ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানত রামমোহনের বিরোধী পক্ষরূপেই সমধিক পরিচিত। কিন্তু এই পরিচয় সম্পূর্ণ নয়। সুদক্ষ সাংবাদিক, পত্রিকা সম্পাদক, রঙ্গব্যঙ্গ রচয়িতা, হিন্দুধর্মের প্রাচীন আদর্শরক্ষার অক্লান্ত সৈনিক হয়েও এই কৃতী পুরুষ প্রধানত যেন রক্ষণশীলতার দায়েই দণ্ডিত। অথচ রামমোহন-সমকালীন লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি যথেষ্ট পরিমাণে কথাসাহিত্যের জগৎ সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। সাধারণ পাঠক-বিনোদন এবং সমাজচিত্র অঙ্কনে সমানভাবে উৎসাহী ছিলেন। সর্বোপরি সমকালের বিবরণদানেও তিনি পারদর্শী লেখক রূপে স্বীকৃত।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম-শিক্ষা-কর্মজীবন:

ভবানীচরণের পুত্র রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় “ধর্ম্মসভার অতীত সম্পাদক বাবু ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের জীবনচরিত দৃষ্টশ্রুত পবিত্র চরিত্র বিবরণ” (দ্রষ্টব্য : ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়,’ ‘সাহিত্য-সাধক চরিতমালা, প্রথম খণ্ড, পঞ্চম সংস্করণ ১৩৬৬, পৃষ্ঠা ১৮) প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের সাক্ষ্য অনুযায়ী, “১১৯৪ সালের আষাঢ়ী পৌর্ণমাসীতে’ কলকাতায় ভবানীচরণের জন্ম হয়। পিতা, রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় টাকশালের কর্মচারী ছিলেন। এঁদের আদি নিবাস ছিল পরগনা উড়ার অন্তঃপাতি নারায়ণপুর গ্রাম। পরে কলকাতার কলুটোলায় নতুন বাড়িতে আসার পর ভবানীচরণের শিক্ষা শুরু হয়। তিনি বাংলা-ফার্সী-ইংরেজীতে পারদর্শিতা অর্জন করে বিভিন্ন ইংরেজ রাজপুরুষের অধীনে কর্মগ্রহণ করেন। জে. ডক্টে. স্যার উইলিয়ম কার, স্যার চার্লস ডাইলি, বিশপ মিডিলটন, স্যার হেনরি ব্লাপেট, লর্ড বিশপ হেবার প্রমুখ বিভিন্ন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির অধীনে যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে চাকুরী করেন। খ্যাতনামা সাংবাদিক ভবানীচরণের পত্রিকা সম্পাদনার সূচনা হয় ‘সম্বাদ কৌমুদী’র (৪.১২.১৮২১) পাতায়। এই সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রথম তেরোটি সংখ্যা প্রকাশের পর “অংশীগণের সহিত ধৰ্ম্ম বিষয়ে ঐক্যমত্য না হওয়ায়” (সা. স. চ.’ ১ম খণ্ড পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৯) তিনি ‘সম্বাদ কৌমুদী’র সংশ্রব ত্যাগ করে কলুটোলা থেকে ‘সমাচারচন্দ্রিকা’ (৫.৩.১৮২২) পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার নেতৃত্বে এই পত্রিকার গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৮২৯ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাসের মধ্যে এটি দ্বি-সাপ্তাহিকে (অর্থাৎ সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হয়) পরিণত হয়। স্বভাবতই সেই যুগে এই পত্রিকা একটি বিশিষ্ট বাংলা সংবাদপত্র হয়ে ওঠে।

