হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১
[১৮৮১ সনের ২৬নং আইন]
[৯ ডিসেম্বর, ১৮৮১]
অঙ্গীকারপত্র (Promissory note), বিনিময়পত্র (Bills of Exchange) এবং চেক (Cheques)-এর সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সংশােধন সম্পর্কিত আইন।
প্রস্তাবনা (Preamble): যেহেতু অঙ্গীকারপত্র, বিনিময়পত্র ও চেক সম্পর্কিত আইনের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সংশােধন করা সমীচীন ও প্রয়ােজন, সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হলঃ
অধ্যায়-১
প্রারম্ভিক
ধারা-১ঃ সংক্ষিপ্ত শিরােনাম (Short title) অত্র আইন ‘হস্তান্তরযােগ্য দলিল আইন, ১৮৮১’ নামে অভিহিত হবে।
স্থানীয় আওতা, হুন্ডিসমূহ ও ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রথার সংরক্ষণ ও বলবতকরণ (Local extent, Saving of usages relating to hundis, etc. Commencement): উক্ত আইনটি সমগ্র (বাংলাদেশ)-এ প্রযােজ্য হবে; কিন্তু এর কোন কিছুই ১৯৭২ সালের [বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক আদেশ (১৯৭২ সনের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১২৭)-এর অনুচ্ছেদ ২৩ ও ২৪] এর [বিধানসমূহ]-কে কোনভাবে খর্ব করবে না; এবং এ আইন ১৮৮২ সনের ১লা মার্চ তারিখ হতে বলবৎ হবে।
ধারা-১কঃ অস্ত্র আইনের প্রয়ােগ (Application of the Act) প্রতিটি হস্তান্তরযােগ্য দলিল অত্র আইনের বিধান মােতাবেক নিয়ন্ত্রিত হবে এবং এরূপ দলিল সম্পর্কিত কোন বিধান, এমন কোন প্রথা বা রীতির বেলায় প্রযােজ্য হবেনা, যা অত্র আইনের কোন বিধানের পরিপন্থী হয়।
ধারা-২ঃ বিধিবদ্ধ আইনবলে বাতিল (Repeal of enactments) [সংশােধনী আইন, ১৮৯১ (১৮৯১ সনের ১২নং আইন) দ্বারা বাতিলকৃত]।
ধারা-৩ঃ ব্যাখ্যার দফা (Interpretations clause) বিয়ষবস্তু বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে, অত্র আইনে-
(এ) “উপযােজক পক্ষ (accommodation party)” বলতে এমন এক ব্যক্তিকে বুঝাবে, যিনি কোন হস্তান্তরযােগ্য দলিলের প্রস্তুতকারী, লেখক, স্বীকৃতিদাতা বা পৃষ্ঠাঙ্কনকারী হিসাবে কোন মূল্যবান প্রতিদান গ্রহণ না করে এবং নিজের নাম অন্যকে ব্যবহার বা ধার দেয়ার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর প্রদান করেছেন।
(বি) “ব্যাঙ্কার (banker)” বলতে এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক এরূপ একটি ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেনকারীকে বুঝাবে, যার দ্বারা ঋণ প্রদান বা বিনিয়ােগের উদ্দেশ্যে দাবীমাত্র বা অন্যভাবে প্রদেয় এবং চেক, ড্রাফট, আদেশ বা অন্য মাধ্যমে তােলা যায় এরূপ আমানত জনসাধারণের নিকট থেকে গ্রহণ করার কার্য করলে তাকে বুঝাবে এবং ডাকঘর সঞ্চয়ী ব্যাঙ্কও এর আওতাভুক্ত হবে;
(সি) “বাহক (bearer)” বলতে এমন এক ব্যক্তিকে বুঝানাে হয়, যিনি হস্তান্তরের মাধ্যমে কোন হস্তান্তরযােগ্য দলিল হস্তগত করেন, যা বাহক বরাবরে পরিশােধযােগ্য;
(ডি) “অর্পণ (delivery)” বলতে একব্যক্তির দখল অন্যের নিকট প্রকৃত বা পরােক্ষভাবে হস্তান্তর করা বুঝানাে হয়;
(ই) “ইস্যু (issue)” বলতে এমন কোন ব্যক্তিকে পূর্ণাঙ্গরূপে কোন অঙ্গীকারপত্র, বিনিময়পত্র বা চেক প্রথম অর্পণ করাকে বুঝানাে হয়, তিনি যেন তা ধারক হিসাবে গ্রহণ করে থাকেন;
(এফ) “গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন (material alteration)” বলতে কোন অঙ্গীকারপত্র, বিনিময়পত্র বা চেক-এর ক্ষেত্রে এগুলাের তারিখ, পরিশােধ্য অঙ্ক, পরিশােধের সময়, পরিশােধের স্থান, ইত্যাদি বিষয়ক কোন পরিবর্তন আনয়ন এবং যেক্ষেত্রে অনুরূপ কোন দলিল সাধারণভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে স্বীকৃতি প্রদানকারীর সম্মতি (acceptor’s assent) ব্যতীত পরিশােধের স্থান সংযােজন, প্রভৃতিকে বুঝানাে হয়; এবং
