কবি সুকান্ত বাংলা কাব্যে এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের কবিদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। কিন্তু তার কবিত্ব শক্তির দীপ্তিতে সমকালের এবং পরবর্তীকালের পাঠক-সমালোচকেরা হন বিস্মিত।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ও কর্মজীবন:
কবির জন্ম মাতুলালয়ে, ১৯২৬ খ্রীস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট, কলকাতার কালীঘাটের ৪২ নং মহিম হালদার স্ট্রীটে দাদামশাই সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের বাড়ির দোতালায় ছোট্ট একটি ঘরে। পিতা—নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য; মা—সুনীতি দেবী। নিবারণচন্দ্রের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ায়। সেখান থেকে তার পূর্বপুরুষেরা ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় এসে বেলেঘাটা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। কবির শৈশব কাটে বাগবাজারের নিবেদিতা লেনের একটি বাড়িতে একান্নবর্তী সংসারে। সাহিত্যিক মণীন্দ্রলাল বসুর ‘সুকান্ত’ গল্প অবলম্বনে জ্যেঠতুতো দিদি রানীদি কবির নামকরণ করেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় কমলা বিদ্যামন্দিরে হয় সুকান্তের শিক্ষার সূচনা। এই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রদের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়’-এ প্রথম হাসির গল্প প্রকাশ, তারপরে বিজন ভট্টাচার্যের ‘শিখা’ পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয় ‘বিবেকানন্দের জীবনী’। ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার সময় সুকান্তের মা মারা যান।
মাতৃহারা লক্ষ্মীশ্রী-হীন সংসারে সুকান্তের জীবনও ছন্নছাড়া হয়ে ওঠে। বাবা ও জ্যাঠামশায়ের যজমানী ও বইয়ের দোকানের আয় ছিল, কিন্তু তবু দারিদ্র্য হয়ে উঠেছিল কবিজীবনের নিত্যসঙ্গী। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রেরণা, গ্রন্থপাঠ, বন্ধু অরুণাচল বসুর মৈত্রী ও তার মা কবি সরলা বসুর স্নেহ সুকান্তের কবি প্রতিভা বিকাশের সহায়ক উপাদান হয়ে ওঠে।
১৯৪১ খ্রীস্টাব্দে ‘গল্পদাদুর আসরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি এবং রবীন্দ্রপ্রয়াণ উপলক্ষে কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সুকান্তের সুপরিচিতির সূত্রপাত। ১৯৪১-৪২ খ্রীস্টাব্দে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে তিনি মার্কসবাদী চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে উঠেন। ১৩৫০-এর মন্বস্তরে দুর্ভিক্ষ পীড়িত নরনারীর সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৩৫১-তে মন্বস্তরের পরিপ্রেক্ষিতে ‘আকাল’ নামে একটি কবিতা সঙ্কলন সম্পাদনা করেন। এই সময়ে তাঁকে বাংলাদেশে কিশোর সংগঠন গড়ে তোলা এবং ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার কিশোর সভায় বিভাগীয় সম্পাদকের ভূমিকায়ও দেখা যায়।
১৯৪৫ খ্রীস্টাব্দে সুকান্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দের মাঝামাঝি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য রেড এড কিওর হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বছরে ১৭ই সেপ্টেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বিপ্লবীরা আসেন হাসপাতালে বিপ্লবী কিশোর কবিকে অভিনন্দন জানাতে। সেখান থেকে তিনি যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতালের পেয়িং বেডে স্থানান্তরিত হন। শেষে ১৩৫৪ বঙ্গাব্দের ২৯শে বৈশাখ (১৯৪৭ খ্রীঃ ১৩ই মে) এই দীপ্তিমান নক্ষত্রটি অকালে নির্বাপিত হয়। তাঁর ক্ষয়রোগে ভুগে অকাল মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন—
“কবি ছাড়া আমাদের জন্ম বৃথা।
বুলেটের রক্তিম পঞ্চমে কে চিরবে
ঘাতকের মিথ্যা আকাশ?
কে গাইবে জয়গান?
বসন্তে কোকিল কেশে কেশে রক্ত তুলবে
সে কিসের বসন্ত?”
