[1] উগ্র জাতীয়তাবাদ: আরব জাতীয়তাবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনের আরব (ফিলিস্তিনীয়)-দের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে, অপরদিকে জিওনবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ফলে আরব ও ইহুদি উভয় শক্তির মধ্যে এক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

[2] ব্রিটিশের পরস্পর বিরােধিতা

  • আরবদের সমর্থন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে তুরস্কের বিরুদ্ধে আরবদের সমর্থন লাভের লক্ষ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হেনরি ম্যাকমােহন মক্কার শরিফ হুসেনের কাছে আরবদের স্বাধীনতাদানের প্রতিশ্রুতি দেন (১৯১৫ খ্রি., অক্টোবর)। এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে আরবরা আশা করেছিল প্যালেস্টাইন স্বাধীন অঞ্চলভুক্ত থাকবে।

  • ইহুদিদের সমর্থন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষার্ধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে ইহুদিদের সমর্থনলাভের আশায় ব্রিটিশ বিদেশ সচিব আর্থার ব্যালফুর বলেন—“প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জাতীয় বাসভূমি গঠনে ইংরেজ সরকারের সম্পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে এবং এই উদ্দেশ্যপূরণের জন্য ইংরেজ সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।”

[3] পিল কমিশনের ব্যর্থতা: পিল কমিশন তার রিপাের্টে প্যালেস্টাইনকে তিনটি ভাগে ভাগ করার কথা বলে, যথা—

  • [i] ইহুদিদের জন্য গঠিত হবে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র। 

  • [ii] জেরুজালেম, বেথেলহেম ইত্যাদি পবিত্র স্থানগুলি ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকবে। 

  • [iii] প্যালেস্টাইনের অন্যান্য স্থানগুলি ট্রান্স-জর্ডনের সঙ্গে যুক্ত করে এক নতুন আরব রাষ্ট্র গঠন করা হবে।

[4] আরব লিগ গঠন: আরব লিগ প্যালেস্টাইনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট উচ্ছেদের দাবি জানায়। মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ট্রান্স-জর্ডন, সৌদি আরব—এই ছয়টি আরব রাষ্ট্র একজোট হয়ে কায়রােতে ১৯৪৫ খ্রি. আরব লিগ গঠন করে। এতে ব্রিটিশ প্যালেস্টাইন সমস্যা জাতিপুঞ্জের হাতে ছেড়ে দেয়। জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা এক কমিটি গঠন করে। এই কমিটি UNSCOP (United Nations Special Committee on Palestine) নামে পরিচিত। এই কমিটির বেশিরভাগ সদস্য প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার পক্ষে মত দিলে আরব ইহুদি বিবাদ আরও জটিল হয়ে ওঠে।

[5] ইজরায়েলের জন্ম: নবগঠিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের ওপর পাঁচটি আরব রাষ্ট্র মিশর, জর্ডন, ইরাক, লেবানন ও সিরিয়া একযােগে আক্রমণ করলে শুরু হয় প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধ। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়।

[1] যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

  • পৈতৃক ভূখণ্ডের দাবি: আরব দেশগুলি তাদের ভূখণ্ডে ইজরায়েলের অস্তিত্ব কোনােভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তারা যে-কোনাে মূল্যে নিজেদের পিতৃভূমির মাটি উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

  • আরব শরণার্থীদের সমস্যা: ইজরায়েল থেকে বিতাড়িত আরব শরণার্থীদের সমস্যার সমাধান করা আরব দেশগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

  • প্রত্যক্ষ কারণ: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করে সেখানে ইজরায়েলের জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলে, এর বিরুদ্ধে ইজরায়েল জাতিপুঞ্জে আবেদন করে। এতে কোনাে কাজ না হলে মিশরের বিরুদ্ধে ইজরায়েল ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর যুদ্ধ ঘােষণা করে।

[2] সংঘর্ষ

  • আক্রমণ: সুয়েজ খাল জাতীয়করণের প্রতিবাদে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইজরায়েল মিশর আক্রমণের গােপন পরিকল্পনা করে। সেই অনুসারে ইজরায়েল অক্টোবর মিশর আক্রমণ করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়।

  • আমেরিকার উদ্যোগ: আমেরিকা জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভেটো প্রয়ােগ করে প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। ৩০ অক্টোবর মিশরের রাজধানী কায়রাের ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিমানবাহিনী বােমা বর্ষণ করে।

  • জাতিপুঞ্জের উদ্যোগ: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিপুঞ্জের প্রস্তাব অনুসারে দশটি দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে খুব শীঘ্রই জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী ১৫ নভেম্বর মিশরে হাজির হয়। মিশর থেকে ক্রমে। ইজরায়েল, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সেনা অপসারিত হয় এবং শান্তি স্থাপিত হয়।