হিন্দী আধুনিক কথাসাহিত্যে ফণীশ্বরনাথ রেণু প্রেমচন্দের যথার্থ উত্তরসূরী, অথচ প্রেমচন্দ দ্বারা প্রভাবিত নন- ‘রেণু’-র সাহিত্য আলোচনা প্রসঙ্গে অভিমতটি বিচার করো।
প্রেমচন্দ-উত্তর হিন্দী কথাসাহিত্যে যে কয়জন সাহিত্যিক তাঁদের মৌলিক সাহিত্য-প্রতিভার জন্য উজ্জ্বল হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফণীশ্বরনাথ রেণু।
হিন্দী কথাসাহিত্যকে কল্পকথা, মনোরগুক রোমাঞ্চকরতা ও অতিলৌকিক অবাস্তবতার কুয়াশাজাল থেকে মুক্ত করে বাস্তবতার সজীব ভূমির উপর স্থাপন করেছিলেন প্রেমচন্দ। উপন্যাসের আধুনিক শৈলী ও বাস্তব চিত্রণের মধ্য দিয়ে সজীব চরিত্রের ও কাহিনীর বিন্যাসও প্রেমচন্দেরই দান হিন্দী সাহিত্যে। তবে উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রেমচন্দ সামাজিক ও রাজনৈতিক—এই দুই ধারার উপন্যাসই মাত্র রচনা করেছেন। কিন্তু প্রেমচন্দ-উত্তর যুগের ঔপন্যাসিকগণ হিন্দী সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করলেন বিষয়-বৈচিত্র্যে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও এল ঐতিহাসিক, মন এবং আঞ্চলিক উপন্যাসও। কোনো বিশেষ অঞ্চলের সমাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতির অনুপুঙ্খ রচনায় যিনি অসাধারণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, বাস্তব রূপায়ণ দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় দিলেন, তিনি ফণীশ্বরনাথ রেণু।
আধুনিক হিন্দি সাহিত্যে আঞ্চলিক উপন্যাস (বা গল্প) রচনার জন্যই ফণীশ্বরনাথ রেণুর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তবে এই আঞ্চলিক ঔপন্যাসিক অভিধার মধ্যে কখনো কখনো সমালোচকদের বিরূপতার সন্ধানও পাওয়া যায়। বিরূপ সমালোচকদের মতে, ফণীশ্বরনাথ রেণুর সাহিত্যে প্রতিভার স্বাক্ষর থাকলেও তা প্রেমচন্দের মহৎ প্রতিভার মতো ব্যাপক নয়। প্রেমচন্দের রচনা সর্বভারতীয় জীবনের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছে বিশ্বস্তভাবে, এবং সেখানে উপন্যাস ও কথাসাহিত্য সংকীর্ণ আঞ্চলিক সীমায় বন্ধ। বিশেষ অঞ্চলের রূপাঙ্কনে অসাধারণ দক্ষতা দেখালেও তা কখনও প্রেমচন্দের সমতুল্য নয়।
সাহিত্য-সাধনার ক্ষেত্রে ফণীশ্বরনাথ রেণুর প্রথম প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ১৯৪৪ থেকে। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘বিশ্বামিত্র’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম ছোটগল্প ‘বটবাবা’ প্রকাশিত হয়। তবে রেণু-র নাম হিন্দী সাহিত্যে স্থায়ীভাবে মুদ্রিত হয়ে গেছে যে উপন্যাসটির জন্য সেটি ‘মৈলা আঁচল’। ‘মৈলা আঁচল’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘বটবাবা’ গল্প প্রকাশের দশ বছর পরে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘মৈলা আঁচল’ এবং ‘পরতী-পরিকথা’ সর্বাধিক আলোচিত। তবে এ ছাড়াও রয়েছে ‘জুলুম’, ‘দীর্ঘতপা’ এবং পল্টুবাবু রোড’ নামক উপন্যাসগুলি। উপন্যাস ছাড়াও রেণু অসংখ্য অসাধারণ ছোটগল্পও রচনা করেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প উভয়তই ভারতের বিশেষ সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতি, সংস্কার-কুসংস্কার, রীতি-নীতি এবং ক্রমপরিবর্তন জীবনধারার জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে রেণুর উপন্যাস ও ছোটগল্পগুলি।