সুকান্ত ভট্টাচার্যের পট-পরিবেশ:
সুকান্তের কাব্য রচনার পট-পরিবেশ ছিল শোষণে-বঞ্চনায় যন্ত্রণাময়, বিক্ষোভে-বিদ্রোহে-দাঙ্গায় মন্বন্তরে উত্তাল, দগ্ধময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রোধানলে পৃথিবীর অবস্থা তখন ভয়াবহ। ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর জন্য খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছিল দুর্ভিক্ষ। পঞ্চাশের মন্বন্তরে মারা যায় প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ। অন্যদিকে ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দের আগস্টে হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গায় নিহত হয় বহু লোক। বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় অত্যাচার ও ফ্যাসিস্ট শক্তির আগ্রাসন নীতি, কলকাতায় বোমা পড়ার ভয়ে মানুষজনের পালিয়ে যাওয়া, যুদ্ধের সুযোগে কালোবাজারী, মজুতদারী ইত্যাদি ঘটনাসমূহ কবির আগোচরে ছিল না। বার এর পাশাপাশি ধনী ও বণিক সমাজের অত্যাচারে জর্জরিত দরিদ্রজনের জীবন-যন্ত্রণা, ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় সহস্র প্রাণের অবলুপ্তি এই তরুণ কবিকে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদে মুখর করে তোলে। সাম্যবাদের মধ্য দিয়ে তিনি দেখেছিলেন বিশ্বাসের দিগন্ত ছোঁওয়া ভালোবাসার ভূমি। সমালোচকের ভাষায়, “যুগ সন্ধিকালের কবি সুকান্ত। কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হবার আগেই যুদ্ধ, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, ঝড়, একের পর এক এসে তার মনকে মথিত করে গেছে। ঘটনার দ্রুততায় এবং ঘাত-প্রতিঘাতে অনভিজ্ঞ সুকান্তের পক্ষে দিশেহারা হয়ে পড়াই ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু কবি হিসাবে তার সৌভাগ্য, তিনি সেই অতীব দুর্দিনেও বিশ্বাসের পেয়েছিলেন দৃঢ়ভূমি। লেখকের জীবনে যে কোন একটি বিশ্বাসই দুর্লভ কিন্তু অপরিহার্য, সমসাময়িক যুগের সঙ্গে তাল রেখে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে মাথা তুলে উঠে দাঁড়াতে সাম্যবাদ যে ভরসা জুগিয়েছিল, তার মূল্য সুকাস্তর কবি-জীবনে তাই অপরিসীম।” মার্কসীয় জীবন-দর্শন সামাজিক শ্রেণী-সংঘর্ষের মাধ্যমে তাঁর সামনে শোষিত শ্রমিক-কৃষক বুদ্ধিজীবীর সংহতির ও সংগ্রামমুখিনতার ঐতিহাসিক পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাসমূহ
‘ছাড়পত্র’ (বঙ্গাব্দ ১৩৫৪/১৯৪৭ খ্রীঃ), ‘পূর্বাভাস’ (বঙ্গাব্দ ১৩৫৭/১৯৫০ খ্রীঃ), ‘ঘুম নেই’ (১৯৫০)।
ছড়া : ‘মিঠে কড়া’ (১৯৫২)।
গ্রন্থ-সম্পাদনা : ‘আকাল’ (১৯৪৩)।
নাটক-সংকলন : ‘অভিযান’, ‘সূর্যপ্রণাম’, ‘দেবতাদের ভয়’, ‘রাখাল ছেলে’।
ছোটগল্প ও গল্পানুবাদ : ‘হরতাল’, ‘লেজের কাহিনী’, ‘ষাঁড়-গাধা-ছাগলের কথা’ (ভি. বিয়াঙ্কির ‘Tales’ গল্পের অনুবাদ), ‘পত্রগুচ্ছ’।
বাংলা কবিতার জগতে সমাজনিষ্ঠ, স্বদেশ ও ইতিহাস-সচেতন কবির আবির্ভাব অপ্রত্যাশিত কোন ব্যাপার নয়। তবে তাঁরা সকলেই ছিলেন পরিণত বয়স্ক। কিন্তু সুকান্ত মাত্র বাইশ বছরের অতি সংক্ষিপ্ত জীবন-পরিধির মধ্যে যে সমাজনিষ্ঠ কবিমনের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন তা অভূতপূর্ব। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় তাঁর সমস্ত কাব্য। শুধুমাত্র প্রথম কাব্য ‘ছাড়পত্র’-এর প্রকাশের সংবাদটুকু জেনে গিয়েছিলেন। তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যের প্রথম কবিতায় আছে নতুনকে চেনার ধৈর্য ও সহানুভূতি, মুগ্ধ আবেগ নয় নবজাতকের কাছে বলিষ্ঠ প্রতিশ্রুতি—
“আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয় পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
………..
