।

পরিবেশ বিজ্ঞানঃ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দূষণ রােধের জন্য সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন, পণ্য তৈরিতে স্বাস্থ্যসম্মত কাঁচামাল ব্যবহার, যথাসম্ভব কম বিদ্যুৎ খরচ ইত্যাদি খাতে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি এর হিসাব রাখতে হয়।

ব্যবসায় অর্থসংস্থানঃ ব্যবসায়ের প্রয়ােজনীয় অর্থসংস্থানের জন্য এর মূলধন কাঠামাে নির্ধারণ করা এবং কোন উৎস থেকে অর্থসংস্থান করলে ব্যবসায়ের মুনাফা সর্বাধিক হবে তা যাচাই করা আবশ্যক। ফলে এ বিষয় দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলাে ছাড়াও আরােও অন্যান্য বিষয় যেমন: প্রকৌশল বিদ্যা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ের সাথেও হিসাববিজ্ঞানের সম্পৃকততা রয়েছে।