‘ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলির অনেক পত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে কবি এই সময় তাঁর অনেক বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। সেইসব কবিতা তোমার নির্বাচিত পত্রে কতখানি প্রভাব ফেলেছে আলোচনা করো।
রবীন্দ্র সাহিত্যধারায় একটি বিশেষ পর্বান্তর্গত রচনাগুলির মধ্যে রবীন্দ্র কবিমানসের যে পরিচয় পাওয়া যায়, সেই একই কবিমানস প্রায় সমান্তরালভাবে প্রকাশিত হয়েছে ‘ছিন্নপত্রে’র বেশ কিছু চিঠিতে।— তোমার পাঠ্যচিঠিগুলির আলোকে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।
‘বসুন্ধরা’, ‘সমুদ্রের প্রতি’ কবিতার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের লেখা বেশ কয়েকটি চিঠির প্রত্যক্ষ সংযোগ লক্ষ করা যায়। তোমার পাঠ্য চিঠিগুলি অবলম্বনে এ বিষয়টি আলোচনা করো।


বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি দুর্ভেয় আকর্ষণ যেমন ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলির অধিকাংশ পত্রের ছত্রে ছত্রে ধরা আছে—তেমন এই আকর্ষণ থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘বসুন্ধরা’, ‘সমুদ্রের প্রতি’ প্রভৃতি বিখ্যাত কবিতা। বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি এই রহস্যাবৃত আকর্ষণের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রমথনাথ বিশী ‘রবীন্দ্র সরণী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এ আকর্ষণ দুঞ্জেয় কেননা ইহার কারণ নির্দেশ সম্ভব নয়। ইহাই তাঁহার কবিত্বশক্তির মূলধন। ইহাকে স্বীকার করিয়া লইয়া অগ্রসর হইতে হইবে। বয়স ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই মূলধন স্ফীত হইয়া প্রচুর মুনাফা দেখাইয়াছে—তাহাই রবীন্দ্রসাহিত্য। আবার বয়স ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই জন্মগত মূল আকর্ষণ ক্রমে নিবিড় পরিচয় ও অবশেষে গভীর জীবনতত্ত্বে পরিণত হইয়াছি।

পদ্মাপারে জমিদারির কাজ দেখাশোনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘নির্জন-সজনে’র এক অদ্ভুত বৈচিত্র্যময় জীবন খুঁজে পেয়েছেন—যে জীবন কবিতার জীবন। ‘বসুন্ধরা’, ‘সমুদ্রের প্রতি’ রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কাব্যের বিশিষ্ট কবিতা। ‘সোনার তরী’ কাব্যের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা মানিনি, কতবার সমস্ত বৎসর ধরে পদ্মার আতিথ্য নিয়েছি—বৈশাখের খররৌদ্রতাপে শ্রাবণের মুষলধারাবর্ষণে। পরপারে ছিল ছায়াঘন পল্লির শ্যামশ্রী, এপারে ছিল বালুচরের পাণ্ডুবর্ণ জনহীনতা, মাঝখানে পদ্মার চলমান স্রোতের পটে বুলিয়ে চলেছে পাণ্ডুবর্ণ জনহীনতা, মাঝখানে পদ্মার চলমান স্রোতের পটে বুলিয়ে চলেছে দ্যুলোকের শিল্পী প্রহরে নানাবর্ণের আলোছায়ার তুলি। এইখানে নির্জন-সজরে নিত্যসংগ্রাম চলেছিল আমার জীবনে। অহরহ সুখ দুঃখের বাণী নিয়ে মানুষের জীবনধারার বিচিত্রকলরব এসে পৌঁছাচ্ছিল আমার হৃদয়ে। শিলাইদহের এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বিশ্বপ্রকৃতির সুর ও ভাষা চিনেছেন। প্রকৃতির নন্দনলোকে শোভা কবিকে নিয়ে গেছে অতীতে। কবি অনুভব করেছেন পৃথিবীর সঙ্গে গভীর এক নাড়ীর যোগ। আকাশের .গ্রহ-তারা-সূর্য-চন্দ্র-সূর্য থেকে শুরু করে পৃথিবীর সবকিছু তাঁর গভীর আত্মীয়। যুগে-যুগে কবি এই পৃথিবীতে এসেছেন এবং পৃথিবীর এই নিবিড় সৌন্দর্য অনুভব করেছেন। ৯ ডিসেম্বর ১৮৯২ তারিখে শিলাইদহ থেকে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “এই পৃথিবীটি আমার অনেক দিনকার এবং অনেক জন্মকার ভালোবাসার লোকের মতো আমার কাছে চিরকাল নতুন ; আমাদের দুজনকার মধ্যে একটা খুব গভীর এবং সুদূরব্যাপী চেনাশোনা আছে। আমি বেশ মনে করতে পারি, বহু যুগ পূর্বে যখন তরুণী পৃথিবী সমুদ্রস্নান থেকে সবে মাথা তুলে উঠে তখনকার নবীর সূর্যকে বন্দনা করছেন, তখন আমি এই পৃথিবীর নূতন মাটিতে কোথা থেকে এক প্রথম জীবনোচ্ছ্বাসে গাছ হয়ে পল্লবিত হয়ে উঠেছিলুম। তখন পৃথিবীতে জীবজন্তু কিছুই ছিল না, বৃহৎ সমুদ্র দিনরাত্রি দুলছে এবং অবোধ মাতার মতো আপনার নবজাত ক্ষুদ্র ভূমিকে মাঝে মাঝে উন্মুক্ত আলিঙ্গনে একেবারে আবৃত করে ফেলচে। তখন আমি এই পৃথিবীতে আমার সমস্ত সর্বাঙ্গ দিয়ে প্রথম সূর্যালোক পান করেছিলুম, নবশিশুর মতো একটা অন্ধজীবনের পুলকে নীলাম্বর তলে আন্দোলিত হয়ে উঠেছিলুম, এই আমার মাটির মাতাকে আমার সমস্ত শিকড়গুলি দিয়ে জড়িয়ে এর স্তন্যরস পান করেছিলুম। একটা মৃঢ় আনন্দে আমার ফুল ফুটত এবং নবপল্লব উদগত হত। যখন ঘনঘটা করে বর্ষার মেঘ উঠত তখন তার ঘনশ্যাম ছায়া আমার সমস্ত পল্লবকে একটি পরিচিত করতলের মতো স্পর্শ করত। তারপরেও নব নব যুগে এই পৃথিবীর মাটিতে আমি জন্মেছি। আমরা দুজনে একলা মুখোমুখি করে বসলেই আমাদের সেই বহুকালের পরিচয় যেন অল্পে অল্পে মনে পড়ে।”