সাংবাদিক রূপেই ভবানীচরণের প্রথম আত্মপ্রকাশ। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন রামমোহনের বিরোধী নয়, সহযোগী। শ্রীরামপুর মিশনারীরা ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকায় হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ায়। প্রতিবাদে ১৮২১ খ্রীস্টাব্দে ভবানীচরণ এবং রামমোহনের প্রবর্তনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকা। হিন্দু সমাজের নায়ক তারাচঁাদ দত্তও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সহমরণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিমত প্রকাশে রামমোহনের সঙ্গে তাঁর মতান্তর হয়। ভবানীচরণ ‘সম্বাদ-কৌমুদী’ পত্রিকার সংশ্রব ছেড়ে দিয়ে ১৮২২ খ্রীস্টাব্দে ‘সমাচারচন্দ্রিকা’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। কালক্রমে, এই পত্রিকা হয়ে ওঠে রক্ষণশীল দলের প্রধান মুখপত্র। আবার কেবল পত্রিকা প্রকাশ নয়, রামমোহনের ‘আত্মীয়সভা’র বিপরীত পক্ষরূপে ভবানীচরণ সনাতন হিন্দুধর্ম ও সদাচারের রক্ষাকল্পে রাধাকান্ত দেব, তারাচাদ দত্ত প্রমুখের সহায়তায় ‘ধর্মসভা’ (১৮৩০ খ্ৰীঃ ১৭ই জানুয়ারী) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সভা ছিল রামমোহনের ব্রহ্মবাদী ভাবনার প্রতিপক্ষস্বরূপ। এই প্রতিপক্ষ মনোভাব প্রগতির প্রতিক্রিয়ায় দেখা দেয়নি। ঐতিহাসিকদ্বয়ের বিশ্লেষণে : “সহমরণ-সূত্রেই ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রের অন্যান্যরা রামমোহনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে নতুন করে হিন্দুসমাজের এক মুখপত্র (সমাচার-চন্দ্রিকা) প্রকাশ করেছিলেন। তারা শুধুই প্রতিক্রিয়াশীল ভাবলে ভুল হবে। তাঁদের মধ্যেও আত্মসমীক্ষার আয়োজন জেগেছিল। ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রক্ষণশীল ব্যক্তিটিই গীতা, মনু, ভাগবত ইত্যাদি নিজ ব্যয়ে মুদ্রিত করেছিলেন সনাতন শাস্ত্রের প্রতি এবং স্বকীয় ঐশ্বর্যের প্রতি স্বদেশীয়দের দৃষ্টি আক করবার উদ্দেশ্যে। তাঁদের স্বধে অচ্যুত থাকার সংকল্প আত্মরক্ষার প্রয়োজনে, কিন্তু তার মধ্যে জাতীয়তাবোধেরও প্রথম আভাস জেগেছিল” (দ্রষ্টব্যঃ “কালান্তর”, “বাংলা সাহিত্যের রেখালেখ্য’, আলোকরঞ্জন দাসগুপ্ত ও দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৭১)। সুদর্শন, দীর্ঘদেহী, খ্যাতনামা সাংবাদিক ভবানীচরণের ইংরেজী ভাষাজ্ঞানও নিন্দনীয় ছিল না। বিশপ হেবার তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন : “a tall fine-looking man… speaking good English” (উদ্ধৃত, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যসাধক চরিতমালা’ (৪), ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১১)। সারা দেশে অবৈতনিক শিক্ষা এবং স্ত্রী-শিক্ষা প্রসারের দাবি তাঁর পত্রিকার মধ্যেই প্রথম উচ্চারিত হয়।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাসমূহ:

(ক) গদ্যরচনা : ‘বাবুর উপাখ্যান’, শৌকিন বাবু’, ‘বৃদ্ধের বিবাহ’, ‘ব্রাহ্মণপণ্ডিত’, ‘বৈষ্ণব’ ও ‘বৈদ্যসম্বাদ’ (১৮২১-২২ খ্রীস্টাব্দে ‘সমাচারদর্পণ’ পত্রিকায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়)। ‘কলিকাতা কমলালয়’ (১৮২৩), ‘হিতোপদেশ’ (১৮২৩), ‘নববাবুবিলাস’ (১৮২৫), ‘নববিবিবিলাস’ (১৮৩১), ‘শ্রীশ্রী গয়াতীর্থ বিস্তার’ (১৮৩১), ‘আশ্চর্য্য উপাখ্যান’ (১৮৩৫), ‘পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা’ (১৮৪৪)।

(খ) পদ্যরচনা : ‘দূতীবিলাস’ (১৮২৫)।

(গ) প্রাচীন গ্রন্থ সম্পাদনা : ‘হাস্যার্ণব’ (জগদীশ্বর রচিত) গ্রন্থের একটি বিশিষ্ট সংস্করণ প্রকাশ ( খুব সম্ভবত উনিশ শতকের তৃতীয় দশক), ‘শ্রীমদ্ভাগবত’ (১৮৩০), ‘প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটক’ (১৮৩৩), ‘মনুসংহিতা’ (১৮৩৩), “ঊনবিংশ পৃষ্ঠা সংহিতা’ (১৮৩৩৪), ‘শ্রীভাগবদ্‌গীতা’ (১৮৩৫), ‘রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্যকৃত অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব নব্য স্মৃতি’ (১৮৪৮ মুদ্রণ শেষ?)।

