সমগ্র গৌড়বঙ্গের ইতিহাস অনুধাবন করলে দেখা যায় যে হিউয়েন-এর ভারত আগমনকাল থেকে এখানে ধর্মীয় ও সামাজিক ইতিহাসের যে ধারা বর্তমান ছিল, তা নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জোয়ার-ভাটায় আঠারো শতকে সম্পূর্ণ অভিনবভাবে শেষবারের মত মোেড় ফিরেছে। এই নবচেতনার প্রথম সার্থক রূপকার কবি রামপ্রসাদ-উনিশ শতকের নবজাগরণের প্রকাশ ঘটেছে এই নবচেতনার সৃষ্টিধর্মী গতিশীলতায়।

(১) রামপ্রসাদের পরিচয় সমস্যা :

সাধক কবি রামপ্রসাদ হালিশহরের অধিবাসী এবং নদীয়াধিপতি কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ছিলেন- –এ তথ্য সর্বজনবিদিত। তার জন্মকাল আনুমানিক ১৭২০ খ্রীঃ। পিতার নাম রাম রাম সেন রামপ্রসাদেরও দুই পুত্র রামদুলাল ও রামমোহন এবং দুই কন্যা পরমেশ্বরী ও জগদীশ্বরী। প্রথম জীবনে তিনি সম্ভবত কলিকাতার কোনো এক ধনী-গৃহে খাতা লিখতেন; স্বভাবকবি বোধ হয় মাঝে মাঝেই ভক্তিমূলক গানও খাতার কোণায় লিখে রাখতেন। একদিন তার নিয়োগকর্তা হিসেবের খাতায় পেলেন নিম্নোক্ত গান——“আমায় দে মা তবিলদারি। কর্তা তখন তাকে কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে একটি মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা ক’রে দেন। কৃষ্ণনগরের মহারাজ তার কবিত্বশক্তির পরিচয়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ১৪ বিঘা নিষ্ঠুর ভূমি দান করেন। সম্ভবত ১১৮৮ বঙ্গাব্দে কবি-রঞ্জন রামপ্রসাদ পরলোক গমন করেন। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তই সর্বপ্রথম তার জীবনী ও কবিতা সংগ্রহ করেন। তিনিও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে কবির অনেক কবিতাই সম্ভবত লোপ পেয়েছে। পরবর্তী গবেষকগণ ‘রামপ্রসাদী সঙ্গীত’ রূপে পরিচিত পদগুলির কর্তৃত্ব বিষয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেন। রামপ্রসাদের নামে প্রচলিত সব পদই যে এই বৈদ্যবংশীয় রামপ্রসাদের নয়, এ বিষয়ে বিদগ্ধ পণ্ডিতমণ্ডলী অভিন্নমত। ‘দ্বিজ রামপ্রসাদ’ ভণিতাযুক্ত পদগুলি চিনিসপুর কালিবাড়ির সাধক রামপ্রসাদ ভট্টাচার্য কর্তৃক রচিত বলেই সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়। ডঃ সুকুমার সেন স্পষ্টতাই মনে করেন, “যে গানগুলির ভণিতায় ‘দ্বিজ’ আছে সেগুলি কবিরঞ্জন রামপ্রসাদের নয়।” কেউ কেউ আবার কবিওয়ালা রামপ্রসাদ চক্রবর্তী-রচিত কিছু পদণ্ড বৈদ্য রামপ্রসাদের নামে প্রচলিত রয়েছে বলে মনে করেন। কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ বলেন, “যে গানে ‘আপীল’, ‘ডিক্রি’, ‘ডিমিস্’ প্রভৃতি ইংরেজি শব্দ আছে সেগুলি কবিওয়ালা রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর রচনা হওয়াই বেশি সম্ভব।” মোট কথা রামপ্রসাদ-রচিত পদগুলিকে সনাক্ত করা সম্ভবত এখন আর সম্ভব নয়।

(২) রামপ্রসাদের রচনার বৈশিষ্ট্যঃ

রামপ্রসাদ ছিলেন মূলত কালীসাধক, তার বিভিন্ন কালের রচনায় সাধনার ক্রম পরিবর্তন সহজে লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিকের রচনায় পার্থিব সুখ-সুবিধার উল্লেখ থাকলেও তার আধ্যাত্ম চেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক মননের ক্রমোন্নয়নের সুরটি সুস্পষ্ট। তার শেষদিকের রচনায় শুধু মায়ের জয়গান, তাঁর চরণে আত্মসমর্পণের আকুতি। রামপ্রসাদ কালীসাধক হ’লেও তার রচনায় যে সমন্বয়ের সুরটিও অপ্রকাশ নয়, তার প্রমাণ –

‘কালী হলি মা রাসবিহারী

নটবরবেশে বৃন্দাবনে।’

কিংবা—

‘প্রসাদ হাসিছে, সরসে ভাসিছে, 

বুঝেছি জননী মনে বিচারি।

মহাকাল কানু, শ্যামা শ্যাম তনু,

একই সকল বুঝিতে নারি।।’

রামপ্রসাদের বহু গানেই দারিদ্র্যোর ও দুঃখানুভূতির বেদনা তীব্রভাবেই প্রকাশিত হয়েছে। তার অনেক পদেই তাই অভিমান ক্ষুব্ধ হাদয়ের অভিযোগের সুরটিও চাপা পড়ে থাকে নি

“ওই যে মা যার জগদীশ্বরী 

তার ছেলে মরে পেটের ভুখে।”

রামপ্রসাদের দুঃখ বেদনার এই প্রকাশ কিন্তু বাস্তব অবস্থাগত নয়, মনে হয় এটি আধ্যাত্মিক সংকট-গত, মাতৃকরুণা লাভের জন্যই তার এই কাতরতা। কারণ যিনি বলেন— ‘আমি কি তোর দুঃখের ডরাই’ কিংবা ‘আমি নই আটাশে ছেলে/ভয়ে ভুলব নাকো চোখ রাঙালে। তিনি সাংসারিক দুঃখ কষ্টকে বিশেষ গ্রাহ্য করতেন বলে মনে হয় না।

পণ্ডিতপ্রবর ত্রিপুরাশঙ্কর সেনশাস্ত্রী শাক্তপদ রচনায় রামপ্রসাদের কৃতিত্ব-বিষয়ে মন্তব্য ক’রে বলেছেন যে রামপ্রসাদের “পদাবলী আমাদের মনকে ধূলিমাটির পৃথিবী হইতে ঊর্ধ্বলোকে লইয়া যায় এবং দুঃখদৈন্যের মধ্যেও আমাদের মনে দুর্জয় সাহসের সঞ্চার করে।”

(৩) রামপ্রসাদের আগমনী-বিজয়া:

কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনই শাক্তপদাবলীর প্রবর্তক এবং শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তিনিই প্রথম ‘আগমনী-বিজয়া’রও প্রবর্তক। ‘কালীকীর্তন’ নামক তার রচিত গ্রন্থে ঐশ্বর্য ও মাধুর্যরসের সমন্বয়ে বিভিন্ন পদে মোটামুটি একটি কাহিনী রচনা করেন, কিন্তু সাধারণত ঐগুলিকে শাক্তপদাবলীর অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয় না। বিভিন্ন ভাবধারায় রচিত তার বিভিন্ন পদগুলিই শাক্তপদ-রূপে কীর্তিত হয়ে থাকে। এ জাতীয় পদসমূহের মধ্যে রামপ্রসাদ রচিত ‘আগমনী-বিজয়া’র পদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও গুণগতভাবে এদের মূল্য কম নয়।

আগমনী-বিজয়ার বাৎসল্যের যে অনুপম প্রবাহ বাংলা সাহিত্যে অনন্য স্থান অধিকার ক’রে আছে, তার মূল খুঁজে পাওয়া যায় পুরাণে এবং তা থেকেই মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যেও এটি একটি কাহিনীর রূপ ধারণ করেছে। হিমালয় মেনকার একমাত্র কন্যা উমাকে শিবের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পিতৃগৃহে। তাকে অবলম্বন ক’রেই গড়ে উঠেছে ‘আগমনী বিজয়া’র গানগুলি। এ যেন মধ্যবিত্ত এক বাঙালী পরিবার-আত্মভোলা সংসার-অনাসক্ত স্বামীর গৃহে কন্যার সম্ভাব্য দুঃখভারাতুর জীবনের কথা স্মরণ করে তাকে কদিনের জন্য কাছে এনে রাখা এবং তিন দিন বাদে আবার তাকে বিদায় দান করার মধ্য দিয়ে মাতৃ হৃদয়ের যে বিচিত্র অনুভূতি রূপ থেকে রূপান্তরে পরিণতি লাভ করে, তারি আশ্চর্য সব্জীব চিত্র আগমনী বিজয়ার গানগুলিতে বর্তমান রামপ্রসাদের এ জাতীয় পদে আমরা সেই চলচ্চিত্রের দুটি একটি দুর্লভ মুহূর্তের সন্ধান পাই। মা মেনকা কন্যা উমাকে কোলের কাছে বসিয়ে মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে, বুঝিবা চোখের জলে ভেসে মেয়ের কুশল সংবাদ জানতে চান—

