প্রশ্নঃ মানব সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান আলােচনা কর।

অথবা, প্ৰাৰ্চীন সভ্যতার ইতিহাসে মিশরীয়দের কৃতিত্ব মূল্যায়ণ কর।

অথবা, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে প্রাচীন মিশরীয়দের অবদান আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানবজাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এত বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মতাে আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃত হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য সাধারণ গুরুত্বের দাবিদার। তারা শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

মিশরীয় সভ্যতার অবদানঃ মিশরীয় সভ্যতা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য অবদান রেখেছে। নিম্নে মিশরীয় সভ্যতার অবদানসমূহ তুলে ধরা হলাে-

(১) মিশরীয় লিখন পদ্ধতিঃ বিশ্বসভ্যতায় মিশরীয়রাই সর্বপ্রথম এক ধরনের লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করে ইহা চিত্রলিখন রীতি বা Hieroglyphic নামে পরিচিত। গ্রিক ভাষায় এর অর্থ পবিত্র লিখন অথবা খােদাই কাজ। এ পদ্ধতিতে চব্বিশটি চিহ্ন ছিল এবং প্রতিটি চিহ্ন একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করতাে। প্রতিটি চিহ্ন পাশাপাশি খােদিত করে একটি শব্দ ও বাক্য প্রকাশ করা হতাে।

(২) সাহিত্য চর্চাঃ প্রাচীন মিশরীয়গণ সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করে গেছেন। তাদের সাহিত্য চর্চা ছিল দর্শন ও ধর্মভিত্তিক। ‘পিরামিড টেক্সটসম্ব’, ‘মেমফিস ড্রামাম্ব, ‘রয়্যাল সান হিমম্ব’, ‘মৃতদের পুস্তকম্ব’, ‘আতেনের হিম’ (ধর্মসঙ্গীত) প্রভৃতি ছাড়াও তারা ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যের চর্চা করতাে। কাব্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘পয়েমস অব পেনতুরম্ব’ এবং প্রবচন সাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘প্রিসেক্ট অব টাজ্জটেপম্ব’ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

(৩) বিজ্ঞানচর্চাঃ বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় প্রাচীন মিশরীয়দের মৌলিক অবদান লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে অংক ও জ্যোতির্বিদ্যায় তারাই সর্বপ্রথম অংক ও জ্যামিতির উদ্ভাবন এবং যােগ, বিয়ােগ, ভাগ ও দশমিক প্রথার প্রবর্তন করে।

(৪) ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানঃ মিশরীয় সভ্যতায় সমগ্র জীবন ব্যবস্থায় ধর্মীয় প্রভাব বিশেষ লক্ষণীয়। মিশরীয়দের ধর্মীয় চিন্তায় টোটেম বিশ্বাস এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। সে কারণে ধর্ম ছিল বৈচিত্র্যময়। আদিম বহু ঈশ্বরবাদ থেকে একেশ্বরবাদ ও মিশরের ধর্মচিন্তায় লক্ষ্য করা যায়। তারা পরজন্মে বিশ্বাস করতাে। সেজন্য মৃত ব্যক্তির প্রয়ােজনীয় জিনিসগুলাে তার সঙ্গে দিয়ে দেয়া হতাে। তাদের ধারণা ছিল মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে এগুলাে কাজে লাগবে বা প্রয়ােজন হবে।

(৫) মিশরীয় স্থাপত্যঃ মিশরীয়গণ ছিলেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম হিসেবে পরিগণিত তাদের নির্মিত পিরামিডগুলাে আজো দর্শকদের বিস্ময়ে বিমুগ্ধ করে। মিশরের অক্ষত মমিগুলােও আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীদের প্রতি বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জস্বরূপ। স্থাপত্য শিল্পের কলাকৌশল হিসেবে স্তম্ভ বেষ্টিত প্রাসাদ, বহুতল বিশিষ্ট অট্টালিকা সবকিছুই মিশরে বিকাশ লাভ করে।

(৬) ভাস্কর্যঃ ভাস্কর্য শিল্পেও প্রাচীন মিশরীয়গণ তাদের মৌলিকতা ও অপূর্ব বৈশিষ্ট্য রেখে গিয়েছেন। মাহাত্ম্য ও বিক্রম প্রকাশের জন্য ফেরাউনদের প্রতিকৃতি যেমন আবু সিমবেলে তৃতীয় রামাসিসের মূর্তি, বৃহদাকারে খােদিত হত। কখনাে কখনাে পঁচাত্তর থেকে নব্বই ফুট দীর্ঘ হতাে এই সমস্ত ভাস্কর্য নিদর্শন।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন সভ্যতার অগ্রগতিতে মিশরীয় সভ্যতা যে বিস্ময়কর অবদান রেখেছে তা অভূতপূর্ব। তারা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই মৌলিক অবদান রেখেছে। প্রাচীন মিশরীয়রাই স্থাপত্য শিল্পকলার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। মূলত মিশরীয়রাই ছিল প্রাচীন সভ্যতার স্তম্ভ।