অথবা, কৌশল ও পদ্ধতি কী?
ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান। তাই আধুনিক সমাজবিজ্ঞান সমাজ গবেষণায় বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ জন্য অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজবিজ্ঞানেরও কতগুলাে বৈজ্ঞানিক স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে সমাজকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করে একটি সামাজীকীকরণ করা যায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে পদ্ধতি হচ্ছে কোনাে কিছু বিশ্লেষণের মান নির্ণায়ক। পদ্ধতিগুলাে মূল্যহীন নয়, পদ্ধতি সুনিশ্চিত। নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে বলেই প্রত্যেকটি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত সুসংহত। তবে অনেকেই পদ্ধতি ও কৌশলকে এক করে ফেলে। পদ্ধতি এবং কৌশল এক নয়, কেননা তাদের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
পদ্ধতির সংজ্ঞাঃ পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Method আর Method শব্দটি গ্রিক শব্দ Meta এবং Hodo থেকে এসেছে। Meta অর্থ with বা after এবং Hodos অর্থ why, যার বাংলা ভাবার্থ হলাে পন্থাসহ বা পন্থার সাহায্য। অতএব, কোনাে কাজ সুসংহত, সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে যে পন্থার সাহায্য নিতে হয়, তাই পদ্ধতি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ মনীষী ট্রেকার পদ্ধতির সংজ্ঞায় বলেছেন, “পদ্ধতি হলাে কোনাে লক্ষ্য অর্জনের সচেতন ও সুপরিকল্পিত উপায়।” বাহ্যিক দিক দিয়ে এটি হলো কোনাে কিছু সম্পাদনের পন্থা। কিন্তু এ কাজের অন্তরালে আমরা সর্বদাই সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান উপলব্ধি ও নীতি আবিষ্কার করে থাকি।
J.A. Hughes বলেছেন, “পদ্ধতি হচ্ছে কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং জ্ঞান আহরণের কৌশলসমূহ।”
Holzner এর মতে, “Method is the systematic and logical study of the principles guiding scientific investigation.” অর্থাৎ পদ্ধতি হচ্ছে কোনাে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য যেমন প্রণয়ন করা হয় তার সুশৃঙখল এবং যুক্তিপূর্ণ অধ্যয়ন। অন্যান্যরা মনে করেন, প্রধানত পদ্ধতি বলতে এক ধরনের দশমিক মূল্যায়ণকে বুঝানাে হয়ে থাকে বা কোনাে বিষয়ে অনুসন্ধানের কৌশলকে বুঝায়।
কৌশলঃ যদিও অনেকে মনে করে থাকেন পদ্ধতি ও কৌশল দু’টি সমার্থক শব্দ। কৌশল (technique) পদ্ধতির সাথে খুবই নিবিড়ভাবে যুক্ত। পদ্ধতি ও কৌশলকে অনেকে একই অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, পদ্ধতি ও কৌশল ভিন্ন অর্থ বহনকারি দু’টি শব্দ। পদ্ধতির ধারণা সাধারণত কৌশল অপেক্ষা ব্যাপক হয়ে থাকে। একই গবেষণায় পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত অনেক কৌশল থাকতে পারে। অন্য কথায় বলতে গেলে, পদ্ধতির আশ্রয়েই কৌশল গৃহীত হয়ে থাকে।
সার্বিক আলােচনায় এ কথা বলা যায় যে, পদ্ধতির একটি বিশেষ রূপই হচ্ছে কৌশল। তাই পদ্ধতি ফলপ্রসূ করার জন্য যে হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়, তাকে কৌশল বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানে যেসকল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে তার মধ্যে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অন্যতম। কেননা, সমাজ গবেষণার একটি মৌলিক তথ্য সংগ্রহ হিসেবে পর্যবেক্ষণ বিশেষভাবে -বিবেচিত। যদিও পর্যবেক্ষণের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও সামাজিক বিজ্ঞানের উন্মেষ ও বিকাশে পর্যবেক্ষণই প্রধান ভূমিকা পালনকারি কৌশল।
Leave a comment