‘সমুদ্রের প্রতি’ কবিতায় সমুদ্রের তীরে ধরিত্রীর শিশু সন্তান রূপে কবিকে আমরা দেখি সমুদ্রের বেলাভূমিতে সেখানে বসে কবি সমুদ্রের তরঙ্গধ্বনি শুনে চলেন। কবি সেই ধ্বনি হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করেন—“বোবার ইঙ্গিত ভাষা হেন আত্মীয়ের কাছে। কবি যখন ধরিত্রীর জঠরে ভ্রূণরূপে ছিলেন তখনকার কথাও মনে পড়ে কবির। কবি অনুভব করেন, সমুদ্রের অগাধ জলরাশি সরে গিয়ে যেমন নতুন নতুন মহাদেশ সৃষ্টি করেছে, তেমনই মানবহৃদয়ের অন্তরেও চলেছে অনবরত ভাঙা-গড়ার খেলা। সমুদ্র নাড়ীর টানে শিশুর মতন স্নেহ চুম্বন দান করে কবিকে। ‘রবীন্দ্র-সাহিত্য-পরিক্রমা’ গ্রন্থে উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিশ্ব-প্রকৃতির সহিত একাত্মতার অনুভূতি। এক চেতনা প্রথম বাষ্প-নীহারিকা, তরুলতা-সরীসৃপ, পশুপক্ষী প্রভৃতি একাত্মতার অনুভূতি। এক চেতনা প্রথম বাষ্ম-নীহারিকা, তরুলতা সরীসৃপ, পশুপক্ষী প্রভৃতি বিচিত্র অভিব্যক্তির স্তরের মধ্য দিয়া বর্তমান মানবজীবনে উদ্ভিন্ন হইয়াছে। একই প্রাণ জড় জগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণী জগতের মধ্যে বিকাশের স্তরে স্তরে তরঙ্গায়িত হইয়া চলিয়া আসিয়াছে। মানুষ একদিন তৃণ-লতা-ফল-পুষ্পের আনন্দ-চাঞ্চল্য, নদনদী-গিরি-সমুদ্র-আকাশের সৌন্দর্য ও সংগীত মনকে অত উতলা করে। কবি এই আবেগময় অনুভূতিতে কাব্যের ঐশ্বর্যদান করিয়াছেন। এই অনুভূতিই রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববোধের মূল প্রেরণা। বিশ্বের সমস্ত সৌন্দর্য ও আনন্দকে যে তিনি, ব্যক্তিগত অনুভূতির মধ্যে ধরিতে পারেন, তাহার কারণ, বিশ্বের সহিত তাঁহার একাত্মতা ও একদেহতত্ত্বের অনুভূতি প্রবল।” ‘সমুদ্রের প্রতি’ কবিতায় এই নিগূঢ় নাড়ীর টান, পৃথিবীর সঙ্গে তাঁর বহু পূর্ব জন্মের কথা ব্যক্ত হয়েছে—

