প্রশ্নঃ প্রয়ােগবাদ বলতে কী বােঝ?

অথবা, প্রয়ােগবাদ কী?

ভূমিকাঃ মানবিক প্রয়ােজনই হল সত্য নির্ণয়ের একমাত্র মাপকাঠি। যে মতবাদ ব্যবহারিক প্রয়ােজনীয়তার দিকে লক্ষ রেখে সত্যতার স্বরূপ ও সত্যতা পরীক্ষা করার কথা বলে তাকে প্রয়ােগবাদ বা প্রয়ােজনবাদ বলে। পার্স, জেমস, ডিউঙ্গ এবং শিলার প্রয়ােগবাদ মতবাদের প্রধান বক্তা। তবে এদের মধ্যে মতভেদ আছে। নিচে আমরা এদের মতামত আলাদাভাবে আলােচনা করব।

জেমসের বক্তব্যঃ জেমস ছিলেন একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। তাই জ্ঞানােৎপত্তিতে যেমন, সত্যতা নির্ণয়েও তেমনি তিনি অভিজ্ঞতার গুরুতুকে স্বীকার করেন। তার মতে, সত্যতা কোন বচনের অভ্যন্তরীণ কোন বৈশিষ্ট্য নয়, বরং এটি তার একটি আকস্মিক বা আপতিক গুণ। একটি বিশেষ কারণ থাকার জন্যই আমরা কোন বচনকে সত্য বলে আখ্যা দেই। আর এই বিশেষ কারণটি হল সাফল্য বা কার্যকারিতা। যে বচন আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগে, দৈনন্দিন জীবনে যে বচন হিতকর বলে প্রমাণিত হয় তা-ই সত্য। তাই বচনকে সত্য বলে গ্রহণ করার আগে অভিজ্ঞতার পরশপাথরে তার ব্যবহারিক মূল্যকে যাচাই করতে হবে। যেসব বচনকে আমরা এ আলােকে যাচাই করতে পারি, পরখ করে তার ব্যবহারিক মূল্যকে দেখতে পারি তা-ই সত্য বচন। সত্যতার নির্ণায়ক বা মানদণ্ড হচ্ছে কার্যকারিতা, উপযােগিতা বা হিতকারিতা। এ ছাড়া শাশ্বত বা চিরন্তন সত্য বলে জেমস কোন সত্যতাকে স্বীকার করেন না।

ডিউঙ্গের বক্তব্যঃ জেমসের মত ডিউঙ্গও সত্যতাকে বচনের কোন অভ্যন্তরীণ গুণ বলে মনে করেন না। জেমসের সুরে সুর মিলিয়ে তিনিও সত্যতাকে বচনের একটি অর্জিত গুণ বা ধর্ম বলে মনে করেন। তার মতে, সত্যতা হচ্ছে একধরনের অনুসন্ধানের ফলশ্রুতি, যে অনুসন্ধানকে সুযােগ ও সুনিয়ন্ত্রিত বলে অভিহিত করা হয়। অনুসন্ধানের ফলে যদি দেখা যায় কোন বচন তার বক্তব্য বিষয়কে তুষ্ট করতে পারে তাহলে সেই বচনকে আমরা সত্য, আর অন্যথায় তাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে থাকি।

শিলারের বক্তব্যঃ শিলারও বাস্তব ফলাফলের নিক্তিতে সত্যতা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। তার মতে, সত্যতা একধরনের মূল্যায়ন। কোন বচনকে তখনই সত্য বলে আখ্যা দেয়া যায় যখন দেখা যায় বিশেষ কোন উদ্দেশ্য সাধন করার মাধ্যমে বচনটির ব্যবহারিক মূল্যকে মূল্যায়ন করা যায়। কোন বচন সফল হলেও তাকে সত্য বলে অভিহিত করা যায়। অন্যথায় বচন মিথ্যা।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, যে মতবাদ ব্যবহারিক প্রয়ােজনীয়তার দিকে লক্ষ রেখে সত্যতার স্বরূপ ও সত্যতা পরীক্ষা করার কথা বলে তাকে প্রয়ােগবাদ বা প্রয়ােজনবাদ বলে। পার্স, জেমস, ডিউঙ্গ এবং শিলার প্রয়ােগবাদ মতবাদের প্রধান বক্তা। তবে এদের মধ্যে মতভেদ আছে। নিচে আমরা এদের মতামত আলাদাভাবে আলােচনা করব।