প্রশ্নঃ কিশাের আদালত কী? কিশাের আদালতের গঠন আলােচনা কর।

অথবা, কিশাের আদালত কী? কিশাের আদালতের গঠন সংক্ষেপে লিখ।

ভূমিকাঃ যারা অপরাধী বিশেষ করে কিশাের অপরাধী তাদেরকে অপরাধ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা দানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সংশােধন করা হয়ে থাকে। কিশাের আদালত এমনই এক সংশােধনমূলক প্রতিষ্ঠান যেখানে কিশাের অপরাধীর চারিত্রিক সংশােধন করে তার প্রয়ােজনীয় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

কিশাের আদালতঃ কিশাের আদালত হচ্ছে কিশাের অপরাধীদের জন্য স্থাপিত এক বিশেষ ধরনের আদালত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশাের অপরাধের কারণ নির্ধারণ এবং কতিপয় প্রাতিষ্ঠানিক সুযােগ-সুবিধার মাধ্যমে অপরাধীর চারিত্রিক সংশােধনের সুযােগ প্রদান। এর উদ্দেশ্য সামাজিক কল্যাণ। কেননা, অপরাধী কিশােরের চারিত্রিক সংশােধন সম্ভব হলে ভবিষ্যতে সমাজে বয়স্ক অপরাধীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে আদালত তার নিজস্ব ব্যবস্থায় অপরাধীর অপরাধ এবং তার কারণ পর্যালােচনা করে এবং অপরাধীকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

কিশাের আদালতের গঠন প্রণালীঃ কিশাের আদালতে অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনাে আইনজীবীর প্রয়ােজন নেই। আবার তাকে অপরাধী চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করার জন্য কোনাে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কোনাে ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে আদালতে তার নিজস্ব ব্যবস্থায় অপরাধীর অপরাধ পর্যালােচনা করে এবং অপরাধীকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিশাের আদালতে অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে অপরাধীর আর্থ-সামাজিক পরিবেশ তথা তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদন বা রিপাের্ট সংগ্রহ করা হয়। এ কাজটিতে যারা সহযােগিতা করেন তারা হচ্ছেন আদালত কর্তৃক নির্ধারিত প্রবেশন অফিসার। কিশাের আদালত প্রবেশন অফিসারের রিপাের্ট অনুযায়ী অত্যন্ত ঘরােয়া পরিবেশে শুধুমাত্র প্রয়ােজনীয় সাক্ষী, অপরাধীর অভিভাবক শিক্ষক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে অপরাধীর শুনানী গ্রহণ করে এবং তাকে তার ভুল বােঝার সুযােগ দিয়ে চরিত্র সংশােধনের উদ্দেশ্যে প্রয়ােজনীয় উপদেশ, নির্দেশ দান করে কিংবা কোনাে সংশােধমূলক প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়, আদালত তাকে শাস্তি প্রদান না করে তাকে কিশাের অপরাধী, অবহেলিত কিশাের পরনির্ভস স্পর্শকাতর কিশাের ইত্যাদি হিসাবে চিহ্নিত করে তার পুনর্বাসন কিংবা চারিত্রিক উন্নতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, কিশাের আদালত কিশাের অপরাধীদের মঙ্গলের জন্য এবং ভবিষ্যৎ সমাজের অপরাধমত করার জন্য যেসকল দায়িত্ব পালন করে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার কারণ এ আদালত অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের চেয়ে সে যাতে সংশােধিত হয়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে তার প্রয়ােজনীয় দিক নির্দেশনা দান করে। বাংলাদেশে ঢাকা বিভাগের টঙ্গীতে শিশু-কিশাের সংশােধনাগার আছে। সেখানে কিশাের অপরাধীদের সংশােধনে যদি উপরােক্ত বিষয়গুলাে যদি যথাযথভাবে কার্যকর করা যায় তবে এ দেশের ক্রমবর্ধমান কিশাের অপরাধ হ্রাস করে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব ।