নেফারতিতি প্রাচীন মিশর তথা বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা মহিলা ছিলেন। তিনি ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের মিশরীয় ফ্যারাও আখেনাটেন (Akhenaten) বা চতুর্থ আমেনহােটেপের অন্যতম প্রধানা পত্নী। তিনি মিশরের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

[1] বংশ পরিচয়: অনুমান করা হয় যে, নেফারতিতি ছিলেন টেয়া ও তৃতীয় আমেনহােটেপের কন্যা। আবার কেউ কেউ তাকে ফ্যারাও আয় (Ay)-এর কন্যা বলে মনে করেন। নেফারতিতি শব্দের অর্থ হল ‘আগন্তুক সুন্দরী নারী। কেউ কেউ মনে করেন যে, নেফারতিতি ছিলেন উত্তর সিরিয়ার মিট্টানি রাজ্যের রাজকুমারী।

[2] প্রশাসনে অংশগ্রহণ: মিশরীয় প্রশাসনে নেফারতিতি ফ্যারাও আখেনাটেনের প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হন। নেফারতিতি সর্বদা তার স্বামীর পাশে অবস্থান করতেন ও স্বামীর সহকারী শাসিকা হিসেবে তিনি ১৩৫২ খ্রি.পূ. থেকে ১৩৩৬ খ্রি.পূ. পর্যন্ত মিশর শাসন করেছেন। বহু ঐতিহাসিকের ধারণা, স্বামী আখেনাটেনের মৃত্যুর পর নেফারতিতি মিশরের ফ্যারাও হিসেবে কিছুকাল রাজত্ব করেন।

[3] কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দক্ষতা: আখেনাটেনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে টুট (টুটেনখামেন) নামে পুত্রের জন্ম হয়, যিনি ভবিষ্যতে মিশরের সম্রাট হন। নেফারতিতি তাঁর তৃতীয় কন্যা আঁখেসিনপ্যাটেনকে টুটেনখামেনের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথ মসৃপ করেন।

[4] রহস্যময় অন্তর্ধান: স্বামী আখেনাটেনের সঙ্গে সহকারী হিসেবে শাসন করলেও আখেনাটেনের রাজত্বের দ্বাদশ বর্ষে ইতিহাস থেকে নেফারতিতির নাম অদৃশ্য হয়ে যায়। এই সময় তার মৃত্যু হয় নাকি অন্য কোনও ঘটনা ঘটে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন যে এই সময় নেফারতিতি আসলে নেফারনেফ্রটেন (Nefernefruaten) নাম গ্রহণ করে তার স্বামীর সহশাসিকা হিসেবে প্রশাসন পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। কোনাে কোনাে। ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, এই সময় তিনি অন্য একটি নাম গ্রহণ করে ফ্যারাও হন। অনেকে মনে করেন যে, ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্বামীর মৃত্যুর পর নেফারতিতি স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করতে থাকেন।

উপসংহার: নেফারতিতি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী। তিনি ফ্যারাও আখেনাটেনকে সর্বদা তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। মিশরের ঐতিহাসিক উপাদানে নেফারতিতির মূর্তি এবং চিত্র তাঁর স্বামী আখেনাটেনের চেয়ে বেশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। এ থেকেই মিশরীয় প্রশাসনে তাঁর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে।