প্রশ্নঃ দর্শনের অনুধ্যানমূলক ও বিচার/ সমালােচনা মূলক কাজ আলােচনা কর।

অথবা, দর্শনের অনুধ্যানমূলক কাজ কী?

অথবা, দর্শনের সমালােচনা মূলক কাজ আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ দৈনন্দিন জীবনে মানব মনে প্রকৃতির অপার রহস্য ও জীবনের অজস্র জটিলতা বিস্ময় ও জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করে। আর এ জিজ্ঞাসা থেকেই জন্ম নেয় দর্শন। মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। তাই সে এসব রহস্য ছিন্ন, করেই ক্ষান্ত হয়নি, জীবনের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যকেও আবিষ্কার করেছে। আর এজন্যই দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয়। দর্শন শব্দটি এসেছে সংস্কৃত দৃশ ধাতু থেকে। বাংলা ভাষায় দৃশ ধাতুর অর্থ হলাে দেখা।

অনুধ্যানমূলক কাজঃ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হিসেবে মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। বিশাল, বিচিত্র, রহস্যময় জগতের দিকে তাকালে মানুষের মন বিস্ময়ে ভরে ওঠে। তার মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে, এ জগতের মালিক কে? কে এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির নিয়ম-শৃঙখলার নিয়ন্ত্রক কে? বহির্জগৎ কি প্রকৃত জগৎ। অতীন্দ্রিয় কোনাে জগৎ আছে কি-না? থাকলে তার স্বরূপ কী? মানুষের সাথে জগতের কী সম্পর্ক? জীবনের স্বরূপ কী? জীবনের পরম আদর্শ কী? মরণ কী? মৃত্যুর পর কি, কোনাে জগৎ আছে? আত্মা কেমন? আত্মা আছে কি-না? জীব জড় কী? এদের সম্পর্ক কি? আত্মার অমরত্ব বলতে কী বােঝায়? দেহ ও প্রাণের কী সম্পর্ক? মন না দেহের প্রাধান্য বেশি? এসব প্রশ্ন আমাদের মনে সহজতরভাবে এসে যায়। আর এ প্রশ্নগুলাের উত্তর খুঁজতে গেলে মানুষকে ভাবতে হয়, চট করেই এর উত্তর দেয়া সম্ভব হয় না।

সমালােচনামূলক কাজঃ আমরা একটা কথা সবাই জানি, সেটা হলাে “নানা মুনির নানা মত”। এ কথাটি দর্শনের ক্ষেত্রে পুরােপুরি সত্য। দর্শনের এই নানা মতই দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছে। এই নানা মতই সমালােচনা। আমরা দেখি জীবনের মৌলিক প্রশ্ন সম্পর্কে অনেক সময় লৌকিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু এ লৌকিক ব্যাখ্যা মানুষের মনকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। তাই কোনাে ব্যাখ্যার মধ্যে মানুষ যখন প্রশ্ন তােলে তখনই সমালােচনার সৃষ্টি হয়। দর্শনের কাজ নির্বিচারবাদী নয়; বিচারমূলক। দর্শন কোনাে কিছু বিনা বিচারে গ্রহণ করে না। বিচার গ্রহণ করে যেটা নির্ভুল প্রমাণিত হয় সেটাকেই দর্শন গ্রহণ করে। দর্শন বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলোকেও বিনা বিচারে গ্রহণ করে না। বিজ্ঞানের এমন অনেক বিষয় আছে। যেমনঃ এটম বােমা।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, দর্শনের কাজ মানুষের কাছে সত্যকে পৌঁছে দেয়া। দর্শন মানুষকে সত্যের সামগ্রিক রূপ জানতে সাহায্য করে। অনুধ্যান, সমালােচনা ও গঠন এই তিনটির মাধ্যমে দর্শম তার অগ্রযাত্রাকে, আরাে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দর্শন চিন্তা করে, সমালােচনা করে এবং এ দুটোর সমন্বয় করে কীভাবে মানবকল্যাণ করা যায় সেটাও দর্শন আলােচনা করে। কাজেই দর্শন একটা সার্বিক বিষয়।