‘প্রবন্ধ’ শব্দটির অর্থ প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন। এ বন্ধন বিষয়ের সঙ্গে প্রকাশভঙ্গির, রূপের সঙ্গে ভাবের, ভাষার সঙ্গে বক্তব্যের একটা বিষয়ের আদি-মধ্য-অস্ত সমন্বিত রচনা।
মধ্যযুগের বাংলায় প্রকৃষ্ট বন্ধনযুক্ত কোনো রচনাকেই ব্যাপক অর্থে ‘প্রবন্ধ’ অভিধায় চিহ্নিত করা হত। কাব্য-কবিতার ক্ষেত্রেও এই ‘প্রবন্ধ’ কথাটির প্রয়োগ মধ্যযুগে পাওয়া যায়। যথা, পাঁচালী-প্রবন্ধ, লাচারী-প্রবন্ধ, পয়ার-প্রবন্ধ ইত্যাদি। শুধু কি পরিপাটি রচনার ক্ষেত্রেই। সাধারণভাবে কোনো কাজের প্রকার, কৌশল, ছাঁচ এমনকি আরম্ভ বোঝাতেও ‘প্রবন্ধ’ শব্দের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়।
আধুনিক যুগে, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই ‘প্রবন্ধ’ শব্দটির অর্থসঙ্কোচ ঘটল। ব্যবহার গদ্যের সীমায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। তাও সব গদ্য রচনা নয়। ‘তথ্যের অন্বয় এবং যুক্তি তর্কের-ক্রম সংবদ্ধতার ভিতর দিয়া যে সকল গদ্য লেখা একটা প্রকৃষ্ট বন্ধন লাভ করিল তাহাকেই আমরা নাম দিলাম প্রবন্ধ’। উনিশ শতকের প্রথমদিকে ব্যবহৃত ‘প্রস্তাব’ এবং পরবর্তীকালে ‘প্রবন্ধ’ একই অর্থে ব্যবহৃত এবং ইংরেজি Treatise, Discourse Dissertation-এর সমধর্মী।
বস্তু তন্ময়তাই (objective) একটা প্রবন্ধ এবং প্রবন্ধকারের প্রকৃষ্ট গুণ। কোনো তথ্য বা তত্ত্বকে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করাই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। আবেগের বিস্তৃতি সেখানে অনুপস্থিত, বর্ণনার বাহুল্য সেখানে নেই। প্রকৃতির শোভা দেখে প্রাবন্ধিক মুগ্ধ হন না, তিনি প্রকৃতির রহস্য বিশ্লেষণ করতেই আগ্রহী হন। এক কথায় একজন প্রাবন্ধিক যতখানি স্রষ্টা তারও অধিক নির্মাতা। আবেগ ও প্রজ্ঞার সার্থক সমীকরণেই সঙসাহিত্যের জন্ম। কিন্তু প্রবন্ধকারের পক্ষে হৃদয়গুণ যতটা প্রয়োজন, তার চেয়েও বেশি দরকার সমুন্নত প্রজ্ঞার। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই তিনি পুরোমাত্রায় বুদ্ধিধর্মী। তিনি বুদ্ধিকেই হৃদয় অপেক্ষা বেশি স্থান দিয়ে থাকেন। আবেগের Magic নয়, যুক্তি শৃঙ্খলিত Logicই প্রবন্ধকারের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। মনঃপ্রধান এই জাতীয় রচনায় প্রকাশ পায় চিন্তার ঐশ্বর্য, চেতনার বিস্ময় এবং উদ্দেশ্যের গাঢ়তা। লেখকের মানসিক পরিশ্রম ও যৌক্তিক শৃঙ্খলাবোধ একটা রচনাকে পরিপাটি প্রবন্ধরূপে গড়ে তোলে। ‘কোনো একটি তত্ত্ব, যাকে বলা যাবে চেতনার দুর্গ, সেই দুর্গকে আক্রমণ করতে হয় অতন্দ্র বুদ্ধির অস্ত্রে। যুক্তির সাহায্যে অবিন্যস্ত চিন্তাকে উদ্দেশ্যের অনুকুলে প্রেরণ করা এবং অবশেষে বিশ্লিষ্ট চিন্তাকে একমুখী করে তোলা প্রবন্ধ-নিবন্ধের ধর্ম। বস্তুত প্রবন্ধের মধ্যে জাতির মেরুদণ্ডের স্বরূপ বোঝা যায়।’ ‘তত্ত্বপূর্ণ ও তথ্যনিষ্ঠ প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে একটা জাতির ইতিহাস সহজেই ধরা পড়ে। চিন্তার জগতে সাবালকত্ব অর্জন করতে না পারলে কোনো জাতি দেশে ও কালে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে না। তার জন্য তথ্যপূর্ণ ও তত্ত্বনিষ্ঠ প্রবন্ধের প্রয়োজন।’ আর, একটা দেশ, জাতি ও সমাজের বিচিত্রমুখী প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে সামাজিক, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ভৌগোলিক প্রবন্ধসমূহের আয়োজনের সার্থকতা এখানেই।
