প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি আঙ্গিক এবং উপস্থাপনা-ভঙ্গিতে এক অভিনব সৃষ্টি। গল্পের প্রথমেই একটি দীর্ঘ বাক্যে বলা হয়েছে যে, ক্লান্ত কোনাে দুপুরে নাগরিক দৈনন্দিনের দীনতায় বীতস্পৃহ মন যদি কিছু সময়ের অবকাশ খুঁজে নিতে উধাও হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সরলতম মাছেদের সন্ধানে, তবে অপরিচিত মফসসলের মৎস্যগন্ধা পটভূমিতে যে-কেউই আবিষ্কার করতে পারেন তেলেনাপােতা। বাস্তবের সঙ্গে প্রতীক ও ফ্যানটাসির মিশেলে তৈরি এই অসাধারণ বাক্য দিয়ে গল্পটি শুরু হয়েছে। প্রথম থেকেই উত্তমপুরুষে বলা এই গল্পটিতে কথক পাঠককে সন্ত্রমার্থক মধ্যমপুরুষে সম্বােধন করে গেছেন। তেলেনাপােতা আবিষ্কার লেখকেরই লব্ধ অভিজ্ঞতা হলেও বিবৃতিতে তা এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা যেন উপলব্ধ অভিজ্ঞতার কোনাে প্রকাশ নয়। বরং সেই অভিজ্ঞতার আলােয় নতুন অভিজ্ঞতা-অর্জনের দিক-নির্দেশই লেখকের উদ্দেশ্য।
গল্পটির বর্ণনাভঙ্গিতে একটি মৃদু, বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের রেশ আমরা টের পাই। আর, এ গল্পের কাব্যময় ভাষাও পাঠককে আবিষ্ট করে। যেমন- ‘আকাশে তখন কৃয়পক্ষের বিলম্বিত, ক্ষয়িত চাদ বােধহয় উঠে এসেছে।’
সুতরাং প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ গল্পটি কৌতুকময়তা, কাব্যময়তা এবং অভিনব বর্ণনা রীতির দিক থেকে নিঃসন্দেহে এক অনন্য সৃষ্টি।
ছােটোগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বল্প পরিসরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে প্রকাশ করা। ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, তত্ত্ব, উপদেশ বা বহু চরিত্রের সমাবেশের কোনাে সুযােগ ছােটোগল্পে নেই।
প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং কলকাতা শহরের ভিড়ভাট্টায় হাঁপিয়ে উঠে তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথক দুই বন্ধুসহ বেড়াতে যাবেন তার অন্যতম বন্ধু মণির পূর্বপুরুষদের বাসভূমি তেলেনাপােতায়। সেখানে গিয়ে জীর্ণ প্রাসাদে জ্যোৎস্না রাতে নারীমূর্তি দর্শন, মাছ ধরতে গিয়ে বড়শিতে টান দিতে দেরি করা, যামিনীকে আবিষ্কার এবং যামিনীর মায়ের আশার মধ্য দিয়ে জীবনের এক অন্যরকম উপস্থাপনা গল্পে পাওয়া যায়। আর তার প্রেক্ষাপটে থেকে যায় রহস্যময়তার এক অসামান্য বিন্যাস।
উত্তম পুরুষের আশ্রয়ে এবং ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ ব্যবহারের সাহায্যে কথক এই গল্পে অত্যন্ত সুকৌশলে পাঠককেই নায়কের মর্যাদা দিয়ে দেন। তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে এইভাবে লেখক শহুরে, রােমান্টিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির চরিত্রবৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এই ব্যঞ্জনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন যে, পরার্থপরতা এবং রােমান্টিকতাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাময়িকভাবে গ্রহণ করলেও তার চরিত্রে স্বার্থমগ্নতা এবং বাস্তববাদিতাই শেষপর্যন্ত প্রাধান্য পায়। এই ভাবে ক্ষুদ্রের মধ্যে বৃহতের খন্ডের মধ্যে সমগ্রের ইঙ্গিত দিতে দিতে গল্পটি একমুখী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে তেলেনাপােতা আবিষ্কার একটি শিল্পসার্থক ছােটোগল্প।