(জি) “নােটারী পাবলিক (notary public)” বা লেখ্য প্রমাণক বলতে সে সকল ব্যক্তিদেরকে বুঝাবে যারা [সরকার] কর্তৃক অত্র আইনের বিধান মােতাবেক নােটারী পাবলিকের দায়িত্ব পালনার্থে নিয়ােগপ্রাপ্ত হন এবং নােটারী অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (১৯৬১ সনের ১৯নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী একজন নােটারী হিসাবে নিয়ােগ লাভ করেন।
আলােচনা
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন (Material Alteration): গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্বন্ধে বলা যায় যে, হস্তান্তরযােগ্য দলিলে যদি এরূপ কোন পরিবর্তন করা হয় যার ফলে, (ক) দলিলের কার্যকারীতা অর্থাৎ পূর্বে উহার যে আইনগত চরিত্র বা প্রকৃতি ছিল, তার পরিবর্তন হয়, অথবা (খ) দলিলের সহিত সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে বা তাদের সকলের যেকোন একজন অধিকার ও দায়িত্বের মৌলিক পরিবর্তন ঘটে, তাহলে ঐ পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়। সাধারণতঃ দলিলে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে, যেমন—(ক) দলিলের তারিখ, (খ) দেয় টাকার অঙ্ক, (গ) দলিল পরিশােধের মেয়াদ বা সময় ও স্থান, (ঘ) সুদের হার ও (ঙ) পরিশােধের মাধ্যম বা মুদ্রা। এছাড়া দলিলে.কোন পক্ষের নাম যােগ করলে বা দলিলের কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিন্ন হলে, তাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে গণ্য হয় [আরাে দেখুন ৮৭ ধারা]।
নােটারী পাবলিকঃ ইনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এক পদস্থ কর্মচারী। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত আইনজীবি বা অন্য কোন যােগ্য ব্যক্তিকে সরকার সরকারী গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট স্থানীয় এলাকায় বা স্থানীয় এখতিয়ারে, প্রত্যেক নােটারী পাবলিকের অনুকূলে একটি সনদ ইস্যুর মাধ্যমে, নােটারী পাবলিক বা লেখ্য প্রমাণ হিসেবে নিযুক্তি দান করেন। অর্থাৎ অনুরূপ সনদ ব্যতীত কেউ এ দায়িত্ব পালন করার যােগ্য বিবেচিত হতে পারেন না। নােটারী পাবলিকগণ একটি সুনির্দিষ্ট সীলমােহর ব্যবহার করে থাকেন। হস্তান্তরযােগ্য কোন দলিল প্রত্যাখ্যাত হবার পর উহা তাঁর নিকট উপস্থাপন করলে তিনি উক্ত দলিলাটির প্রত্যাখ্যানের কারণ লিপিবদ্ধ করে তাঁর প্রয়ােজনীয় সই ও সীলমােহর, প্রদান করে একটি সনদ হস্ত করেন।
সাধারণত সরকার নােটারী পাবলিকদের জন্য একটি রেজিষ্টার সংরক্ষণ করে থাকেন, যার মধ্যে নিয়ােগপ্রাপ্ত কোন নােটারী পাবলিকের নাম, জন্ম তারিখ, বাসস্থান ও পেশাগত স্থানের ঠিকানা, এ দায়িত্বে নিযুক্তির তারিখ, শিক্ষাযােগ্যতাসহ প্রয়ােজনীয় অন্যান্য তথ্যাদি বিধৃত করা থাকে। নােটারী পাবলিকদের কার্যাবলী ১৯৬১ সালের ১৯নং অধ্যাদেশে নিম্নোক্তরূপে বর্ণিত হয়েছে, যেমন-
(ক) প্রস্তুতকৃত যেকোন দলিল প্রত্যয়ন ও সত্যায়ন করণ;
(খ) প্রত্যাখ্যাত কোন হস্তান্তরযােগ্য দলিলের লেখন ও প্রমাণ (noting & protesting) করণ।
(গ) কোন অঙ্গীকারপত্র, বিনিময় বিল বা দেশীয় দলিল স্বীকৃতি বা পরিশােধ কিংবা অধিকতর নিরাপত্তার দাবী জানিয়ে দলিল উপস্থাপন করণ।
(ঘ) বটমরী (bottomry) বা বন্ধকমূলে কর্জ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলিল প্রণয়ন।
(ঙ) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধি মােতাবেক প্রয়ােজনে কোন ব্যক্তির হলফনামা গ্রহণ।
(চ) অনুরূপ প্রত্যাখ্যাত হস্তান্তরযােগ্য দলিল উপস্থাপন ও তদবিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান।
(ছ) নােট করা, প্রমাণ রেজিষ্ট্রি করা ও দলিলের সংশ্লিষ্ট পক্ষকে বিজ্ঞপ্তি প্রদান।
(জ) অত্র আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন।
‘লেখ্য প্রমাণক’ শব্দটি বলতে বিদেশের লেখ্য প্রমাণককেও বুঝায় [Gujrat Sing u. Jasuant Singh (AIR (1971) Supreme Court 761]।
Leave a comment