প্রশ্নঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর রাজনৈতিক সংস্কারগুলাে সংক্ষেপে আলােচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অবদান আলােচনা কর।

উপস্থাপনাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দুনিয়ায় আবির্ভাব ঘটেছিল বিশ্ব মানবের ত্রাণকর্তা হিসেবে। তিনি ছিলেন বিশ্বের জন্য রহমত। তাই তিনি আরবের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মহাসংস্কার সাধন করেছিলেন। ঐতিহাসিক রায়মন্ড লার্জ বলেন- The founder of Islam is, in fact the promoter of the first social and international revolution of which history gives mention.

মুহাম্মদ (স)-এর রাজনৈতিক সংস্কারঃ

১. আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠাঃ মহানবী (স) মানুষের মনগড়া আইন ও নৈরাজ্যপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু ধর্ম ও ঈমানের বলে মুহাম্মদ (স) মদিনা রাষ্ট্রে যথাযথভাবে আল্লাহর আইন ও সৎলােকের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

২. মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাঃ ঐতিহাসিক খােদা বক্স বলেন, মহানবী (স) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও রাসূলে করীম (স)-এর কর্তৃত্ব ছিল এ রাষ্ট্রের প্রধান ভিত্তি।

৩. শূরা-ই নিযাম প্রতিষ্ঠাঃ মহানবী (স) শূরা-ই নিযাম বা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথিকৃত। তিনি পরামর্শভিত্তিক শাসনকার্য পরিচালনার রীতি প্রবর্তন করেন।

৪. কেন্দ্রীয় শাসন প্রবর্তনঃ মহানবী (স) গােত্ৰতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে কেন্দ্রীয় শাসন চালু করেন এবং মদিনাতে একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেন।

৫. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ মহানবী (স) রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র হতে অপরাধ প্রবণতা চিরতরে বিলুপ্ত করেন।

৬. অমুসলিমের অধিকার প্রতিষ্ঠাঃ মহানবী (স) অমুসলিম নাগরিকদের জান, মাল, মান-সম্মান ও নিজ ধর্মানুষ্ঠান পালনের নিরাপত্তা বিধান করেছেন।

৭. শক্তিশালী জাতিতে পরিণতঃ হযরত মুহাম্মদ (স) শতধাবিভক্ত আরববাসীকে এককেন্দ্রিক শাসনের অধীনে এনে শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করেন।

৮. শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ মহানবী (স) বিবদমান গােত্রগুলােকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যাপক হিট্টি বলেন- Thus by one stroke the most vital bond of Arab relationship. That of tribal kingship was replaced by a new bond, that of faith.

৯. সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিঃ ঐতিহাসিক মাসুদী বলেন, নবী করীম (স) সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খল জাতিকে সুসংহত করে সুশৃঙখল জাতিতে পরিণত করে ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনায় একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন।

১০. ঐশীতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সমন্বয়ঃ ঐতিহাসিক বােসওয়ার্থের মতে, মহানবী (স) ঐশীতন্ত্র তথা আল কুরআন ও গণতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন।

১১. নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিঃ মহানবী (স) রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও নিরক্ষেপ পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। যার মূল কথা ছিল যুদ্ধ নয় শান্তি।

১২. আল কুরআনকে সংবিধান ঘােষণাঃ মহাগ্রন্থ কুরআনকে রাষ্ট্রীয় সংবিধান ঘােষণা করে কুরআন সুন্নাহভিত্তিক শাসন পরিচালনা এবং বিচার সংক্রান্ত কার্য পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

উপসংহারঃ মহানবী (স) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না; বরং তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। ফলে তিনি একটি শক্তিশালী জাতি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন- His life is the noblest record of a work nobly and faithfull performed.