ভূতনাথের প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় বুদ্ধিতে খাটো, লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়া একটি সতেরো বছর বয়সের যুবকরূপে। বিষয়ী পিতা তাকে আয়ুর্বেদশাস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলাপ ও মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পড়ায়। কিন্তু একান্ত অনিচ্ছায় সে তা সহ্য করে। জীবিকা হিসাবে আয়ুর্বেদ শেখার ভিত্তি হিসাবে ব্যাকরণ পাঠ সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটা তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। তার মায়ের কাছ এ ব্যাপারে সে বিরূপতাও প্রকাশ করেছে। কিন্তু এই ভূতনাথই ক্রমশ মনের দিক থেকে বেড়ে উঠেছে। এই তার পিতৃভক্তি পরিণত হয়েছে। তাঁর ঘৃণায় যখন পিতৃদেবের ভয়ংকর হত্যাকারীর চরিত্র তার সামনে উদ্ঘাটিত হয়ে গেছে।

আলোচ্য গল্পে ভূতনাথ চরিত্রটিই একটি ক্রমবিকাশ লক্ষ করা যায়। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত ও পরিণত হয়েছে। মণিমালিকার সঙ্গে যখন তার বিয়ে হয়েছে তখন তার বয়স কম এবং পিতার সে অনুগত। মণিমালিকা নিতান্তই বালিকা এবং সে ছিল তার খেলার সাথী। দ্বিতীয় বিবাহ হয় অনুপমার সঙ্গে, তখনও সে পিতার বিরোধী নয়। অনুপমা হয়ে উঠল তার যৌবনের সঙ্গিনী। অনুপমার মৃত্যু তার মনে গভীরভাবে আঘাত দেয়। তার স্মৃতি তাকে পীড়িত করতে থাকে এবং সে আবার বিবাহ করতে অস্বীকার করে। তার ব্যক্তিত্ব যে ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে তার এই অস্বীকারের মধ্য দিয়েই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু পিতৃদেবের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না বলে শেষ পর্যন্ত তাকে পিতৃইচ্ছায় বীণাপাণির পাণিগ্রহণ করতে হয়।

বীণাপাণির পিতার প্রেরিত মনি-অর্ডার যখন ভূতনাথের হস্তগত হয় তখন কৃষ্ণকান্তের গভীর চক্রান্ত এবং চরিত্রের ভয়ংকরতা তার কাছে উদ্ঘাটিত হয়ে যায়। বার বার তাকে বিবাহ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং কালোমেয়ের বাবার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কৌশল তার কাছে সহসা স্পষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণকান্তের বীণাপাণিকে হত্যার চেষ্টা ভূতনাথকে পিতৃ-আনুগত্যের বন্ধন ছিন্ন করতে প্ররোচিত করে এবং পিতৃদ্রোহী করে তোলে। পিতার ধারণায় নির্বোধ ভূতনাথ পিতার চরিত্র বুঝে ফেলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সক্রিয়তা আকস্মিক নয়, তার অভিজ্ঞতারই পরিণতি। সে বুঝতে পারে তার হৃদয় তার পিতার কাছে সম্পূর্ণ মূল্যহীন, সে অর্থলোলুপতার মাধ্যম মাত্র, তখনই সুতীব্র ঘৃণায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। জগদীশ গুপ্তের চরিত্র-চিত্রণের নৈপুণ্য এইখানে।