সূচনা: উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদকে ভিত্তি করে যে ধর্মীয় ও সমাজসংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার অংশীদার ছিল মহারাষ্ট্রে পারসি সমাজও। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পারসিরা যে সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তাতে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয়েছিল দেশীয় সংস্কৃতিই।

[1] সংগঠন তৈরি ও পত্রিকা প্রকাশ: প্রচলিত রয়েছে যে ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জরথুষ্ট ধর্মাবলম্বীরা ইরান ছেড়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলে এসে বসবাস শুরু করে ও পারসি নামে পরিচিত হয়। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে কিছু শিক্ষিত পারসি যুবককে নিয়ে নওরােজি ফার্দুনজি, দাদাভাই নওরােজি প্রমুখ রেহনুমাই মাজদায়াসনেন সভা বা Persi’s Reform Society গঠন করেন। এই সােসাইটির সভাপতি ছিলেন ফার্দুনজি নিজে এবং সম্পাদক হন সাপুরজি বেঙ্গলি। এই সংগঠনটির মুখপত্র ছিল ‘রাস্তগােফতার’ যা পারসিদের মনে বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনা ও উদার সাংস্কৃতিক চেতনা জাগানাের চেষ্টা করে। এ ছাড়াও এই সংগঠনটির সম্পাদক সাপুরজি নিজের চেষ্টায় জগৎ মিত্র’ মাসিক পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে পারসিদের পাশ্চাত্য শিক্ষার ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে আধুনিক করে তােলার চেষ্টা করেন।

[2] উদ্দেশ্য: পারসি সংস্কার সােসাইটি পারসি সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যগুলিকে পূরণ করার চেষ্টা করেছিল। যেমন一

  • আধুনিক সম্প্রসারণ: পারসি সম্প্রদায়ের সামাজিক জীবনকে পাশ্চাত্য সভ্যতা, সংস্কৃতির ভাবধারায় নতুন রূপে গড়ে তােলা।

  • ধর্মীয় গৌরবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা: জরথুস্ট্রীয় ধর্মের সারাংশকে অনুসরণ করে এই ধর্মের হারানাে গৌরবকে নতুনরূপ প্রতিষ্ঠা করা।

[3] বিভিন্ন সংস্কার: পারসি সমাজসংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে পারসি মহিলাদের শিক্ষার আলােয় নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। সমাজ থেকে পর্দার অবসান ঘটানাে ও বিবাহবিধির সংস্কারসাধনও তারা করতে চেয়েছিল। পারসি মহিলাদের অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। যার বিরােধিতা করেন ফার্দুর্নজি, সাপুরজি বেঙ্গলি, দাদাভাই নওরােজি প্রমুখ। শিক্ষিত পারসি যুবকগণ ও পারসি সংস্কারক বেহরামজি মেরওয়ানজি মালাবারির উদ্যোগে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয় ‘বিবাহ সম্মতি আইন (১৮৯১ খ্রি.) প্রণয়নে, যার সুফলরূপে পারসি কন্যাদের ১২ বছরের কম বয়সে বিবাহ দেওয়া নিষিদ্ধ হয়।

[4] গুরুত্ব: পারসি সংস্কার আন্দোলন উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

  • দ্বিতীয়ত: পারসি সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল শিক্ষিত ও ধনী পারসি ব্যক্তিবর্গ। যার প্রভাবে শহরে পারসি সংস্কৃতির দ্রুত বিন্যাস ঘটেছিল।

উপসংহার: পারসি সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে একদিকে যেমন একদেশীয় সমাজে পারসিদের সামাজিক অবস্থানের উন্নতি ঘটেছিল, অপরদিকে তেমনই ভবিষ্যতের ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে দাদাভাই নওরােজি, আগারকার-এর মতাে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতাকে পেয়েছিল।