‘মনে হয়, অন্তরের মাঝখানে 

নাড়ীতে যে-রক্তবহে, সে-ও যেন ওই ভাষা জানে, 

আর কিছু শেখে নাই। মনে হয়, যেন মনে পড়ে 

যখন বিলীনভাবে ছিনু ওই বিরাট জঠরে 

অজাত ভুবনভূণ-মাঝে, লক্ষকোটি বর্ষ ধরে 

ওই তব অবিশ্রাম কলতান অন্তরে অন্তরে 

মুদ্রিত হইয়া গেছে ; সেই জন্মপূর্বের স্মরণ, 

গর্ভস্থ পৃথিবী-‘পরে সেই নিত্য জীবনস্পন্দন 

তব মাতৃহৃদয়ের অতি ক্ষীণ আভাসের মতো 

জাগে সমস্ত শিরায়, শুনি যবে নেত্র করি নত 

বসি জনশূন্য তীরে ওই পুরাতন কলধ্বনি।

এই একই ভাব ব্যক্ত হয়েছে ‘ছিন্নপত্রে’র ৬৭ সংখ্যক চিঠিতে। চিঠিটি রচিত হয়েছে ৯ ডিসেম্বর ১৮৯২ সালে, কবিতাটি রচিত হয়েছে ১৭ চৈত্র ১২৯৯ সালে, এই একই রকমভাব পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের সুবিখ্যাত বসুন্ধরা কবিতাতেও। ‘বসুন্ধরা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ২৬ কার্তিক ১৩০০ সালে। ‘বসুন্ধরা’ কবিতায় কবি নিজেকে বসুন্ধরাই সন্তান রূপে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মৃত্তিকার মাঝে ব্যপ্ত হয়ে থাকতে চেয়েছেন। পৃথিবীর সংকীর্ণ কারাগারে তিনি বন্দি না থেকে সর্বত্র নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত কিছুর সঙ্গে কবি মিলতে চেয়েছেন। এই বসুন্ধরার সঙ্গে কবির বন্যবর্ষের পরিচয়। অতীতের জন্য কবির হৃদয়ে জাগে নিঃসীম বেদনা, পুরাতন সম্পর্কসূত্রে বসুন্ধরার বুকে ফিরে যেতে চান—

‘আমারে ফিরাহে লহো, অয়ি বসুন্ধরে, 

কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে 

বিপুল অঞ্চল তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী, 

তোমার মৃত্তিকা মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই; 

দিগ্বিদিকে আপনারে দিই বিস্তারিয়া 

বসন্তের আনন্দের মতো;

এই অনুভূতিই রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেছেন শিলাইদহ থেকে লেখা ২০ আগস্ট ১৮৯২ তারিখের অন্য এক পত্রে—“একসময়ে যখন আমি এই পৃথিবীর সঙ্গে এক হয়েছিলুম— যখন আমার উপর সবুজ ঘাস উঠত, পরতের আলো পড়ত, সূর্যকিরণে আমার সুদূরবিস্তৃত শ্যাম অঙ্গের প্রত্যেক রোমকূপ থেকে যৌবনের সুগন্ধি উত্তাপ উত্থিত হতে থাকত—আমি কত দূরদূরান্তর কত দেশদেশান্তরের জল স্থল পর্বত ব্যাপ্ত করে উজ্জ্বল আকাশের নীচে নিস্তব্ধভাবে শুয়ে পড়ে থাকতুম—তখন শরৎ সূর্যালোকে আমার বৃহৎ সর্বাঙ্গে যে একটি আনন্দরস, একটি জীবনীশক্তি, অত্যন্ত অব্যক্ত অর্ধচেতন এবং অত্যন্ত প্রকাণ্ডভাবে সঞ্চারিত হতে থাকত, তাই যেন খানিকটা মনে পড়ে। আমার এই যে মনের ভাব এ যেন এই প্রতিনিয়ত অঙ্কুরিত মুকুলিত পুলকিত সূর্যসনাথা আদিম পৃথিবীর ভাব। যেন আমার এই চেতনার প্রবাহ পৃথিবীর প্রত্যেক ঘাস এবং গাছের শিকড়ে শিরায় শিরায় ধীরে ধীরে প্রবাহিত হচ্ছে সমস্ত শস্যক্ষেত্র রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে এবং নারকেল গাছের প্রত্যেক পাতা জীবনের আবেগে থরথর করে কাঁপছে। এই পৃথিবীর উপর আমার যে একটি আন্তরিক আত্মীয় বৎসলতার ভাব আছে, ইচ্ছে করে সেটা ভালো করে প্রকাশ করতে—”।

