অথবা, নীতিবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লিখ।
ভূমিকাঃ মানুষের আচরণ কি হওয়া উচিত বা উচিত নয়, তা নিয়ে নীতিবিজ্ঞান আলােচনা করে। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজ সংগঠন ও তার ক্রমবিকাশ নিয়ে আলােচনা করে। নীতিবিদ্যা মানুষের আচার, ব্যবহার, রীতিনীতি ইত্যাদির বর্ণনামূলক বিজ্ঞান। সমাজবিদ্যা সামাজিক গােত্র ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে জড়িত বলে প্রথা, আচার, ব্যবহার, ধর্ম, অর্থনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ে আলােচনা করে। নিচে নীতিবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলােচনা করা হলাে-
নীতিবিদ্যা ও সমাজবিদ্যার সাদৃশ্যঃ নৈতিকতা মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও পছন্দ থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে। নৈতিকতা সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্ত ব্যক্তি গ্রহণ করার পর কঠোর আত্মসংযমের মাধ্যমে তা নিজের জীবনে একবার বাস্তবায়িত করতে পারলেই তা পরবর্তী জীবনের স্বভাবে পরিণত হবে। এভাবে সমাজের অপরাপর ব্যক্তি এই নৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তা তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে সুস্থ ও আদর্শ সমাজ জীবন গঠন করতে পারে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সামাজিক আদর্শ যেমন ব্যক্তির আচরণকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি ব্যক্তির নৈতিক আচরণও অনেক সামাজিক প্রথাকে কেবল নিয়ন্ত্রিত করে না। বরং, সামাজিক কুপ্রথাকে পরিবর্তিতও করে থাকে। এদিক থেকে দেখা যায়- নীতিবিদ্যার সাথে সমাজবিদ্যার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে।
নীতিবিদ্যা ও সমাজবিদ্যার বৈসাদৃশ্যঃ
১. সমাজবিদ্যা মানব সমাজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান একটা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। আর নীতিবিদ্যা একটা আদর্শের ভিত্তিতে সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণের ঔচিত্য অনৌচিত্য নিয়ে আলােচনা করে।
২. সমাজবিদ্যা সমাজের অন্তর্ভুক্ত বাহ্যিক ক্রিয়াবলিকে যতটুকু সম্ভব বিষয়গতভাবে আলােচনা করে বলে সমাজবিদ্যা বিষয়গত বিজ্ঞান। আর নীতিবিদ্যা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ঐচ্ছিক ক্রিয়া এবং এর সাথে জড়িত বিষয় নিয়ে আলােচনা করে।
৩. সমাজবিদ্যার আলােচ্য বিষয় মানুষের সমষ্টিগত আচরণ। আর নীতিবিদ্যার আলােচ্য বিষয় মানুষের ব্যক্তিগত আচরণ।
৪. নিছক তাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাবলির আলােচনা সমাজবিদ্যার মূল উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে, নীতিবিদ্যা নৈতিকতা সম্পৰ্কীয় তাত্ত্বিক দিকের সাথে সাথে ব্যবহারিক দিক নিয়েও জড়িত।
৫. সমাজবিদ্যার আলােচনার পদ্ধতি হলাে বৈজ্ঞানিক আরােহণমূলক পদ্ধতি। পক্ষান্তরে, নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার ও পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়ােজন হয় না।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা ও সমাজবিদ্যা মানুষ নিয়ে আলােচনা করে। তাই লেসলি স্টিফেন সমাজবিদ্যা সম্পর্কে বলেন, “সমাজবিদ্যা ঐসব বিদ্যার জন্য একটাই সাধারণ পদ, যেসব বিদ্যা মানব সমাজের অভ্যাস, আচরণ, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের আদিম অবস্থা থেকে সভ্য অবস্থায় ক্রমবিকাশের সব স্তরের আলোচনা করে।
Leave a comment