“পুনঃ কোলে বসাইয়া, চারুমুখ নিরখিয়া,

চুম্বে অরুণ অধরে।

বলে, জনক তোমার গিরি, পতি জনম-ভিখারি,

তোমা হেন সুকুমারী দিলাম দিগম্বরে।”

রামপ্রসাদের আগমনী-বিজয়া সঙ্গীতে আছে তাৎকালিক সমাজচিত্র, চিরকালীন মাতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতা, এমনকি বিশ্বজননীকে কন্যারূপে কল্পনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় অধ্যাত্ম সাধনার গূঢ় রসও এতে বিধৃত দেখা যায়। কিন্তু এর প্রধান আকর্ষণ পদের সরল সহজ অকপট প্রাণরসে পূর্ণ ভাষা এবং ভাষারূপের সঙ্গে বাঙালীর দৈনন্দিন জীবনের ঘনিষ্ঠ পরিচয়

গিরি, এবার আমার উমা এলে, আর ঊমা পাঠাব না।

বলে বলুবে লোকে মন্দ, কারো কথা শুনবো না।।

যদি এসে মৃত্যুঞ্জয়, উমা নেবার কথা কয়

এবার মায়ে-ঝিয়ে করবো ঝগড়া জামাই বলে মানবো না।।

কিন্তু বাস্তব সংসার বড় কঠোর— ‘যেতে নাহি দিব’ বললেও যেতে দিতে হয়। তাই বিজয়া প্রভাতে যখন মেঘের ডম্বরু বাজিয়ে শঙ্কর উমাকে নিয়ে যান, তখন হতাশায় ভেঙে পড়লেও মায়ের শেষ প্রচেষ্টা

‘ফিরে চাও গো ঊমা তোমার বিধুমুখ হেরি

অভাগিনী মায়েরে বধিয়ে কোথায় যাও গো’

(৪) রামপ্রসাদের ভক্তের আকুতি:

‘আগমনী-বিজয়া’র রামপ্রসাদ-কৃত খুব অল্পসংখ্যক পদই পাওয়া যায় বলে সে-বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা সম্ভবপর নয়। রামপ্রসাদ সাধক কবি, তাই সাধনা বিষয়ে তিনি অনেক বেশি পদ রচনা করেছেন। রামপ্রসাদের শ্যামাসঙ্গীতগুলিরও আবার দুটি বিভাগ কল্পনা করা চলে। একটি ধারাকে বলা চলে “আবেগমূলক’–এই জাতীয় পদগুলিতে মাতাপুত্রের অনুরাগ, অভিযোগ, বিক্ষোভ এবং আকৃতিই প্রধান হ’য়ে দেখা দিয়েছে। এই ধরনের অনেক পদেই প্রতিবাৎসল্যরসের উত্তম পরিচয় পাওয়া যায়। ‘উমাসঙ্গীতে’ কন্যার প্রতি মাতৃস্নেহে যে বাৎসল্যরসের পরিচয় আছে, ‘শ্যামাসঙ্গীতে’ তেমনি মাতার প্রতি পুত্রের বাৎসল্যের পরিচয়। “কালীকে মা সম্বোধন করিয়া শাক্ত সাধক-কবিগণ তাঁহার চরণে হৃদয়ের সমস্ত অনুরাগ যে ঢালিয়া দিলেন, তাঁহাকে কন্যারূপে নিজ ঘরের আঙ্গিনায় যে খুঁজিয়া পাইলেন, তাহার পশ্চাতে সক্রিয় রহিয়াছে বাৎসল্যভাবাশ্রিত বাঙালী হৃদয়ের নিবিড় স্পর্শ।” ‘ভক্তের আকৃতি’ এবং এ জাতীয় আরো কোনো কোনো পর্যায়ের কবিতায় এই প্রতিবাৎসল্যরসের প্রকাশ ঘটেছে। ‘শ্যামাসঙ্গীতে’র দ্বিতীয় ধারায় পদগুলিতে তান্ত্রিক সাধনার দুরূহ সংকেত তথা সাধনতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে।

প্রথমোক্ত পর্যায়ে বর্ণিত পদগুলির মধ্যে এমন অনেক পদই আছে যেগুলিকে ভক্তের মনোগত আকাঙ্ক্ষাকেই বুঝিয়ে থাকে। শক্তি-দেবতার নিকট বহু প্রার্থনার বিষয় আছে

‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।।’

কিন্তু রামপ্রসাদের প্রার্থনায় এদের কোনোটিই নেই। এমন কি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যে দেবীরা ভক্তদের প্রভূত সম্পদ দান করেছেন কিন্তু শাক্তপদাবলীর ‘ভক্তের আকৃতি পর্যায়ের পদে কোনো ভক্তিই পার্থিব সম্পদ কামনা করেন নি, এমন কি মুক্তি কামনাও তাদের লক্ষ্য নয়, মায়ের অভয় চরণই তাদের একমাত্র ঈঙ্গিত –

‘রামপ্রসাদের এই আশা মা, অস্তে থাকি পদানত।’

জাগতিক দুঃখ-বেদনায় রামপ্রসাদ ভীত নন—

‘আমি কি দুঃখেরে ডরাই?’

কিন্তু মায়ের প্রতি তার অভিমান, মা কেন তার ওপর অবিচার করবেন ?—

‘কোন্ অবিচারে আমার পরে করলে দুঃখের ডিক্রি জারি?’

পুত্র দোষী হতে পারে, কিন্তু তার জন্য মা কি তাকে কঠোর শাস্তি দিতে পারেন? তাই রামপ্রসাদ বলেন

‘কুপুত্র অনেক হয় মা কুমাতা নয় কখন তো।’

যা হোক, জগতে থাকলেই কর্মের ফলভোগ করতে হবে–অতএব রামপ্রসাদের প্রার্থনা—

‘প্রসাদ বলে, ব্রহ্মময়ি কর্মডুরি দে মা কেটে।’

এই সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত হ’য়ে শুধু মায়ের নাম করেই তিনি অবশিষ্ট দিনগুলি কাটিয়ে দিতে চান—

‘এমন দিন কি হবে তারা,

যবে তারা তারা তারা বলে তারা বেয়ে পড়বে ধারা।।’

ভক্তমনের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে বলেই এ জাতীয় পদগুলিকে ‘ভক্তের আকৃতি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই আকাক্তকার দুটি রূপ লক্ষ্য করা যায় একটি মায়ের স্নেহলাভের আকাঙ্ক্ষা, অপরটি মায়ের অভয় চরণে স্থান লাভের আকাঙ্ক্ষা দুঃখ-কষ্টে পড়লেই সস্তান যেমন মায়ের ওপরই একান্তভাবে নির্ভর করে সংসার জীবনে ক্লিষ্ট সাধকও তেমনি জগজ্জননীর শরণ নিয়েছেন। “সস্তান যেমন দুঃখে পড়িয়া মায়ের স্নেহ না পাইলে কাদে, অভিমান করে, কখন তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, এমন কি তিরস্কারও করে, সেইরূপ জগজ্জননীর কৃপাবঞ্চিত শাক্ত সাধক কবিগণ সংসারের দুঃখানলে জুলিতে জ্বলিতে ক্ষুব্ধ ব্যথিত। চিত্তে নিজের মনে ক্রন্দন করিয়াছেন, মায়ের প্রতি অভিমান করিয়াছেন, মাকে তিরস্কার করিয়া অভিযুক্ত করিয়াছেন। কিন্তু শত অভিযোগ সত্ত্বে মাতৃ-নির্ভরতা হইতে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হন নাই।”

রামপ্রসাদের সামগ্রিক কৃতিত্ব-বিষয়ে ডাঃ শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন: “যখন মনে হয়, মঙ্গলকাব্যের একদা জীবন্ত প্রবাহ, বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী সাহিত্যের প্রাণবান্ স্রোত অষ্টাদশ শতকে ক্ষীণতর হইয়া ক্রমশঃ বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে সঞ্চিত হইতেছিল অথবা অগভীর সঙ্কীর্ণ স্রোতে বিবর্তিত হইতেছিল, সেই যুগে রামপ্রসাদ তাহার মধ্যে নূতন প্রাণাবেগের সঞ্চার করিলেন, নূতন খাতে আবেগের স্রোত বহাইয়া দিলেন, নূতনতর উৎসের সন্ধান দিলেন এবং আবেগধর্মী ভক্তি ও বিশ্বাসমূলক গীতিকাব্যের নূতনতর ধারা প্রবর্তন করিলেন, তখন রামপ্রসাদের সৃষ্টির অপূর্ব মহিমা উপলব্ধি করিতে বিলম্ব হয় না। মধ্যযুগীয় সাহিত্যের সকল সৃষ্টি সম্ভাবনা যখন প্রায় নিঃশেষিত তখন রামপ্রসাদ নূতন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দান করিলেন, রামপ্রসাদের এ কীর্তি অবহেলার বজ্ৰ নহে।”