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
‘খবর’ কবিতায় আছে কিভাবে খবর তৈরি হয়। “ভাষা থেকে ভাষান্তর” করে কিভাবে যুগ থেকে যুগান্তরে ব্যাপ্ত হয় বিভিন্ন রকমের সংবাদ তার ইঙ্গিত। শেষে ব্যক্ত করেছেন বিশ্বব্যাপী সর্বহারা জনসমাজের বন্ধনমুক্তির বার্তা—
“কিন্তু মনে রেখো তোমাদের আগেই খবর পাই
মধ্যরাত্রির অন্ধকারে
তোমাদের তন্ত্রার অগোচরেও।
………….
আমার হৃদযন্ত্রে ঘা লেগে বেজে উঠেছে
কয়েকটি কথা-
পৃথিবী মুক্ত-জনগণ চূড়ান্ত সংগ্রামে জয়ী।”
এই কাব্যের ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ কবিতায় দেখা যায় যেমন তার রবীন্দ্র-ঐতিহ্যের প্রতি কৃতজ্ঞ স্বীকৃতি, তেমনি সমকালের দুর্ভিক্ষ অত্যাচারের বাস্তব পরিস্থিতিতে সংগ্রামের আহ্বান ও পরিবর্তিত ভাবনা—
“এখনো প্রাণের স্তরে স্তরে,
তোমার দানের মাটি সোনার ফসল তুলে ধরে।
এখনো স্বগত ভাবাবেগে,
মনের গভীর অন্ধকারে তোমার সৃষ্টিরা থাকে জেগে।”
কিন্তু বর্তমানের নিরন্ন পরিবেশে আজ —
“আমি এক দুর্ভিক্ষের কবি,
প্রত্যহ দুঃস্বপ্ন দেখি মৃত্যুর সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।”
এহেন অবস্থায় শাস্তির ললিত বাণী না শুনে কবি লক্ষ্য করেছেন—
“তাই আমি চেয়ে দেখি প্রতিজ্ঞা প্রস্তুত ঘরে ঘরে।
দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে ।”
রাশিয়ার বিপ্লবী চেতনা ও তার কেন্দ্রীয় প্রেরণা লেনিনের স্মরণে কবিচিত্ত নন্দিত ও স্পন্দিত হয়েছে বারবার। তার কারণ—
“লেনিন ভেঙেছে রুশে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন প্রথম প্রতিবাদ।
…………..