আধুনিক যুগে প্রবন্ধের উদ্ভবক্ষণে শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। স্মরণীয় কেরী, মার্শম্যান প্রভৃতির নাম। রামমোহন রায়ের প্রবন্ধসমূহে রয়েছে প্রাথমিক পদচারণা। তিনি সুতাত্ত্বিক ও শীলিত বুদ্ধির অধিকারী। কিন্তু তাঁর প্রতিভা ও পরিশ্রম প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে ব্যয় হয়ে গেছে। তৎকালীন দেশবাসীর সীমাহীন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লেখনীকে অস্ত্র হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। ফলে যাকে আমরা যুক্তি-তর্ক সমন্বিত আদি-মধ্য-অন্ত বিশিষ্ট পরিপাটি প্রবন্ধ বলি, প্রবন্ধের সেই লক্ষণ তাঁর রচনায় অল্পই পাওয়া যায়। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ এই পনের বছরের মধ্যে রামমোহন অন্তত তিরিশখানি বাংলা পুস্তিকা রচনা করেছিলেন। এরমধ্যে ‘বেদান্তগ্রন্থ’ প্রভৃতির ন্যায় কিছু রয়েছে প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থের অনুবাদ। ‘ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’, ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’ প্রভৃতি বিতর্কমূলক রচনা। রামমোহনের সতীদাহ নিরোধ বিষয়ক দুটি পুস্তিকা ‘সহমরণ বিষয় প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ ও ‘দ্বিতীয় সম্বাদ’ এবং একটা কৌতুক মিশ্রিত রচনা ‘পাদরি ও শিষ্য সম্বাদ’-এর মতো তাত্ত্বিক রচনাতেও লেখকের ব্যক্তিগত উপলব্ধির স্পর্শ লেগেছে।
বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের পথিকৃৎ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ভাষা প্রাঞ্জল, সুমিষ্ট, প্রসাদ গুণ সম্পন্ন। বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ রচনাই অবশ্য সংস্কৃত ও ইংরেজি পাঠ্যপুস্তকের অনুবাদ। বিদ্যাসাগর রচিত প্রবন্ধধর্মী রচনাসমূহের মধ্যে ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য শাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ প্রভৃতি প্রবন্ধধর্মী রচনাগুলিতে তথ্য, তত্ত্ব, যৌক্তিকতা ও প্রমাণের সমাবেশ বিস্ময়কর। প্রতিবাদী ও প্রতিপক্ষকে বিব্রত ও হাস্যাস্পদ করবার জন্য তাঁর ছদ্মনামে ব্যঙ্গবিদ্রূপ পূর্ণ কৌতুকাবহ পুস্তিকাগুলিও সরস রচনার জন্যই পাঠক সমাজে আদরণীয়। তাঁর ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোষ্য’ ছদ্মনামে গ্রথিত তিনটি পুস্তিকাতে বাংলা গদ্যে রুচিসম্পন্ন উচ্চ অঙ্গের রসিকতাপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ রচনার পরিচয় পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগরের বাংলা গদ্য রচনা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য ভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন এবং সুসংযত করিয়া তাহাকে সহজ গতি ও কার্যকুশলতা দান করিয়াছেন। বাংলা গদ্যে বিদ্যাসাগরের নির্মিতি-কৌশল চিরদিন বাঙালির বিস্ময় আকর্ষণ করবে।
সমসাময়িক কালে অক্ষয়কুমার দত্ত বিভিন্ন তত্ত্ববিষয়ক গ্রন্থ রচনা করে বাঙালির বৈজ্ঞানিক ও মননশীল চিত্তকে জাগাতে চেয়েছিলেন। তাঁর ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’, ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’, ‘পদার্থবিদ্যা’ প্রভৃতি অক্ষয়কুমারের জ্ঞান-বিদ্যা-মননশীলতা-গবেষণার সার্থক নিদর্শন শুধু নয়, এই জাতীয় প্রবন্ধ রচনায় তাঁকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পথিকৃৎও বলা যেতে পারে। ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’, ‘সামাজিক প্রবন্ধ’, ‘আচার প্রবন্ধ’ গ্রন্থ তিনটি বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। ভাষারীতিতে আতিশয্যের পরিহার এবং স্বচ্ছ, যুক্তিপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন বক্তব্য প্রকাশ তাঁর প্রবন্ধ রচনার বৈশিষ্ট্য। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রহ্মানন্দ উপাধ্যায়, কেশবচন্দ্র সেনের প্রার্থনা ও আচার্যের উপদেশ তত্ত্বকথা পূর্ণ হলেও ব্যক্তিগত উপলব্ধি এগুলিকে মরমিয়া করে তুলেছে।
বাংলা উপন্যাসের মতো বাংলা প্রবন্ধও বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে সুগঠিত হয়ে ওঠে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত, ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের হাতে বাংলা প্রবন্ধের ভাষা নির্মাণকার্য সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাংলা প্রবন্ধ যৌবন লাভ করল বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর ‘বঙ্গদর্শন’ গোষ্ঠীর আবির্ভাবে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘প্রবন্ধ পুস্তক’ এবং পরে প্রবন্ধ সংকলন ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ এই বস্তুনিষ্ঠ (formal eassy) প্রবন্ধেরই স্বাক্ষর। অবশ্য কোথাও কোথাও তিনি ব্যক্তিগত প্রবণতার একেবারে ঊর্ধ্বে উঠেছেন, তা বলা যাবে না। তাঁর ‘কৃষ্ণ চরিত্র’ ও ‘ধর্মতত্ত্বে’র বক্তব্য তাঁর সত্ত্বার সঙ্গে এক হয়ে গেছে। তবু তাঁর ঋজু প্রকাশভঙ্গী, ব্যক্তিগত প্রবণতার উচ্ছ্বাস সাধ্যমতো বর্জন এবং বক্তব্যের একমুখীনতা তাঁর প্রবন্ধে লক্ষ্য করা যায়। আর এই গুণগুলিই উৎকৃষ্ট প্রবন্ধের গুণ। রবীন্দ্রনাথের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেও বলা যায়, তত্ত্বনিষ্ঠ প্রবন্ধের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র এখনো অনতিক্রমনীয়। এরপর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রবন্ধ মঞ্জরী’, শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, রজনীকান্ত গুপ্তের ‘প্রবন্ধমালা’, এই জাতীয় প্রবন্ধেরই গোষ্ঠীভুক্ত। উনিশ শতকে যে নতুন চেতনার জোয়ার তৎকালীন বাঙালি মনকে প্লাবিত করে দিয়েছিল, তার ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহুমুখী ভাবনাকে পরবর্তী সময়ের প্রাবন্ধিকগণ বাংলা সাহিত্যে প্রবন্ধের ফসলকে সমৃদ্ধ করেছেন। বৈজ্ঞানিক দর্শনচিন্তাও রামেন্দ্রসুন্দরের হাতে সাহিত্যগুণান্বিত হয়ে উঠেছে তাঁর ‘জিজ্ঞাসা’ সংকলনটিতে। ধর্মজগতের অধিবাসী হয়েও স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা গদ্যে তাঁর অসামান্য অধিকারের পরিচয় রেখে গেছেন, তাঁর ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘ভাববার কথা’ প্রভৃতি পুস্তিকাগুলির মধ্যে। তাঁর দৃপ্ত পৌরুষ ও অদ্ভুত মনীষা চলিত বাংলা রীতিকে অবলম্বন করে বাংলা গদ্যের শ্রীবৃদ্ধি করেছে।