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পটির অন্যতম বিষয় হল তেলেনাপােতা নামক স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ গল্পের প্রকৃতিপ্রেমিক কথকের চোখ দিয়েই আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে পাই। যেমন—আকাশে কৃয়পক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাদ’, মন্দির এবং অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি। এরপর মাছরাঙা পাখি, সাপ ও ফড়িংদের ক্রিয়াকলাপ এবং উদাস ঘুঘুর ডাক কথকের মতাে পাঠকদেরও আনমনা করে দেয়।
এর সঙ্গে যুক্ত থাকে গল্পকথকের আন্তরিকতা। নিরঞ্জনের প্রতিশ্রুতি-ভঙ্গ, যামিনীর জীবনের দুর্ভাগ্য এবং কন্যার ভবিষ্যতের জন্য যামিনীর অসুস্থ, অন্ধ, বৃদ্ধা মায়ের অসহায় চিন্তা কথককে আন্তরিকভাবেই আবেগাচ্ছন্ন করে দেয়।
গল্পকথকের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের পরিচয় এ গল্পের প্রায় প্রতিটি অনুচ্ছেদেই লক্ষ করা যায়। যামিনীর কন্যাদায়গ্রস্ত মায়ের করুণ কথাগুলি শুনে তাই আমরা দেখি—‘আপনার নিজের চোখের জল বুঝি আর গােপন রাখা যাবে না।’
রােমান্টিকতার সবচেয়ে বড়াে যে বৈশিষ্ট্য কল্পনাপ্রবণতা, তা এ গল্পের প্রতিটি ছত্রে বর্তমান। রাতের বেলায় ছাদে উঠে কথক কৃয়পক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলােয় কল্পনা করেছেন ‘মৃত্যু-সুষুপ্তিমগ্ন মায়াপুরীর কোনাে গােপন প্রকোষ্ঠে বন্দিনি রাজকুমারী সােনার কাঠি রূপার কাঠি পাশে নিয়ে যুগান্তের গাঢ় তন্দ্রায় অচেতন।’
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে শৈলীগত দিক দিয়ে যেসব বিশেষ কৌশল লেখক প্রয়ােগ করেছেন, তার অন্যতম হল গল্পের বয়ানে ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়ারূপের ব্যবহার।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের প্রথম লাইনেই ভবিষ্যতের চিহ্ন আছে, ‘শনি ও মঙ্গলের—মঙ্গলই হবে বােধ হয়—যােগাযােগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।’ অর্থাৎ এই আবিষ্কার এখনও করা হয়নি, ভবিষ্যতে করা যেতে পারে। কর্ম ও ভাববাচ্যের ভবিষ্যৎ ক্রিয়ারূপও এ গল্পে আমরা দেখতে পাই। যেমন—‘বড়াে রাস্তা থেকে নেমে সেই ভিজে জলার কাছেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে আপনাকে।’ এই সম্ভাব্যতার সূত্রেই গল্পকথক বুনতে থাকেন তার গল্প।
এখানে লক্ষণীয় যে, পাঠকের প্রথমে মনে হবে লেখক যেন দর্শকের মতাে বলে চলেছেন গল্পের বিষয়বস্তু। কিন্তু ধীরে ধীরে বােঝা যায় যে একটি বিশেষ চরিত্রকেই তিনি অবলম্বন করে গল্পটি বলেছেন। অর্থাৎ মধ্যম পুরুষ ব্যবহার করলেও তা আসলে ‘উত্তম পুরুষ’ই।
একইভাবে ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে যদি যান্ত্রিকভাবে দেখা হয়, তাহলে তা অবশ্যই ভবিষ্যৎকালের চিহ্ন। কিন্তু গল্পের যত ভিতরে প্রবেশ করা যাবে, ততই বােঝা যায় যে ভবিষ্যৎকালের ছদ্মবেশে তা আসলে বর্তমান বা অতীতকালই। ফলে সামগ্রিক ভাবে গল্পের বয়ানে অসাধারণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন লেখক।
‘কর্তার ভূত’ অবলম্বনে ‘স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায়’ তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করাে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘কর্তার ভূত’ রচনায় দেশসুদ্ধ সবাই বলতে কোন্ ধরনের মানুষের কথা বলা হয়েছে?