ইতালী, জার্মান, জাপ, ইংলন্ড, আমেরিকা, চীন
যেখানেই মুক্তির যুদ্ধ সেখানেই কমরেড লেনিন।”
এমন কি, বুভুক্ষা-অনৈক্য-সন্দেহ, অদৃষ্ট-লাঞ্ছিত ভারতবর্ষে যদিও আজ,—
“বিদেশী শৃঙ্খলে পিষ্ট, শ্বাস তার ক্রমাগত ক্ষীণ
এখানেও আয়োজন পূর্ণ করে নিঃশব্দে লেনিন।”
কেবল লেনিন নয়, জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ স্বদেশপ্রেমিক সুকান্ত মহাত্মাজীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশেও ছিলেন অকুণ্ঠ—
“তাইতো এখানে আজ ঘনিষ্ঠ স্বপ্নের কাছাকাছি,
মনে হয় শুধু তোমারই মধ্যে আমরা যে বেঁচে আছি-
তোমাকে পেয়েছি অনেক মৃত্যু উত্তরণের শেষে,
তোমাকে গড়ব প্রাচীর, ধ্বংস-বিকীর্ণ এই দেশে।
দিক্দিগন্তে প্রসারিত হাতে তুমি যে পাঠালে ডাক,
তাইতো আজকে গ্রামে ও নগরে স্পন্দিত লাখে লাখ ॥”
সাম্যবাদী কবির কণ্ঠে এই গান্ধী-বন্দনা শুধু অভিনব নয়, সমকালের শিক্ষাও বটে।
‘ছাড়পত্র’ কাব্যের বেশ কয়েকটি কবিতা চিরচেনা তুচ্ছ উপকরণে গড়া, কিন্তু বিপ্লবের অগ্নিবর্ণে রাঙা; যেমন— ‘চারাগাছ’, ‘সিঁড়ি’, ‘কলম’, ‘সিগারেট’, ‘দেশলাই কাঠি’ ইত্যাদি। এইসব কবিতায় বিদ্রোহের বক্তব্যটি সংকেতের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত; যেমন—
“ছোট ছোট চারাগাছ-
নিঃশব্দে হাওয়ায় দোলে, কান পেতে শোনে :
প্রত্যেক ইটের নীচে ঢাকা বহু গোপন কাহিনী
রক্তের, ঘামের আর চোখের জলের।
তাইতো অবাক আমি, দেখি যত অশ্বত্থ চারায়
গোপনে বিদ্রোহ জমে, জমে দেহে শক্তির বারুদ;
প্রাসাদ-বিদীর্ণ-করা বন্যা আসে শিকড়ে শিকড়ে।”
(“চারাগাছ”, ‘ছাড়পত্র’)
অথবা ‘দেশলাই কাঠি’র সতর্কবাণী—
‘আমরা বন্দী থাকব না তোমাদের পকেটে পকেটে,
আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব
শহরে, গঞ্জে, গ্রামে—দিগন্ত থেকে দিগন্তে।”
(‘দেশলাই কাঠি’, ছাড়পত্র)
আবার বঞ্চিত ক্ষুধিত মানুষকে দয়া দেখিয়ে কিভাবে রক্ষক ভক্ষক হয়ে ওঠে তার গভীর মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি ফুটে উঠেছে ‘একটি মোরগের কাহিনী’তে—
“…ছোট, মোরগ ঘাড় উঁচু করে স্বপ্ন দেখে-
‘প্রাসাদের ভেতর রাশি রাশি খাবার’!
তারপর সত্যিই সে একদিন প্রাসাদে ঢুকতে পেল,
একেবারে সোজা চলে এল
ধপে সাদা দামী কাপড়ে ঢাকা খাবার টেবিলে ;
অবশ্য খাবার খেতে নয়—
খাবার হিসেবে ৷”
এই কবিতার চিত্রময় ভাব, তির্যক ব্যঙ্গ আর স্তব্ধবাক্ করুণা শোকের প্রতি ঘৃণা জাগায় নির্মমভাবে।
এই কাব্যের ‘বোধন’ কবিতার মধ্যে আছে বিপ্লবী চেতনার সর্ববিধ প্রকাশ; যেমন প্রথমভাগে আছে জনগণের প্রতি সহানুভূতি, দ্বিতীয় ভাগে আছে জনগণের জন্য সংঘবদ্ধ সংগ্রাম, শেষে আছে কল্যাণময় আদর্শে ভবিষ্যৎ জনজীবন সংগঠনের প্রচেষ্টা—সর্বহারা মানুষের সংহতিতে কবির গভীর আস্থা ও আশ্বাস—
“শোষক আর শাসকের নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে
একত্রিত হোক আমাদের সংহতি।”
(“বোধন”, ‘ছাড়পত্র)
এই সচেতন কাব্যনিষ্ঠাই সুকান্তকে চিহ্নিত করেছে শিল্প সফল কবিরূপে। তাই তাঁর স্মরণে বর্ষীয়ান কবি বিষ্ণু দে বলেছিলেন : “এইভাবেই সে মিশে গেছে বৃহতের দলে তার নচিকেত কবি-স্বভাবের স্বচ্ছ আগুনে।”
Leave a comment