রাজনীতি অর্থে রাজনীতিক কার্যকলাপ: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সাবেকী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে এক নতুন আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজনীতির সামাজিকীকরণের ধারা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিককালের সমাজব্যবস্থায় রাজনীতির এক সর্বব্যাপী প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়। ফাইনার এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “In modern society politics is ubiquitous.” ফাইনার তাঁর Comparative Government শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। ফাইনারের অভিমত অনুসারে রাজনীতির মধ্যে কার্যাবলীর ধারণা বর্তমান। রাজনীতি হল আসলে এক ধরনের আচরণ বা কার্যাবলী। অর্থাৎ রাজনীতি বলতে রাজনীতিক কার্যকলাপকে বোঝায়। এই ধরনের কার্যকলাপ বে সরকারী সংস্থার কার্যাবলীর মধ্যেও দেখা যায়, আবার পরিবারের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও দেখা যায়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে-কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের মধ্যেও রাজনীতিক পরিস্থিতি ও কার্যকলাপের সৃষ্টি হয়। এই কারণে ফাইনারের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক কার্যকলাপের প্রকৃতি হল সর্বব্যাপী। সুতরাং রাজনীতি বলতে কোন নৈতিক নির্দেশকে বোঝায় না। এ হল এক ধরনের কার্যকলাপ। রাজনীতিক কার্যকলাপ সর্বজনীন। বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “Politics is an activity, not a moral prescription, it is a universal activity.”

সংকীর্ণ ধারণা: সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণা অনুসারে রাজনীতিক কার্যকলাপ বলতে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজকর্মকে বোঝায়। তা ছাড়া সাধারণভাবে এও মনে করা হয় যে কেবলমাত্র সরকারী সংস্থা, পার্লামেন্ট, নির্বাচন, মন্ত্রিসভা প্রভৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজকর্মই হল রাজনীতিক কাজকর্ম। এবং এও মনে করা হয় যে অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের যাবতীয় আচরণ বা কাজকর্ম রাজনীতিক কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু এ হল রাজনীতিক কার্যকলাপ সম্পর্কিত সংকীর্ণ ধারণা। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাজনীতিক কার্যকলাপ সম্পর্কিত এই ধারণাকে স্বীকার করা হয় না। রাজনীতিক কার্যকলাপের আধুনিক ধারণা অনেক বেশী ব্যাপক।

মতভেদ ও মতভেদের মীমাংসা: অ্যালান বল, অস্টিন রেণী ও মিলার যথাক্রমে Modern Politics and Government, Governing-An Introduction to Political Science, Nature of Politics শীর্ষক গ্রন্থে রাজনীতিক কার্যকলাপের প্রকৃতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

বলের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক কার্যকলাপ হল সর্বজনীন (universal phenomenon)। রাজনীতিক কার্যাবলী বলতে মতভেদ এবং এই মতভেদের মীমাংসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কার্যকলাপকে বোঝায়। এবং এই রকম রাজনীতিক কার্যকলাপ যে-কোন পর্যায়েই পরিলক্ষিত হয়। বল বলেছেন: “It (Political activity) involves disagreements and the reconciliation of those disagreement, and therefore can occur at any level.” পরিবারের মধ্যে সমবয়স্ক দুটি শিশুর মধ্যে কোন দ্রব্য বা বস্তুর উপর অধিকারকে নিয়ে মতভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি হতে পারে এবং এর থেকে রাজনীতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে মতভেদ ও বিবাদ আছে এবং সংশ্লিষ্ট বিবাদ মীমাংসার প্রয়োজনীয়তা আছে। শিশু দুটির মধ্যে অধিকতর শক্তিশালীটি উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বলপ্রয়োগের সামিল হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে পিতা বিবদমান সস্তান দুটির মধ্যে সালিশীর মাধ্যমে মীমাংসার ব্যবস্থা করেন। বা পিতা অন্য অনেক রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তবে মূল কথা হল এই যে এক্ষেত্রে সংঘাত আছে এবং সংঘাত নিরসনের ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ রাজনীতিক পরিস্থিতি আছে। এ প্রসঙ্গে বল মন্তব্য করেছেন: “The possibilities are numerous but the essence of the political situation remains that of conflict and the resolution of that conflict.” অর্থাৎ বলের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক পরিস্থিতির মৌলিক উপাদান হল মতভেদ বা বিরোধ এবং সংশ্লিষ্ট বিরোধের মীমাংসা। সুতরাং যে-কোন পর্যায়েই রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি হতে পারে। কারণ যে-কোন স্তরেই বিরোধ বা সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে।

বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতির ধারণা ব্যাখ্যা: অস্টিন রেণীও বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক ধারণা বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। অস্টিনের অভিমত অনুসারে পরস্পর-বিরোধী স্বার্থ সাধনের ভিত্তিতে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যে-কোন রকমের বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। বস্তুত বিরোধের সৃষ্টি হয় মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য থেকে। মানবজীবনের ক্ষেত্রে বিরোধ যেমন অবশ্যম্ভাবী, অনুরূপভাবে সমাজজীবনেও বিরোধ এড়ান অসম্ভব। সকল সমাজেই বিরোধ ও সংঘর্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমাজবদ্ধ মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধ ও সংঘর্ষ হল অবশ্যম্ভাবী এবং অপরিহার্য। সঠিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের নিয়মনীতির থেকে রাজনীতিক সংঘর্ষকে দুর্ভাগ্যজনক অস্থায়ী বিচ্যুতি বলা যায় না। অস্টিন রেণী বলেছেন: “…political conflict is not an unfortunate temporary aberration from the norm of perfect cooperation and harmony.” মিলারও অনুরূপভাবে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতানুসারে রাজনীতি মতভেদ বা বিরোধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেখানে সামগ্রিকভাবে সহমত বর্তমান, সেখানে রাজনীতির অস্তিত্ব অসম্ভব। কারণ রাজনীতির মধ্যেই মতভেদ বা বিরোধ বর্তমান থাকে। মিলার বলেছেন: “…conflict lies at the heart of politics. In a world of universal agreement, there would be no room for it.” রাজনীতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বিরোধ বা সংঘর্ষ থেকেই। তবে মিলার এও বলেছেন যে, নীতি প্রণয়নের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কযুক্ত। আবার নীতির পরিবর্তন বা পরিবর্তন প্রতিরোধের ব্যাপারেও রাজনীতিক কার্যকলাপ দেখা যায়।

সরকারী কর্মচারী ও বিচারপতিরা রাজনীতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত: বল রাজনীতিক কার্যকলাপের প্রকৃতি সম্পর্কিত উপরিউক্ত ধারণা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য দু-একটি উদাহরণের অবতারণা করেছেন। গ্রেট ব্রিটেনের সরকারী কর্মচারীদের রাজনীতির বিচারে নিরপেক্ষ মনে করা হয়। এ ক্ষেত্রে এই নিরপেক্ষতার আসল অর্থ হল সরকারী কর্মচারীরা কোন রাজনীতিক দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন করতে পারেন না। তবে তার মানে এই নয় যে তাঁরা রাজনীতিক বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না বা রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নন। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তাঁরা বিরোধ বা মতভেদ মীমাংসার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক সময় নিজেদের মান ও মূল্যবোধ প্রয়োগ করে থাকেন। বিচারপতিদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিচারপতিরা সাধারণভাবে রাজনীতি-নিরপেক্ষ। এবং এই রাজনীতি-নিরপেক্ষতা বিচারপতিদের যোগ্যতা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে প্রত্যয় ও বিশ্বাসের সৃষ্টি করে। কিন্তু বিচারপতিরাও রাজনীতিক কার্যাবলীর সঙ্গে যুক্ত। কারণ তাঁরা বিচারকার্য সম্পাদনের দ্বারা বিরোধ মীমাংসার কার্য সম্পাদন করেন। এবং বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে বিচারপতিরা লিখিত আইনের দ্বারা স্বীকৃত স্ববিবেচনামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। সুতরাং সরকারী কর্মচারী এবং বিচারপতিরাও রাজনীতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

রাজনীতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সর্বদলীয় সরকার বিভ্রান্তিমূলক: কোন কোন দেশে সর্বদলীয় সরকারের দাবি করা হয়। এবং মনে করা হয় যে, তা হলে বিরোধের আর কোন অবকাশ থাকবে না। কিন্তু অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদলীয় সরকারের ধারণা বিভ্রান্তির পরিচায়ক। সর্বদলীয় সরকারের কথা বলে মতভেদ বা বিরোধের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়। কিন্তু ঘটনা হল এই যে মতভেদ বা বিরোধ আছে বলেই প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন রাজনীতিক দল বা উপদলীয় চক্রের সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত দল বা চক্রকে বিরোধের কারণ বলা যায় না। কোয়ালিশন বা সর্বদলীয় সরকার হল একটি রোগ নিরাময়ের উদ্যোগ। কিন্তু রোগের মূল কারণের নয়, এ হল রোগের উপসর্গের চিকিৎসা। বল বলেছেন: “Competing parties or factions are evidence of disagreements, not causes of those disagreements, and coalition and all-party governments are attempt to cure an illness, if political conflict could be regarded as unnatural, by treating the symptoms not the cause.”

একদলীয় ব্যবস্থায়ও মতভেদ ও বিরোধ থাকে: বহু রাজনীতিক দলের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে মতভেদ ও বিরোধের অস্তিত্ব প্রতিপন্ন হয়। অনুরূপভাবে একদলীয় ব্যবস্থার মধ্যেও মতভেদ ও বিরোধ থাকতে পারে। বল বলেছেন: “Single-party states do not signify an end to disagreement between political leaders.” একদলীয় ব্যবস্থায়ও রাজনীতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতভেদ ও বিরোধ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বল পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভের পদচ্যুতির কথা বলেছেন। বল বলেছেন: “Khrushchev was overthrown by his Communist Party colleagues in 1964 because, amongst other things, they disagreed with his foreign policy and his economic policy.”