হিন্দী উপন্যাস সাহিত্যের প্রথম স্থপতি প্রেমচন্দের শেষ উপন্যাস ‘গোদান’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৬-এ ফণীশ্বরনাথ রেণুর সর্বপ্রথম উপন্যাসে ‘মৈলা আঁচল’-এর প্রকাশ ১৯৫৪-তে। প্রকাশের পরেই রসজ্ঞ পাঠক ও সমালোচকেরা ‘মৈলা আঁচল’ কে প্রেমচন্দোত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে অভিনন্দন ও প্রশংসা জানিয়েছিলেন। কোনো বিখ্যাত আলোচক মন্তব্য করেছিলেন—“গোদান-উত্তর হিন্দী সাহিত্যে মৈলা আঁচল উপন্যাস অনুরূপ একটি মহৎ সংযোজন।”
যথার্থই আশ্চর্যের বিষয় ‘গোদান’ উপন্যাসের সাফল্যে পৌঁছতে প্রেমচন্দর মতো প্রতিভাকেও ক্রমপরিণত হবার সাধনায় ত্রিশটি বছর নিয়োজিত হতে হয়েছিল। ‘গোদান’ প্রেমচন্দের সর্বশেষ উপন্যাস (১৯৩৬)। কিন্তু ফণীশ্বরনাথ রেণু তাঁর ঔপন্যাসিক জীবনের প্রথম রচনাটিতেই কথাশিল্পের সেই শিখরভূমিটি স্পর্শ করে ফেলেছেন। ‘মৈলা আঁচল’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। বিশ্বসাহিত্যেই এই ঘটনা প্রায় বিরল।
‘গোদান এবং মৈলা আঁচল’—হিন্দী সাহিত্যের এই দুটি মহৎ উপন্যাসেরই আলস্ল সমষ্টিজীবন। তবে গোদানের মুখ্য উপজীব্য কোনো কোনো সমালোচকের মতে যেখানে সমগ্র ভারতীয় জীবন, সেখানে রেণুর ‘মৈলা আঁচল’ আশ্রয় করেছে বিহারের একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল। তা ছাড়া গোদানের মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি ‘মৈলা আঁচলে’ অনুপস্থিত বলেও তুলনা করেন কোনো কোনো সমালোচক। তবে অযোধ্যা সন্নিহিত দুটি গ্রামের পটভূমিতে লেখা ‘গোদান’ যদি সমগ্র ভারতীয় জীবনের প্রতিফলন হতে পারে, তবে মিথিলার মেরীগঞ্জের কাহিনীর মধ্যেও পরিবর্তমান ভারতীয় পল্লীসমাজের ছবি প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব। এবং আরও মনে রাখতে হবে যে, যে কোনো উপন্যাস বা কাহিনীরই পটভূমি একটি বিশেষ অঞ্চল। সেই অঞ্চলের জীবনই যখন বৃহৎ ব্যাপ্ত জীবনের ব্যানা বহন করে তখন তা আর অঞ্চলের সংকীর্ণ সীমায় বন্ধ থাকে না। রেণুর ‘মৈলা আঁচল’ উপন্যাসটিও আঞ্চলিক উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও বৃহৎ ভারতীয় পল্লীজীবনেরও আভাস ব্যঞ্ছিত করে।
‘মৈলা আঁচল’-এর প্রকাশকাল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ। গ্রন্থকার উপন্যাসের ভূমিকায় স্বয়ং এটিকে ‘আঞ্চলিক উপন্যাস’ বলে অভিহিত করেছেন। বিহারের পূর্ণিয়া অঞ্চলের মেরীগঞ্জ নামক একটি গ্রাম এই উপন্যাসের পটভূমি। মেরীগঞ্জ গ্রামটিকে লেখক কিন্তু কোনো আঞ্চলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রূপে দেখেননি। মেরীগঞ্জ উপস্থিত হয়েছে ভারতের সমস্ত অনগ্রসর গ্রামের প্রতীক হিসাবে—সে কথা উপন্যাসের ভূমিকাতেই বলেছেন ঔপন্যাসিক। যেহেতু ভারতের সমগ্র গ্রামজীবনই স্বাধীনতা উত্তরকালেও অনগ্রসর, সেহেতু মেরীগঞ্জের সমস্ত দলাদলি, কুসংস্কার, প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য কুৎসিত প্রতিযোগিতা, প্রভুকে তোষণের জন্য অত্যাধিক আগ্রহ, বর্ণভেদ, জাতিভেদ, ক্ষত্রিয়ত্বের অন্তঃসারশূন্য অহমিকা ইত্যাদি সবকিছুই আসলে সাধারণভাবে ভারতের যে কোনো গ্রামীণ জীবনেরই প্রতিবিম্ব। আবার সেই গ্রামেই যখন উন্নতির তথা সভ্যতার কোনো ন্যূনতম অগ্রগতির হাওয়া বয়, তখন সেটাও গ্রামজীবনে অস্বাভাবিক উত্তেজনাময় অবস্থার সৃষ্টি করে। ম্যালেরিয়া-ওলাওঠা বিপর্যস্ত গ্রামে যখন হেল্থ সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গৃহীত হয়, তখন তাকে কেন্দ্র করে মেরীগঞ্জের মানুষদের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক অবস্থান, প্রভাব ও প্রতিষ্ঠার পুরোনো ছক বদলে যেতে থাকে।