বাংলা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে একটা উজ্জ্বল নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বৈচিত্র্যে, প্রাচুর্যে ও শিল্পগুণে তাঁর সৃষ্টি বিস্ময়কর এবং বিভিন্ন দিকপ্রসারী। তাঁর রচিত বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধসমূহের মধ্যেও কবি-মানসিকতার ছাপ তথ্য ও বিষয়কে অবলম্বন করে রচনাকে স্বদিষ্ট করে তুলেছে। তাঁর ধর্ম, দর্শন ও আধ্যাত্মিক প্রবন্ধগুলির মধ্যে ‘ধর্ম’, ‘শান্তিনিকেতন’, ‘মানুষের ধর্ম” প্রভৃতিতে মননের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে তাঁর জীবনের গভীর উপলব্ধির সঙ্গে এক হয়ে গেছে, ‘আত্মশক্তি’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘শিক্ষা’, ‘রাজাপ্রজা’, ‘স্বদেশ’, ‘পরিচয়’, ‘কালাস্তর’, ‘সভ্যতার সংকট’ প্রভৃতি রাজনীতি, সমাজনীতি ও শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধসমূহে তত্ত্ব, তথ্য ও তাৎপর্য আলোচনার মধ্য দিয়ে মহৎ মনুষ্যত্বকেই প্রতিষ্ঠিত দেখতে চেয়েছিলেন।
অবনীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বাগীশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী’তে গুরুতর ব্যাপারকেও একটা সহজ সরসরূপ দিয়ে প্রকাশ করেছেন, যা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনীয়। প্রমথ চৌধুরী (বীরবল) মননের ক্ষেত্রে, চিন্তাশীল প্রবন্ধের ব্যাপারে, যুক্তিবাদী মত প্রকাশে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ‘তেল-নুন-লকড়ী’, ‘নানাকথা’ উল্লেখযোগ্য। বিশেষত তাঁর ‘বীরবলের হালখাতা’ বাংলা সাহিত্যে একখানি অনন্য সাধারণ গ্রন্থ।
পরবর্তীকালে বস্তুনিষ্ঠ ও তত্ত্বনির্ভর প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে প্রবন্ধ ও চিত্তামূলক রচনার প্রাচুর্য সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাণ্ডিত্য, গবেষণা ও নতুন তথ্যের দ্বারা প্রবন্ধ সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। অর্থনৈতিক বিষয়ে বিনয়কুমার সরকার, ভবতোষ দত্ত স্বচ্ছ চিন্তা ও অনায়াস ব্যক্তিগত ভঙ্গি সহযোগে কঠিন বিষয়ে এক ঋজুতা নিয়ে এসেছেন। সাহিত্য এবং আলোচনামূলক প্রবন্ধের ক্ষেত্রে নীহাররঞ্জন রায়, শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শশিভূষণ দাশগুপ্ত, বিনয় ঘোষ, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতির নাম সশ্রদ্ধায় স্মরণীয়। এ ভিন্ন সাম্প্রতিককালে গোপাল হালদার, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অবু সয়ীদ সাইয়ুব, বিষ্ণু দে, অম্লান দত্ত যে-কোনো বিষয়কে উপস্থাপনের পরিচ্ছন্নতায় আকর্ষণীয় করবার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। এঁদের সকলকেই এক পক্তিতে অবশ্যই বসানো যায় না। কিন্তু মানসিকতার প্রবণতায় ও বিষয় উপস্থাপনার ভঙ্গিতে এইসব প্রবন্ধকারদের রচনায় এই বিশ্লেষণ বুদ্ধি ও বিষয় নিরপেক্ষ নিরাসক্ত মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
Leave a comment