অথবা, মালােদের দুঃসময়ে শিক্ষিত অনন্তের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তরঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে অনন্তকে নিয়ে জেলেদের মনে যে প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছিল তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অনন্ত।
অনন্ত মেধাবী ছাত্র। তার প্রতিভায় মালােরা মুগ্ধ। সকলে অনন্তর ব্যাপারে তাই পােষণ করতে থাকে উচ্চাশা। অনন্তকে মালােরাই ভর্তি করিয়ে দেয় গােপালখালি মাইনর স্কুলে। চিঠি লিখতে, তমসুকের খত লিখতে, বেপারীর সঙ্গে মাছের খাতার হিসাব লিখতে মালােদের যেতে হয় হরিদাস স্যারের কাছে। তাকে অনেক অনুরােধ করে, বড় বড় মাছ দিয়ে, টাকা দিয়েও অনেক সময় কাজ পেতে কষ্ট হয়। মালােদের এই অভাব মেটানাের দায়িত্ব যেন বর্তায় অনন্তর কাঁধে। কিন্তু লাভ হয়নি মালােদের। উপন্যাসের অন্তিম পর্যায়ে মহামারীর মতাে মৃত্যু এসে মালােদেরকে নিশ্চিহ্ন ও সর্বস্বান্ত করে দেয়। সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে কোনাে রকমে টিকে থাকে বাসন্তী আর কিশােরের বৃদ্ধ পিতা রামকেশব। মালােরা চেয়েছিল মালােদের দুঃসময়ে শিক্ষিত অনন্ত যেন সরকারের কাছে একটি চিঠি লিখে মালােদের বেঁচে থাকার একটা উপায় বের করে দেয়। কিন্তু বিপদের সময়ে মালোরা অনন্তকে পাশে পায়নি। অনন্ত কমিল্লার শাহরিক পরিবেশে শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠলেও গােকনঘাটের মালাে সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক মেরুদূর। অনন্তবালারা চলে যায় আসামে। নিস্তব্ধ ও প্রায়লুপ্ত বিশাল মালােপড়া কালের সাক্ষী হয়ে হতশ্রী রূপ নিয়ে পড়ে থাকে। লেখাপড়া শেখার ফলেই সে যেন শ্রেণিচ্যুত হয়ে উঠে গেছে ওপরের শ্রেণিতে। রামকেশব ও বাসন্তীর অন্তিম সময়ে মানব কল্যাণের নামে তাদের মুখােমুখি হলেও পরিচয় গােপন করেছে অনন্ত।
মূলত শেষ পর্যন্ত অনন্ত হয়ে পড়েছে শ্রেণিচ্যুত-উচ্চবিত্ত শ্রেণির অধিকারী একটি চরিত্র- যার সাথে তিতাসতীরবর্তী জেলেদের কোনাে সম্পর্কই তার অবশিষ্ট ছিল না।
Leave a comment