অথবা, সরকার ও ব্যক্তির মধ্যেকার সম্পর্ক সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ আমাদের এই পৃথিবী নিয়ত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর আবর্তনের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, সভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই মানুষ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে আগ্রহী। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মানুষ সময় ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করেছে।
সরকার ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কঃ নিম্নে সরকার ও ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ক আলােচনা করা হলাে-
(১) উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রেঃ উদ্দেশ্যগত বিবেচনায় সরকার ও ব্যক্তি সমার্থক। সরকারের উদ্দেশ্য হলাে রাষ্ট্রে সুশাসন ও ব্যক্তিকল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা। আর ব্যক্তির উদ্দেশ্য হলাে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণসাধনে সরকারকে সহায়তা করা। সুতরাং বলা যায় যে, সরকার ও ব্যক্তির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রায় এক এবং অভিন্ন।
(২) সহযােগিতার ক্ষেত্রে সরকারঃ ব্যক্তির সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, সরকার ও ব্যক্তি পরস্পর প্রতিযােগী নয়, বরং সহযােগী। সরকারের উদ্দেশ্য হলাে রাষ্ট্রে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা। আর ব্যক্তির উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলাে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণ সাধনে সরকারকে সহায়তা করা।
(৩) অভিন্ন ও অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কঃ আমরা দেখতে পাই, ব্যক্তি ও সরকারের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন ও অভিন্ন সম্পর্ক বিদ্যমান। রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল ও গতিশীল করতে হলে সরকার ও ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ককে অবিচ্ছিন্নভাবে পরিপােষণ করতে হবে। কেননা, ব্যক্তি ও সরকারবিচ্ছিন্নতা রাষ্ট্রকে নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত করে।
(8) সাফল্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিঃ সরকারের সাফল্য নির্ভর করে পারস্পরিক সহযােগিতার ওপর। সরকার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আর সরকারের এই সকল কাজের সাফল্য তখনই অর্জিত হয়, যখন ব্যক্তি নিজেকে এই সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে।
(৫) একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠঃ সরকার গঠিত হয় মূলত জনসমষ্টির মূল একক ব্যক্তি দিয়ে। আর ব্যক্তি সমস্টির মাধ্যমে জনসমষ্টি গঠিত হয়। সরকার ও জনসমষ্টির মূল একক হলাে ব্যক্তি। তাই সরকার ও ব্যক্তির মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ জন্য অনেকে সরকার ও ব্যক্তিকে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে আখ্যায়িত করেন।
(৬) কল্যাণ মূলক সম্পর্কঃ সরকার ও ব্যক্তির সম্পর্ক অত্যন্ত কল্যাণমূলক। আর সরকার হলাে একটি কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। সরকার শ্রেণী স্বার্থের কল্যাণ না করে, বরং রাষ্ট্রের বসবাসকারী সকল ব্যক্তির কল্যাণে নিয়ােজিত থাকে;এতে উভয়ের মধ্যে কল্যাণমূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি ব্যতীত সরকার যেমন গঠিত হতে পারে না, তেমনি সরকার ছাড়াও ব্যক্তি চলতে পারে না। ব্যক্তি ও সরকার উভয়ই রাজনৈতিক প্রত্যয় এবং উভয় প্রত্যয়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ক্রিয়াশীল থাকে। ব্যক্তি ও সরকারের সম্পর্ক নির্ণয়ে টি এইচ মার্শালের মন্তব্য প্রণিধানযােগ্য।
Leave a comment