বিশেষভাবে মৈলা আঁচল’-এর ভাষায় মৈথিলী উপভাষা তথা দোহাতী ভাষার অনিবার্য ব্যবহার এর ঘটনা ও চরিত্রগুলিকে যেন অনেক বেশি জীবন্ত করে তুলেছে।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর ‘মৈলা আঁচলে’র সাফল্য সমালোচকদের মধ্যে একটি আশঙ্কার সৃষ্টি করেছিল যে, প্রথম উপন্যাসেই প্রতিভার শিখর স্পর্শ করার পর রেণু সম্ভবত আর পরবর্তী ক্ষেত্রে নিজেকেই অতিক্রম করতে পারবেন না। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত করে দু’বছর পরে রেণুর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পরতী পরিকথা’ যখন প্রকাশ পেল, তখন দেখা গেল আঞ্চলিক গণ্ডির মধ্য থেকেই এই উপন্যাসেও বৃহৎ ভারতের গভীর ব্যঞ্ছনা, সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি, গ্রামীণ জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, কাহিনী ও চরিত্র অসাধারণ দক্ষতায় উপস্থিত করেছেন ঔপন্যাসিক। ‘পরতী পরিকথা’ উপন্যাসও হিন্দী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণির উপন্যাস হিসাবে গ্রাহ্য।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর ছোটোগল্পগুলিও গ্রামীণ জীবনের বাস্তবমুখী চিত্রণে অনবদ্য। শুধু জীবনচিত্রণই নয়, রেণুর প্রতিভাস্পর্শে শৈলীগত অসাধারণত্বও সংযোজিত হয়েছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসগুলির মধ্যে। তাঁর প্রথম গল্প ‘বটবাবা’ প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার ‘বিশ্বামিত্র’ পত্রিকায় ‘মৈলা আঁচল’ প্রকাশের দশ বছর পূর্বেই ১৯৪৪-এ। তারপরও এবং উপন্যাস রচনার ফাঁকে ফাঁকেও তিনি অসংখ্য গল্প রচনা করেছেন।
পাঁচের দশকে হিন্দী সাহিত্য ক্ষেত্রে ছোটগল্পের যে নব-আন্দোলন, তা ছিল মূলত নগর-পল্লীর দ্বন্দ্ব থেকে জাত। রেণু এইসব সাহিত্য আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না। ফলে প্রচারের আলো সেই সময় তাঁর উপর পড়েনি কিন্তু নানা অঞ্চলের জনজীবনের উপাদান এত জীবন্তভাবে তাঁর রচনায় এসেছে যে পরবর্তীকালের আলোচকগণ ফণীশ্বরনাথের শক্তি ও সাহিত্যপ্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
রেণুর গল্পগুলি ঐতিহ্যবাহী হিন্দী সাহিত্যের প্রচলিত ধারা থেকে অনেকটা আলাদা। স্বাদ-রুচি-বাচনভঙ্গি সবদিক থেকেই। তাঁর এক দশক আগেই সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছে যে যশপাল ও অজ্ঞেয়, তাঁরাও রেণুর সাহিত্য প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন।
আমাদের পরিচিত পটভূমি থেকেই রেণু তাঁর গল্পের উপাদান আহরণ করেন। কিন্তু নিছক মামুলী ঘটনা ও চরিত্রও তাঁর গল্পে শেষ পর্যন্ত এক অপ্রত্যাশিত বাঁক নেয়। প্রথমত আঞ্চলিক পটভূমি, দ্বিতীয়ত লোকসংস্কৃতির নিবিড় গন্ধ রেণুর গল্পের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
