প্রশ্নঃ সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের পরিধি আলােচনা কর।

অথবা, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের পরিধি আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ নৃবিজ্ঞানকে প্রধানত দু’টি শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে- দৈহিক নৃবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক নবিজ্ঞান। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলাে সামাজিক মানুষের সংস্কৃতি। মানুষের আচার-আচরণ, রীতি নীতি, চাল-চলন, প্রথা-বিশ্বাস, ভাষা-সাহিত্য প্রভৃতিকে ঘিরেই সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান গড়ে উঠেছে।

সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের পরিধিঃ সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের পরিধি তার চারটি শাখার মধ্যে বিধৃত হয়েছে। নিম্নে এগুলি আলােচনা করা হলাে-

(১) মানব জাতির বিবরণ (Ethnography): কোন জনগােষ্ঠীর জীবন প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত লিখিত বর্ণনাকে এথনােগ্রাফি বলা হয়। এথনােগ্রাফি কোন দুর্বোধ্য তত্ত্ব নয়, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নয়, নয় বিভিন্ন সমাজের তুলনামূলক নিখুঁত পর্যালােচনা। এটা কোন ইতিহাস কিংবা ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণও নয়।

(২) প্রত্নতত্ত্ব (Archaeology): প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ ও তার সমাজের বর্ণনা। যে সমস্ত অতীত সমাজের মানুষের কোন লিখিত ভাষা নেই, তাদের সমাজ সম্পর্কে জানার জন্য প্রত্নতত্ত্ববিদকে তার বস্তুগত সংস্কৃতি তথা, তীর-ধনুক, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, তৈজসপত্র, চিত্রকলা, ঘর-বাড়ি, প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষের সাহায্য নিতে হয়।

(৩) জাতিতত্ত্ব (Ethnology): এথনােলােজি বা জাতিতত্ত্ব হচ্ছে কোন মানব সমাজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ বা গবেষণা। প্রত্নতত্ত্বের যেখানে শুরু জাতিতত্ত্বেরও সেখানে শুরু। মানুষের গােটা জীবন প্রণালীর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জাতিতত্ত্ব তুলনামূলক সমীক্ষা চালায়। আবার সমাজ ও সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল হওয়ায় এটা সাংস্কৃতিক ইতিহাসও পর্যালােচনা করে।

(৪) ভাষাতত্ত্ব (Linguistics): ভাষাতত্ত্ব আদিম ও আধুনিক মানুষের ভাষা বিশ্লেষণ করে। ভাষাতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন সমাজের লিখিত ও মৌখিক ভাষা এবং ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ ও কাঠামাে সম্পর্কে গবেষণা করেন।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের জীবনের মতই সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। আধুনিককালে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতায় আধুনিক সমাজের মানুষের সংস্কৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করার ফলে এর পরিধি আরাে বিস্তৃত হয়েছে।