কলিকাতা কমলালয় এবং নববাবুবিলাস : ভবানীচরণের রচনাগুলি শহর কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ভদ্রসমাজের তথা নবজাগ্রত হিন্দু মধ্যবিত্ত জীবনের এক একটি লিপিচিত্র। সরস ব্যঙ্গে সেই সামাজিক পরিচয়টি লিপিবদ্ধ। ব্যঙ্গধর্মী হলেও এখান থেকেই বাংলা সাহিত্যে ভাবধর্মী মৌলিক রচনার সূচনা হয়। সমালোচকের ভাষায়, “যে দুই একটি মৌলিক এবং ভাবধর্মী রচনা এ যুগে প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে দুই-একটি দিগন্তে জলদর্চি রেখার মতো ভাবের সাহিত্যের (literature of power or creative literature) আগমন সম্ভাবনা আভাসিত করেছিল। ইংরেজী সাহিত্যের বাস্তবতা (social satire) অনুসরণ করে বাংলা গদ্যে ভাবের সাহিত্যের প্রথম চরণধ্বনি শোনা গিয়েছিল ভবানীচরণের ‘নববাবুবিলাস’ এবং ‘কলিকাতা কমলালয়’-এর মধ্যে” (দ্রষ্টব্য : ‘উনিশ শতকের বাংলা গদ্য’, অপূর্বকুমার রায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, জুলাই ১৮৮৯, পৃষ্ঠা ১৪)। ‘কলিকাতা কমলালয়’ গ্রন্থের বিষয় প্রশ্নোত্তরচ্ছলে কলকাতার রীতিবর্ণনা। ইংরেজী শিক্ষা ও ভাবধারার প্রভাবে, ‘ইয়ং বেঙ্গল’দের উচ্ছৃঙ্খলতা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে এখানে কলকাতার সমকালীন জীবনযাত্রার দৃশ্য উদ্‌ঘাটিত। পরবর্তী গ্রন্থ ‘নববাবুবিলাস’ প্রমথনাথ শৰ্ম্মণ ছদ্মনামে লেখা হয়। এখানে আছে কলকাতার বাবুদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের পরিচয়। চারটি অধ্যায় জুড়ে আছে বর্ণনা; যথা ‘অঙ্কুরখণ্ড’, ‘পল্লবখণ্ড’, ‘কুসুমখণ্ড’, ‘ফলখণ্ড’। ১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দে রেভারেন্ড জেমস লঙ তাঁর ‘Descriptive Catalogue’-এ এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব উল্লেখ করে লিখেছিলেন : “One of the ablest satires on the Calcutta Babu as he was 30 years ago.” গ্রন্থের মধ্যে বাস্তববাদিতা, অসঙ্গতিময় সমাজচিত্র অঙ্কনের সৎসাহস, সরস ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী এবং নৈর্ব্যক্তিক মনোভাব বাংলা কথাসাহিত্যে উপন্যাস সৃষ্টির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল।