‘পালোয়ানের ঢোলক’ গল্পে ম্যালেরিয়া ও কলেরায় তাড়িত পল্লীতে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দরিদ্র মানুষের যে অসহায়তা সেটি অনবদ্য ভঙ্গিতে ফুটলেও রেণু তাঁর এই গল্পে সেই অসহায়তার মাঝখানেও অপূর্ব শিল্প কৌশলে এক সঞ্জীবনীমন্ত্র সঞ্চার করেছেন। গ্রামের পালোয়ান লুট্রন সিং কুস্তির লড়াইয়ে সর্বদা জয়ের প্রেরণা লাভ করে ঢোলের বোলের মধ্য দিয়ে। সেই ঢোলের বোলে শক্তি সঞ্চার হয় পালোয়ানের মনে সেই শক্তিতেই সে পরাজিত করে দাম্ভিক কুস্তিগীর চাঁদ সিংকেও। চাঁদ সিংকে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করে লুট্রন সিং রাজাসাহেবের সভাতেও স্থান পায়। কিন্তু আধুনিক যুগের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এবং রাজাসাহেবের মৃত্যুতে রাজসভা এবং সভায় পালোয়ানের অস্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ফলে রাজাসাহেবের পুত্রের নির্দেশে লুট্রনের চাকরি যায়। লুটন পুত্রসহ গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে সমস্ত অভাবের মধ্যেও সে ঢোলক বাজিয়ে বাঁচার মন্ত্র জাগায় যেন। কলেরায় আক্রান্ত গোটা গ্রামে যখন মৃত্যুর ছায়া নামে, তখন এই মৃত্যুশীতলতার সঙ্গে সংগ্রামের প্রেরণা জাগায় পালোয়ানের ঢোলের শব্দ। শেষে লুট্রন পালোয়ানের পুত্র কলেরায় মারা গেলেও সে শেষকৃত্য সেরে এসে সারারাত ঢোল বাজায়। অবশেষে গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করে লুট্রন পালোয়ানও ঢোলের পাশে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
ফণীশ্বরনাথ রেণুর আর একটি গল্প ‘রসুল মিস্ত্রী’। সদর রোডে যন্ত্রপাতি সারানোর দোকান রসুল মিস্ত্রীর। তার কাজের খ্যাতি প্রচুর। নিখুঁত কাজ। তাই লোকে রসুল মিস্ত্রীর কাছেই পুরোনো জিনিস সারানোর জন্যে ভিড় করে। যুগ পাল্টে যায়। আশে পাশে নতুন নতুন দোকান গড়ে ওঠে, সাইনবোর্ড আর আলোর জেল্লা আসে। কিন্তু রসুল মিস্ত্রীর দোকান সেই আগের মতোই। গাছের গায়ে রংচটা আঁকাবাঁকা হরফে লেখা ছোটো ‘সাইনবোর্ডে’ ছেলেছোকরাদের মন্তব্যটুকু মুছে দেবারও প্রয়োজন বোধ করে না রসুল।
কাজের চাপ থাকলেও এবং তার কাজ নিখুঁত হলেও মানুষের অভিযোগ হল, রসুলকে কাজে পাওয়াই দায়। একটা জিনিস সারাতে দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। কেননা মানুষের সাহায্যের জন্য যেন তার জীবন উৎসর্গীকৃত। কার ছেলের শরীর খারাপ, কোন্ শ্রমজীবী নারী কার দ্বারা অপমানিত হয়েছে, কার জমি নিয়ে ঝামেলা, সবেতেই রসুল মিস্ত্রী গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। গ্রামে ম্যালেরিয়া ছড়াতে জড়িবুটির পাঁচন বানিয়ে রসুল গোটা গ্রামে বিলি করে। চরিত্রপ্রধান এই গল্পটিতেও অবক্ষয়ের মাঝখানে যেন একটা আশাবাদের আলো প্রজ্জ্বলিত করে তোলেন রেণু।
উপন্যাস ও ছোটগল্পে ফণীশ্বর রেণু শুধু আঞ্চলিক জীবনের বিশ্বস্ত রূপায়ণই ঘটাননি, মানুষের অন্তরাস্থিত মনুষ্যত্বের আলোকেও বারবার প্রকাশ করেছেন অজস্র প্রতিকূলতা ও অবক্ষয়ের মাঝখানে। তাঁর কাহিনীর পটভূমি আঞ্চলিক, স্বভাবতই ভাষা আঞ্চলিক, তবু তাঁরই মধ্যে শিল্পের অপূর্ব সংযোজন তাঁর কথা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে সন্দেহ নেই।
Leave a comment