অথবা, প্রাচীন চীনে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত চীনের হােয়াংহাে নদীর উপত্যকায় প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল। মেসােপটেমীয়, মিশর বা সিন্ধু সভ্যতার মত চীন সভ্যতার সূচনা এত পুরনাে না হলেও খ্রিঃপূর্ব দুই হাজার বছরের কিছু পরেই এখানে ব্রোঞ্জ যুগের একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে ওঠে। চীনের মােট আয়তন ৩৬,০০০০০ বর্গমাইল। শুধু বিশাল ও প্রাচীনত্বের দিক দিয়েই নয়, চীন বহুমুখী অবদানের দ্বারা বিশ্বসভ্যতায় অনেক নতুন নতুন বিষয় সংযােজন করেছে।
চীনে বিজ্ঞানের অগ্রগতিঃ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চীন যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। এ সময় চীনারা গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগােল, পদার্থবিদ্যা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-
(১) গণিতঃ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রাচীন চীন যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করে। গণিতশাস্ত্রে বেশ কিছু উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। চীনা গণিতবিদরা জ্যামিতির বিভিন্ন সূত্র, উপাত্ত সম্বন্ধে অবহিত ছিলাে। চাং শাং (খ্রিঃপৃঃ ১৫২) প্রথম ঋণাত্মক সংখ্যার উল্লেখ করেন। পাই-এর মান ৬ দশকের স্থানে শুদ্ধভাবে নির্ধারণ করা হয়। হ্যান যুগে গণিতের উন্নতি আরাে এক ধাপ এগিয়ে যায়।
(২) জ্যোতির্বিদ্যাঃ জ্যোতির্বিদ্যাচর্চায় প্রাচীন চীনারা বেশি সফল হয়। ইতিহাস গ্রন্থ ইয়াও-এর কানুনে সম্রাট তার ভাইকে জ্যোতির্বিদ্যা গণনা বিষয়ে যেসব উপদেশ দেন তার বিশেষ বর্ণনা আছে, “আকাশের বিস্তীর্ণ পটভূমি পরীক্ষা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রসমূহের গতি ও রাশিচক্রের আবর্তনের কাল নির্ধারণ করবে, তার থেকে বিভিন্ন ঋতুর কাল নির্ণয় করবে।”
(৩) ভূগােলঃ ভূগােল বিশেষ করে সমুদ্রবিদ্যা যথেষ্ট উৎকর্ষ লাভ করে। চীন জ্যোতির্বিদরা প্রধান প্রধান গ্রহ-নক্ষত্রপুঞ্জের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন এবং তারা সূর্য, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এ পঞ্চগ্রহের সাধারণ গণনা করতে পারতেন। যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে ভূগােলবিদরা বুঝতে পারেন শুধুমাত্র চীনকে নিয়েই পৃথিবী গঠিত হয়নি। ক্রমশ তাঁরা চীন দেশের বাইরে অনেক দেশের ভূগােল আলােচনা করতে থাকেন।
(৪) পদার্থ বিজ্ঞানঃ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও অনেক উন্নতি হয়। দার্শনিক মােতির গ্রন্থে রশ্মি ও বলবিদ্যা সম্বন্ধে কয়েকটি মৌলিক নীতির উল্লেখ আছে। চুম্বক পাথরে দিক নির্ণয় করার নুন হ্যান যুগে আবিষ্কৃত হয়। ধাতুবিদ্যার নতুন অগ্রগতি হয়েছে। দ্রবীভূত লােহার ওপর গলিত কাঁচা লােহা ঢেলে তা থেকে উন্নতমানের ইস্পাত বের করার কৌশল আবিষ্কার করেন চিউ হুয়াইওয়েন।
(৫) চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ রােগ নির্ণয় ও চিকিৎসা যাদু ও কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হতাে। অবশ্য আস্তে আস্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রসার লাভ করে। ‘চৌ যুগে ‘The Carion of Medicine’ সংকলন করা হয়। এতে বেশ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যাবলি লিপিবদ্ধ আছে এবং কয়েকটি ব্যবস্থাপত্রসহ রােগের নামের উল্লেখ আছে। চীনা চিকিৎসাবিদরা হৃৎপিণ্ডকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে এবং লিভারকে সাধারণ অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করতাে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, চীনের ইতিহাস যেমন পুরনাে, তেমনি পুরনাে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতা এবং আবিষ্কার। জ্ঞানবিজ্ঞানসহ সর্বক্ষেত্রে এ সভ্যতার মানুষ রেখেছিল অনন্য অবদান। চৈনিক দর্শন এতই সমৃদ্ধ ছিল পাশ্চাত্যের রুশাে, গ্যাটে, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, টলস্টয় প্রমুখ দার্শনিক এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। চৈনিকরা প্রথম ধান, মুদ্রণ শিল্প, লিখন পদ্ধতি, কাগজ আবিষ্কার করে। মুদ্রণ ও লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার চৈনিক সাহিত্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। সঙ্গীত ক্ষেত্রে আবিষ্কার করে অনেক ধরনের বাদ্যযন্ত্র, কৌশল ও সঙ্গীত।
Leave a comment