‘নববাবুবিলাস’ গ্রন্থে নায়ক কলকাতার ধনী অথচ অশিক্ষিত ভদ্রসস্তান। সেকালের ধনী ব্যক্তিদের আচার-ব্যবহার ও নৈতিক চরিত্র সংশোধনের জন্যই গ্রন্থটি লেখা হয়। এই গ্রন্থটি লেখার পরেই “The Friend of India’ পত্রিকায় এর আলোচনা ও পরিচয় প্রকাশিত হয় : “It is a satirical view of the education and habits of the rich, and more especially of those families which have very recently acquired wealth and risen into notice. The character of the work, as well as its allusions and similes, are purely native, and this imparts a value to its superior to that which could be attached to a similar representation from a European pen. The knowledge of the author respecting the subject he handles, must necessarily be more correct than that which a foreigner could acquire, and his descriptions my therefore be received with great confidence. Though the work is highly satirical, and though some of its strokes of ridicule may be too deeply touched, we cannot venture to pronounce it a caricature. Every opportunity we have enjoy of its strokes of ridicule may be too deeply touched. We cannot venture to pronounce it a caricature, Every opportunity we have enjoyed of examining the subject had confirmed us in its justness” (উদ্ধৃত, সাহিত্য সাধক চরিতমালা’, ১ম খণ্ড, পূর্বোক্ত পৃষ্ঠা) বইটির বেশ কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘সম্বাদ প্রভাকরে’র (১১.৭.১৮৫৭) বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, গ্রন্থটি পরে নাটকে রূপান্তরিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, ‘কলিকাতা কমলালয়’তে শহর কলকাতার সমাজ, ‘নববাবুবিলাসে’ কলকাতা শহরের বাবু জীবনের বিবরণ লেখকের সমকালীন অভিজ্ঞতায় পরিবেশিত হয়। প্রথমটি যেমন ‘আলালে’র পূর্বরূপ, তেমনি দ্বিতীয়টি ‘হুতোমের’ প্রাথমিক প্রকাশ। সেই অর্থে কেবল ‘উপন্যাস’ নয়, এই গ্রন্থদ্বয় থেকে বাংলা রম্যরচনারও সূত্রপাত হয়েছিল বলা যায়। এই প্রসঙ্গে সর্বজনমান্য ঐতিহাসিক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত স্মরণযোগ্য – “বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস আসিয়াছে প্রধানতঃ সমাজের ব্যঙ্গচিত্রের সম্প্রসারণে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ‘নববাবুবিলাস’ ও ষষ্ঠ ও সপ্তম দশকে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ ও ‘হুতোম প্যাচার নকশা’ ভাবী উপন্যাসের পূর্বাভাসরূপে দেখা দিল” (‘বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা’ ১৯৫৩, পৃষ্ঠা ৪৮)। বস্তুত, এইভাবেই বাংলা কথাসাহিত্যের প্রথম যুগে নতুন গড়ে ওঠা শহর কলকাতার মধ্যবিত্ত জীবন, তার ফাঁপা আভিজাত্য ও রুচি-বিকৃতি সহৃদয় বাস্তবতার সঙ্গে বর্ণিত হল। সেই বর্ণনায় সামাজিক চেতনার উদ্বোধন এবং সহজ স্বচ্ছ ভাষার নমুনা দেখা গেল। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের লেখক গোষ্ঠী, (ব্যতিক্রম মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার) এবং রামমোহনের নীরস কষ্টপাঠ্য রচনারীতির যুগে এই গদ্য কম সুবোধ্য নয়; যেমনঃ “বাবুর অনুগত খুড়া কিংবা অন্য প্রাচীন কুটুম্ব আর দাস দাসীর প্রতি যদি রাগ হয় তবে সেই প্রকার ইংরাজী ঘুষা মারেন এবং কহেন যে হামারা পিটন লে আও এই প্রকার ভয়ানক শব্দ করেন তাহাতে ঐ দীন দুঃখীরা পলায়ন করে। বাবু সেইসময় আপন মনে২ পুরুষার্থ বিবেচনা করেন”

নববিবিবিলাস ও দূতীবিলাস : ভবানীচরণের অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘নববিবিবিলাস’ ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক বলেছেন : “যদ্যপি নববাবুবিলাসে নব বাবুদিগের স্বভাব সুপ্রকাশ আছে, কিন্তু যে গ্রন্থের ফলখণ্ডে লিখিত ফলের প্রধান মূল বাবুদিগের বিবি, সেই বিবিরূপ প্রধান মূলের অঙ্কুরবিধি শেষ ফল তাহাতে সবিশেষ ব্যক্ত হয় নাই; এ নিমিত্তে তপ্রকাশে, প্রয়াসপূর্বক নববিবিবিলাস নামক এই গ্রন্থ রচনা করিলাম।”

তার ‘দূতীবিলাস’ গ্রন্থটি কবিতায় লেখা“সুকোমল পয়রাদি নানাছন্দ রচিত… আদিরস ভক্তিরস ঘটিত… সুরসিক রসদায়ক পুস্তক।” ‘আশ্চর্য উপাখ্যান’ যশোহর, নড়াইলের জমিদার কালীশঙ্কর রায়ের কীর্তিকাহিনী পয়ার ছন্দে বর্ণিত। ‘পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা’ শ্রীক্ষেত্রধামের বিবরণ। সংবাদপত্রের অভিজ্ঞতায় ভাষায় ইংরেজী-বাংলা-হিন্দীর অসঙ্কোচ মিশ্রণে কথাসাহিত্যের জাতিভেদমুক্ত জগতে ভবানীচরণ সহজে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। সেই পদচিহ্ন দেখে পরবর্তী কথাকারেরাও সাহস করে এগিয়ে এসেছিলেন। এই এগিয়ে আসার মধ্যেই ছিল অনাবিষ্কৃত জগতকে জানার আনন্দ।