আন্তরিক আত্মীয় বৎসলতা :

সমস্ত বিশ্বে কবি নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। গাছ-পালা-আকাশ-পশু-পাখি সব কিছুর সঙ্গে একটা নিকট আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়তে চেয়েছেন। মানুষ-পশু-পাখি, সব কিছুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নিয়েছে নব-মানবতাবাদ। এই পত্রে পৃথিবীর প্রতি কবি যে তাঁর গভীর অনুরাগের কথা ব্যক্ত করেছেন, তা রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কাব্য জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই পত্র লেখার কিছুদিন পরেই ১৪ কার্তিক ১২৯৯ সালে লেখেন ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতা। সেখানে ধরণির চিরকালীন নিয়ম ও স্পন্দনকে কাব্যময় ভাষায় প্রকাশ করেছেন। কবি যেমন পৃথিবীকে ভালোবাসেন—পৃথিবীও তেমন মানুষ, পশুপাখি থেকে শুরু করে ধূলিকণা পর্যন্ত সব কিছুকে ভালোবাসে। তথাপি সেই ভালোবাসা দিয়ে চিরন্তন করে কেউ কাউকে আটকে রাখতে পারে না—কেবল গভীর ইচ্ছাশক্তির কথাই সেখানে ব্যক্ত হয়। সমস্ত আকাশে বাতাসে দেখা যায় সেই দুঃখ মগ্নতার ভাব—

‘কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ, 

সমস্ত পৃথিবী। চলিতেছি যতদূর

শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর 

‘যেতে আমি দিব না তোমায়’। ধরণির 

প্রান্ত হতে নীলভ্রের সর্বপ্রান্ত তীর

ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে, 

‘যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব । সবে 

কহে ‘যেতে নাহি দিব’। তৃণ ক্ষুদ্রঅতি 

তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী 

কহিছেন প্রাণপণে ‘যেতে নাহি দিব’।… 

এ অনন্ত চারচরে স্বর্গমর্ত্য ছেয়ে 

সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে 

গভীর ক্রন্দন—’যেতে নাহি দিবি’। ‘হায়, 

তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। 

চলিতেছে এমনি অনাদি কাল হতে।

কেউ কাউকে ধরে রাখতে পারে না, তবু ভালোবাসার কমতি থাকে না। এই একই ভাব কবি ব্যক্ত করেছেন কালিগ্রাম থেকে লেখা ১৮৯১ সালের জানুয়ারি মাসের এক পত্রে— “আমাদের এই মাটির মা, আমাদের এই আপনাদের পৃথিবী, এর সোনার শস্যক্ষেত্রে এর স্নেহশালিনী নদীগুলির ধারে, এর সুখ দুঃখময় ভালোবাসার লোকালয়ের মধ্যে এই সমস্ত দরিদ্র মূর্ত হৃদয়ের অশ্রুর ধনগুলিকে কোলে করে এনে দিয়েছে। আমরা হতভাগারা তাদের রাখতে পারিনে, বাঁচাতে পারি নে, নানা অদৃশ্য প্রবল শক্তি এসে বুকের কাছ থেকে তাদের ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যায়, কিন্তু বেচারা পৃথিবীর যতদূর সাধ্য তা সে করেছে। আমি এই পৃথিবীকে ভারি ভালোবাসি। এর মুখে ভারি একটি সুদূরব্যাপী বিষাদ লেগে আছে—যেন এর মনে মনে আছে, আমি দেবতার মেয়ে, কিন্তু দেবতার ক্ষমতা আমার নেই। আমি ভালোবাসি, কিন্তু রক্ষা করতে পারি নে। আরম্ভ করি, সম্পূর্ণ করতে পারিনে। জন্ম দিই, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারি নে।”