প্রশ্নঃ রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে মধ্যে ৫টি সম্পর্ক সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তির মধ্যে ৫টি সম্পর্ক নির্ণয় কর।

ভূমিকাঃ বর্তমান সভ্যজগতে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্র নামক এ রাজনৈতিক সংগঠনটি সভ্যতার বহু পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এ সংগঠনের মধ্যেই আমরা বসবাস করি, লালিত-পালিত হই এবং মৃত্যুবরণ করি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। রাষ্ট্র একটি বিবর্তনমূলক ও সমাজ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান।

রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কঃ রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে কীরূপ সম্পর্ক হবে এ প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এখনাে মতৈক্যে পৌছাতে পারেননি। রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক নিম্নে আলােচনা করা হলাে-

(১) ব্যক্তিসমষ্টি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিতঃ রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হচ্ছে জনসমষ্টি। আর জনসমষ্টি বলতে সমষ্টিগতভাবে ব্যক্তিকেই বুঝানো হয়। সুতরাং রাষ্ট্র গঠিত হয় ব্যক্তির সমন্বয়ে। অর্থাৎ ব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রদেহের একটি বিশেষ অঙ্গ। ব্যক্তির সমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র গঠন অকল্পনীয়। আবার রাষ্ট্র ছাড়া ব্যক্তিও অসম্পূর্ণ।

(২) ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নয়নঃ রাষ্ট্রের মঙ্গল ব্যক্তির মঙ্গলের মানদন্ডে পরিমাপ করা হয়। তাই কোথাও যদি ব্যক্তির মঙ্গলকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন বা মঙ্গল পরিদৃষ্ট হয়, তবে তা কল্যাণকর বলে ভাবা যায় না।

(৩) রাষ্ট্র ও ব্যক্তি একে অপরের পরিপূরকঃ রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। সমষ্টিগতভাবে ব্যক্তি যদি হয় দেশপ্রেমিক, সৎ, শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিবান, তাহলে রাষ্ট্রও হয়ে ওঠে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। আবার ব্যক্তি যদি হয় আত্মকেন্দ্রিক, দুর্নীতিবাজ, অজ্ঞ এবং অসৎ তবে রাষ্ট্রও অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলায় ভরে ওঠে।

(৪) রাষ্ট্র ব্যক্তির কল্যাণ নিশ্চিত করেঃ ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য রাষ্ট্র কর্মসূচী গ্রহণ করে। ব্যক্তি যেমন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষা করে, তেমনি রাষ্ট্রও ব্যক্তির কল্যাণসাধন করে। রাষ্ট্র আইন তৈরী করে মানুষের নৈতিক উন্নতি বিধান ও আত্মবিকাশের সুযােগ করে দেয়। রাষ্ট্রীয় আইন যদি-ব্যক্তিবৃন্দের স্বার্থহানি ঘটায় তবে সে আইন অমান্য হয় বেশি।

(৫) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষাঃ রাষ্ট্র হলাে পৃথিবীর একক সর্বোচ্চ শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিধ্বনি। এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় ব্যক্তির ওপর। ব্যক্তিই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধ করে এবং ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত সরকার রাষ্ট্রকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশে পরিচালনা করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না তেমনি ব্যক্তি ছাড়া রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। ব্যক্তির কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র অপরিহার্য। তাই ব্যক্তি ও রাষ্ট্র একে অপরের পরিপূরক। ব্যক্তির গৌরব মানেই রাষ্ট্রের গৌরব ও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নই ব্যক্তির উন্নয়ন। এজন্য বলা হয় যে, ব্যক্তিই মুখ্য ও রাষ্ট্র গৌণ।