অথবা, শাসতন্ত্রের প্রাধান্য বলতে কী বুঝ?
অথবা, সংবিধানের প্রাধান্য উল্লেখ কর।
অথবা, সংবিধানের প্রভাব বলতে কী বুঝ।
ভূমিকাঃ সংবিধান হলাে বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান থাকে। রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, কোন বিভাগের সঙ্গে কোন বিভাগের কি সম্পর্ক থাকবে, জনগণ কি অধিকার ভােগ এবং কি কর্তব্য পালন করবে তা সংবিধানের মধ্যে সন্নিবেশিত থাকে। সংবিধান রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কাঠামাের রূপরেখা অঙ্কিত করে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সার্থক করে গড়ে তােলে। সংবিধান হচ্ছে সকল ধরনের সরকারের উৎস।
সাংবিধানিক প্রাধান্যঃ সাংবিধানিক প্রাধান্য বলতে সাংবিধানিক আইনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারােপকে বুঝায়। কেননা সাংবিধানিক আইনের মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্রের সার্বিক শাসনব্যবস্থা, শাসন পরিচালনা এবং সরকারি কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, সাংবিধানিক প্রাধান্যের মূল অর্থ হচ্ছে, “সবকিছু সংবিধানের মধ্যে, কোনকিছু সংবিধানের বাহিরে নয় এবং কোনকিছুর বিরুদ্ধেও নয়।” সংবিধান হলাে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি ও রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ আইন। আর এ আইন অনুযায়ী যখন রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তখন রাষ্ট্রে সাংবিধানিক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক প্রাধান্য বলতে যা বুঝায় সে বিষয়গুলাে নিম্নে আলােকপাত করা হলাে-
১. সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনঃ সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, সকলেই তা মান্য করবে। সংবিধান অমান্যকারীর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। দেশে প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, আইনকানুন এসব কিছুর ঊর্ধ্বে হলাে সংবিধান।
২. বিধান দেশের মৌলিক আইনঃ সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের বিশেষ পবিত্রতা সম্পন্ন মৌলিক আইন। সংবিধানকে কেন্দ্র করেই দেশের অন্যান্য আইন প্রণীত হয়। আর সংবিধান অনুযায়ীই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যকলাপ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩. আইনের শাসনঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসন কায়েম হয় বিধায় সাংবিধানিক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার সংবিধান বহির্ভূত কোন কাজ করতে পারে না, এমনকি অন্য কাউকেও করতে দেয়া হয় না। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তি শাসনের সুযােগ কম থাকে।
৪. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণঃ সংবিধানের মধ্যেই জনগণের মৌলিক অধিকার সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। তাই সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকে। সুতরাং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সংবিধানের প্রাধান্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সমাজের দর্পণঃ সংবিধানের মধ্যে প্রতিটি রাষ্ট্রের সামাজিক রূপ, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সংবিধান পাঠ করলে একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত ধরন সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
৬. পবিত্র দলিলঃ সংবিধান শুধু একটা রাষ্ট্রের মৌলিক আইনই নয়, রবং এটা একটি রাষ্ট্রের জন্য পবিত্র দলিল স্বরূপ। প্রতিটি রাষ্ট্রে সংবিধানকে পবিত্র দলিল হিসেবে মান্য করে এবং এর পবিত্রতা রক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সাংবিধানিক প্রাধান্য বলতে একটি সংবিধানের মধ্যে রাষ্ট্রকে নিয়ে যেসব বিষয়কে আলােকপাত করা হয় তাকে বুঝায়। আর এ বিষয়গুলাের মধ্যে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য বিষয়গুলাে সংবিধানে খুব ভালােভাবে ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায় সাংবিধানিক প্রাধান্যের ক্ষেত্রে সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের দর্পণ স্বরূপ।
Leave a comment