সর্বসাধারণের স্বার্থের ধারণা রাজনীতিক কার্যকলাপের বিরোধী: অনেকে সর্বসাধারণের সর্বজনীন স্বার্থের ধারণা (general interest)-র উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। তাঁরা অংশ বিশেষের স্বার্থকে বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে স্বীকার করেন না। তাঁরা সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের স্বতন্ত্র স্বার্থের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। কিন্তু, অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে, সর্বসাধারণের স্বার্থের ধারণা রাজনীতিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। কারণ রাজনীতিক কার্যকলাপ মানেই হল বিরোধ ও তার মীমাংসা; সর্বজনীন স্বার্থের ধারণার মাধ্যমে একে উপেক্ষা করা হয়। রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও কার্যাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসাধারণের স্বার্থের ধারণা সমালোচনামূলক। বল বলেছেন: “Usually, this concept of general interest is a criticism of the political process, and a failure to understand that political activity is concerned with conflict and conciliation.”

সম্পদের অপ্রতুলতা থেকে রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি: সম্পদের অপ্রতুলতা থেকেও রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি হতে পারে। বল বলেছেন: “Political activity may result from the scarcity of resources.” দেশের স্বার্থ সাধনের জন্য একাধিক কার্যক্রম গ্রহণের বিষয় বিচার-বিবেচনার মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু দেশের আর্থিক সামর্থ্য যে-কোন একটি কার্যক্রম বা পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার উপযোগী। এ রকম অবস্থায় বিভিন্ন বিকল্প কার্যক্রমের মধ্যে বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এবং রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি হয়। বল বলেছেন: “Political activity results from the necessity of choosing and coming to a decision about alternative policies when only one is economically possible.” ব্যয়বহুল মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচী গ্রহণ করতে হলে আবাসন, শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যাকে উপেক্ষা করতে হবে। আবার ব্যাপক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে।

ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য সূত্রে মতভেদের সৃষ্টি হয়: ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য বা বৈষম্য মতভেদ ও বিরোধের কারণ সৃষ্টি করে। শ্বেতকায় ব্যক্তিবর্গ কৃষ্ণকায় মনুষ্য গোষ্ঠীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারে। এবং আর্থ-রাজনীতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ব্যবস্থা করতে পারে। এবং তারফলে এই দুই মানবগোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য ও বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পায়। বিত্তহীনরা বিত্তবানদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারে। তারা তাদের দারিদ্র্য মোচন ও সম্পদের সমবণ্টনের স্বার্থে পৃথক রাজনীতিক দল বা গোষ্ঠী গঠন করতে পারে। বল বলেছেন: “Differences between individuals and group provide reasons for disagreement.” আবার পুরুষকুল মহিলাদের উপর তাদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্বকে অব্যাহত রাখার জন্য উদ্যোগী হতে পারে। এবং তারফলে নারীমুক্তি আন্দোলন জোরদার হতে পারে। তবে এ কথা ঠিক নয় যে, সকল রকম পার্থক্য থেকেই বিরোধ বা সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। বল বলেছেন: “This is not to say that all differences are a source of potential conflict at public level;….” এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে অধ্যাপক বল লম্বা মানুষ এবং বেঁটে মানুষের মধ্যে পার্থক্যের কথা বলেছেন। এই পার্থক্য থেকে রাজনীতিক বিরোধ বা সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে না। মানব সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্ত পার্থক্য সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কতকগুলি ক্ষেত্রে পার্থক্য অন্যান্য বিষয়ে পার্থক্যের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আবার এ ব্যাপারে দেশ-ভেদে পার্থক্য দেখা যায়। তবে এ কথা সাধারণভাবে সত্য যে আর্থনীতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য রাজনীতিক বিরোধ ও সংঘর্ষের এক সর্বজনীন উৎসবিশেষ। বল বলেছেন: “However, economic differences appear to provide a universal source of political disagreement.”

বৈচিত্র্যসূত্রে রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি: বৈচিত্র্যের সূত্রেও বিরোধ ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। এবং আর্থনীতিক বা জাতিগত পার্থক্যের মতো এই সমস্ত পার্থক্যের কোন বাস্তব ভিত্তি নাও থাকতে পারে। বাস্তব কোন পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিভিন্ন মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক কার্যকলাপের সৃষ্টি হতে পারে। বল বলেছেন: “The diversity which gives rise to conflict need have objective base such as economic or racial differences. Opinions not directly linked to objective differences may form the source of political activity.” সকল সমাজেই বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। এ হল সমাজজীবনের এক স্থায়ী উপাদান। সকল ধরনের সমাজজীবনের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে কোন না কোন ধরনের বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তবে সমাজভেদে বৈচিত্র্যের তারতম্য অস্বাভাবিক নয়। বৈচিত্র্য যেহেতু সকল সমাজের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক, সেহেতু মানুষের আচার-আচরণের ক্ষেত্রে রাজনীতিক কার্যকলাপও অস্বাভাবিক নয়। বল বলেছেন: “…diversity of some form is the norm of every society. It is a permanent feature, and therefore political activity is not an abnormal aspect of human behaviour. It is the process accommodating the conflict that stems from that diversity.”