কর্তার ভূত ছোট গল্পের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করাে।
কর্তার ভূত ছোট গল্প অবলম্বনে ভুতুড়ে জেলখানার বর্ণনা দাও। কাদের সম্বন্ধে এবং কেন লেখক বলেছেন যে, তারা ভয়ংকর সজাগ আছে?
“দেশের লােক ভারি নিশ্চিন্ত হল।”—কীভাবে দেশের লােক ভারী নিশ্চিন্ত হল?
“একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা।”- ‘কর্তার ভূত’ রচনা অবলম্বন করে এই ‘অদৃষ্টের চালে চলা’র তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“সেই জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না।- সেই জেলখানার বিস্তৃত বিবরণ দাও। সেই জেলখানার কয়েদিদের ঘানি ঘােরানাের কথা আলােচনা করাে।
“শুনে ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতাে-পিসতুততার দল কানে হাত দিয়ে বলে,—কোন্ কথার উত্তরে কী বলে তারা?
“কেননা ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনাে ভাবনাই নেই;”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“অথচ তার মাথা নেই, সুতরাং কারও জন্য মাথাব্যথাও নেই।”— কার সম্বন্ধে, কেন লেখক এ কথা বলেছেন?
“শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।”- আদিম আভিজাত্য’ অনুভব করার কারণ কী?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ রচনায় ‘দেশে যত শিরােমণি-চূড়ামণি’-র বক্তব্য কী ছিল?
“এখন কথাটা দাঁড়িয়েছে, ‘খাজনা দেব কিসে।” কারা, কাদের কাছে খাজনা চেয়েছে? খাজনা দিতে না পারার কারণ কী?
“দেশের মধ্যে দুটো-একটা মানুষ” -এর সঙ্গে বুড়াে কর্তার কথােপকথন ‘কর্তার ভূত’ অবলম্বনে লেখো এবং রূপকার্থ আলােচনা করাে।
‘ওরে অবােধ, আমার ধরাও নেই ছাড়াও নেই, তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া’—এখানে কে কাদের অবােধ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“কর্তা বলেন, সেইখানেই তাে ভূত।”- কোন প্রসঙ্গে এবং কেন কর্তা এ কথা বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’ রচনায় ওঝা প্রসঙ্গটির তাৎপর্যটি লেখাে।
“সে ভবিষ্যৎ ভ্যাও করে না ম্যাও করে না” -সে ভবিষ্যৎ ভ্যা বা ম্যা করে না কেন?
“কেননা ওঝাকেই আগেভাগে ভূতে পেয়ে বসেছে”- ওঝাকে ভূতে পেলে কী ক্ষতি হওয়ার কথা লেখক বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’- কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক রূপক কাহিনি? ব্যাখ্যাসহ লেখাে।
“ভূতের রাজত্বে আর কিছুই না থাক…শান্তি থাকে”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করাে।
কেন কিছু দেশবাসীর ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে দ্বিধা জাগল?
‘কর্তার ভূত’-রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’ রচনাটির ভাষাশৈলী তথা রচনাশৈলী পর্যালােচনা করাে।
‘তারা ভয়ংকর সজাগ আছে।’ -কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের এমন ‘ভয়ংকর সজাগ থাকার কারণ কী?
“কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল বাধল।”—কারণটি পর্যালােচনা করাে।
কর্তার ভূত গল্পে যে সামাজিক সত্যের দিকে লেখক নির্দেশ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
Leave a comment