[1] প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ

  • প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ নাগাদ ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আফগান সীমান্ত সুরক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ দুটি নীতি গ্রহণ করে, যথা—‘নিরপেক্ষতা’ ও অগ্রগামী বা ‘হস্তক্ষেপ’ নীতি।

    • মেয়াে-আফগান সম্পর্ক: লরেন্সের পরে ভারতের বড়ােলাট মেয়াে লরেন্সের মতাে আফগানদের প্রতি অতটা বন্ধুত্ব মনােভাব-সম্পন্ন ছিলেন না। রাশিয়ার সঙ্গে তিনি সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেন। এই লক্ষ্যে তিনি ডগলাস ফরসিথকে সেন্ট পিটার্সবার্গে পাঠান।

    • নর্থব্রুক-আফগান সম্পর্ক: নতুন ভারত সচিব সলবেরী আফগানিস্তানে সরাসরি ব্রিটিশ-প্রভাব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তবে বড়ােলাট নর্থব্রুক রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও মিত্রতা বজায় রাখার আগ্রহ দেখান।

    • হস্তক্ষেপ নীতি: ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ডিজরেলীর নেতৃত্বে রক্ষণশীল দল ক্ষমতায় আসে। ডিজরেলীর সমর্থন নিয়ে নতুন ভারত-সচিব সলবেরী আফগানিস্তানের কাবুল-হিরাট অঞ্চলে এক ব্রিটিশ প্রতিনিধি পাঠানাের নির্দেশ দেন। তারা আফগানিস্তানের ওপর হস্তক্ষেপ করার উদ্যোগ শুরু করে। ইংরেজ সেনারা কোয়েটা অঞ্চলের দখল নিলে শুরু হয় প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ।

[2] দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ

  • লিটন-আফগান সম্পর্ক: লিটন আফগান আমীরকে ব্রিটিশ প্রতিনিধি উপস্থাপনার নির্দেশ দেন, কিন্তু রাশিয়া ক্ষুদ্ধ হবে ভেবে আমীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে আমীরের আপত্তি থাকলেও আফগানিস্তানকে সমস্তরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুশ আফগান মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ রুষ্ট হন। যাই হােক শেষপর্যন্ত ইংরেজ সেনারা আফগানিস্তানে আক্রমণ চালালে শুরু হয় দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ।

  • রিপন-আফগান সম্পর্ক: রিপন আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি নেন। আফগান সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলােচনায় বিশ্বাসী ছিলেন।

  • ডাফরিন-আফগান সম্পর্ক: ভারতে বড়ােলাট হওয়ার আগে ডাফরিন রাশিয়ায় ব্রিটিশ দ্রুত হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাই তিনি মধ্য এশিয়ায় রুশ নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।

  • ল্যান্সডাউন-আফগান সম্পর্ক: ল্যান্সডাউন আফগানিস্তানে ব্রিটিশ হস্তক্ষেপের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী সীমারেখা ঠিক করার জন্য মারাটিমার ডুরান্ডকে দায়িত্ব দেন। ডুরান্ড দুই দেশের মধ্যে সীমারেখা নির্ধারণ করেন, তা ডুরান্ড লাইন নামে পরিচিত হয়।

  • কার্জন-আফগান সম্পর্ক: ভারতে বড়ােলাট হওয়ার পর কার্জন ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সংস্কার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে তিনি সীমান্তবর্তী স্থানীয় সেনাদের নিয়ে ব্রিটিশ অফিসারদের অধীনে স্থানীয় বাহিনী গড়ে তােলেন এবং ব্রিটিশ সেনাদের সরিয়ে নেন। শেষপর্যন্ত ইঙ্গ রুশ চুক্তি সম্পাদিত হলে (১৯০৭ খ্রি.) ব্রিটেন ও রাশিয়া উভয়েই আফগানিস্তানে সমান সুযােগসুবিধা লাভ করে।

[1] প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকের শেষার্ধে ডালহৌসির আমলে দ্বিতীয় ইঙ্গ ব্রহ্ম যুদ্ধের পর দক্ষিণ ব্রত্মে ব্রিটিশ আধিপত্য গড়ে ওঠে। ভারতে পূর্ব সীমান্তে ব্ৰত্মদেশে ফরাসি শক্তি প্রতিরােধের লক্ষ্যে ইঙ্গ ব্রহ্ম সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

[2] প্রাথমিক সম্পর্ক

  • ব্রহ্মরাজদের সঙ্গে ইংরেজেদের সম্পর্ক: ব্রহ্মরাজ মিনডন দুটি চুক্তির মাধ্যমে ব্রহ্মদেশে ইংরেজদের বাণিজ্যিক সুযােগসুবিধা দান করেন। কিন্তু তিনি ব্রহ্মদেশে ব্রিটিশ প্রাধান্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে মেনে নিতে পারেননি। এ ছাড়াও তিনি পেগু প্রদেশটি পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হন। পরবর্তী ব্রহ্মরাজ মিনডন-এর পুত্র থিবাে ব্রহ্মে বাণিজ্য এক ব্রিটিশ বাণিজ্যিক সংস্থা (বােম্বাই বার্মা ট্রেডিং কর্পোরেশন)-কে আর্থিক জরিমানা করেন। আসলে থিবাে উত্তর ব্রহ্মে কাঠের ব্যাবসা নিয়ােজিত ব্রিটিশ বাণিজ্যিক সংস্থার কাছ থেকে ব্যাবসার অধিকার কেড়ে নিয়ে ফরাসি প্রতিষ্ঠানকে তা দিতে চান।

  • তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ: ব্রহ্ম রাজাদের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে ইঙ্গ-ব্রহ্ম সম্পর্কের অবনতি ঘটে। শুরু হয় তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ। যুদ্ধে জেতার পর ব্রিটিশদের অধীনে উত্তর ও দক্ষিণ ব্রহ্মের মিলিত রূপ হিসেবে ব্রহ্মদেশ একটি স্বতন্ত্র প্রদেশে পরিণত হয়। অবলুপ্তি ঘটে স্বাধীন ব্রহ্মদেশের।

পরবর্তী পর্যায়: তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের ফলে ব্রহ্মদেশে এই প্রথম স্থায়ীভাবে ব্রিটিশ আধিপত্য গড়ে ওঠে। পাশাপাশি পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়।