বাউল ধর্ম: যােড়শ শতকের শেষ দিকে বাস্তব জীবন ও শাস্ত্র-আচারে উদাসীন যে ঈশ্বরভক্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে, তারাই ‘বাউল নামে পরিচিত। বাউলদের সাধনায় বৈয়ব সহজিয়া, সুফি আউলিয়া, এমনকি শৈব নাথধর্ম, যােগসাধনা ইত্যাদি নানা ধর্মশাখা ও সম্প্রদায়ের প্রভাব আছে। বাউলরা মনে করেন দেহের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস, তাঁকেই ‘মনের মানুষ’, অলখ সাঁই’, ‘অচিন পাখি ইত্যাদি নানা নামে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন। বাউলরা জাতিভেদ এবং পৌত্তলিকতা মানেন না।

বাউলগান: বাউল সাধকরা তাঁদের ধর্মভাবনাকে রূপকের আশ্রয়ে গানের সাহায্যে প্রকাশ করেন। বাউলরা গুরুসাধনায় বিশ্বাস করেন। শুধুমাত্র প্রেমসাধনাতেই ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পথ খুঁজেছেন বাউল সাধকেরা। আর সেই পথের নির্মাণে দেহতত্ত্ব এবং কায়াসাধনা হয়েছে তাঁদের অবলম্বন। জাগতিক বিষয়বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে মনের মানুষ’-এর সন্ধান করেছেন বাউল সাধকগণ। বাউলগানের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা লালন শাহ ফকির। অনুমান করা হয়, অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। এ ছাড়া ফকির পাশাহ, গগন হরকরা, হাসান রাজা, হাউড়ে গোঁসাই, গোঁসাই গােপাল প্রমুখের নামও উল্লেখযােগ্য। মুসলিম লােকসমাজে বাউল সাধনার মতােই শাস্ত্রাচার বর্জিত যে ধর্মসাধনা প্রচলিত আছে তাকে মুর্শিদি বলা হয়।

বাউল কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান ছিলেন লালন ফকির। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লালনের গানের ভক্ত ছিলেন। ১৩২২ বঙ্গাব্দে প্রবাসীতে রবীন্দ্রনাথ হারামণি নামে যে সংগ্রহ প্রকাশ করেন তাতে লালনের কুড়িটি গান ছিল। এর মাধ্যমেই নাগরিক সমাজ প্রথম লালনের গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে।

অনুমান করা হয় ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে লালন কুষ্টিয়ার ভাড়ারা গ্রামে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। লালনের শিক্ষা, ধর্মান্তর ইত্যাদি নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। লালনের নিজের হাতে লেখা কোনাে গানের পুথি পাওয়া যায়নি। শিষ্যরা তাঁর গাওয়া গানগুলিকেই লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।

লালন বিশ্বাস করতেন দেহের ভিতরেই পরমসত্যের অবস্থান। কিন্তু তাকে পাওয়া খুব সহজ নয়—

‘কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে।

হারায়ে মানুষ দেশে বিদেশে বেড়াই ঘুরে।।”

লালনের মতে ঈশ্বর বা মনের মানুষ’ এর সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে পারেন একমাত্র যথার্থ মুর্শিদ বা গুরু। তাই ‘মুর্শিদ ভজনা বিনে জীবের উপায় নাই।’ আত্মতত্ত্বকে সার জেনে লালনের এই অন্বেষণ চলে। লালনের ধর্মসাধনায় সাম্প্রদায়িকতার জায়গা ছিল না।

এভাবেই উদার অসাম্প্রদায়িক এক ধর্মচেতনাকে তার গানের সহজ সুরে প্রচার করেছিলেন লালন। মুহম্মদ আবদুল হাই যথার্থই বলেছেন- “লালন শাহের গানের মধ্যে জীবন-স্পন্দন পাওয়া যায় এবং গানগুলাে আনন্দদায়ক। … প্রকৃতপক্ষে লালন শাহ অশিক্ষিত হলেও তাঁর গান জ্যোতির্ময়।”

বাংলাদেশে বিশেষ এক যােগীদের সাধনধর্মই হল নাথধর্ম। শৈবধর্মের সঙ্গে ক্রমশ গরিমা হারানাে বৌদ্ধধর্মের মিশ্রণেই নাথধর্মের উৎপত্তি। আর এই নাথ সম্প্রদায়ের যােগীদের নিয়ে যেসব কাহিনি গড়ে উঠেছিল, সেগুলােই নাথ সাহিত্যের বিষয়। কাহিনিগত ভিত্তিতে নাথ সাহিত্যের দুটি ভাগ-

  • গােরক্ষবিজয় বা মীনচেতন: গুরু মীননাথ মােহগ্রস্ত হয়ে কমলা ও মঙ্গলকে রানি করে কদলী রাজ্যে রাজা হয়ে বসেন। এতে তিনি সাধনধর্ম থেকে ভ্রষ্ট হন। শিষ্য গােরক্ষনাথ এসে তাকে মুক্ত করেন।

  • ময়নামতীর গান বা গােপীচন্দ্রের গীত: সংসারভােগী রাজা গােপীচন্দ্র কীভাবে রাজমাতা ময়নামতীর দ্বারা সন্ন্যাসধর্মে আকৃষ্ট হন তা এই গ্রন্থের বিষয়।

‘গােরক্ষবিজয়’-এর কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শ্যামদাস সেন, শেখ ফয়জুল্লা, কবীন্দ্র দাস, ভীমসেন রায় প্রমুখ। অন্যদিকে, ময়নামতীর গান-এর কবিরা হলেন দুর্লভ মল্লিক, ভবানী দাস, সুকুর মামুদ প্রমুখ। গােরক্ষবিজয়’ কাব্য মূলত তত্ত্বপ্রধান। ইন্দ্রিয়সুখে বিভ্রান্ত মানুষের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাধনধর্মের প্রতি অবিচলিত নিষ্ঠাই এই কাব্যের মূল কথা। অন্যদিকে, ‘ময়নামতীর গান’-এ মানবিক আবেগ গুরুত্ব পেয়েছে। নাথসাহিত্যে অমার্জিত স্থূলরুচি লক্ষ করা যায়। তবুও সহজসরল অনাড়ম্বর ভাষায় নাথ-কবিরা যে-জীবনের কথা বলেছেন তা সাধারণ মানুষের জীবনভাবনা ও আচরণেরই প্রকাশ হয়ে উঠেছে।

মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্যের ইতিহাসে পূর্ববঙ্গ গীতিকা’র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ এবং তার পরবর্তীকালে পাওয়া কিছু গান একত্রে পূর্ববঙ্গ গীতিকা নামে পরিচিত। তবে পূর্ববঙ্গ গীতিকা বলতে প্রধানত ময়মনসিংহ গীতিকাকেই বােঝায়। চন্দ্রকুমার দে প্রথম এই ময়মনসিংহ গীতিকা-কে সংগ্রহ করেন। এই গীতিকা পালাভিত্তিক। আঁধা বঁধু, মহুয়া, মলুয়া, কমলা, দস্যু কেনারাম, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা, দেওয়ানা মদিনা ইত্যাদি পূর্ববঙ্গ গীতিকার উল্লেখযােগ্য পালা। পূর্ববঙ্গ গীতিকার উল্লেখযােগ্য কবিদের মধ্যে দ্বিজ কানাই, দ্বিজ ঈশান, নয়নচাঁদ ঘােষ, চন্দ্রাবতী, মনসুর বয়াতি প্রমুখের নাম উল্লেখযােগ্য।

ময়মনসিংহ গীতিকায় লৌকিক প্রেমকাহিনি, বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক আখ্যান এবং ঐতিহাসিক-রােমান্টিক আখ্যান এই- তিনটি ধারার পরিচয় পাওয়া গেলেও লৌকিক প্রেম ও তার পরিণতিই এই গীতিকায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ময়মনসিংহ গীতিকার কবিরা পুথিগত বিদ্যার অধিকারী ছিলেন না। পালাগানের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেওয়াই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। কখনও সমাজনিষিদ্ধ প্রেম, কখনও প্রেমের জন্য আত্মত্যাগ এ সবের রূপায়ণে একদিকে আখ্যানধর্মিতা, নাটকীয়তা ইত্যাদি যেমন আছে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং গীতিময়তাও পূর্ববঙ্গ গীতিকায় যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে। “মেঘের সমান কেশ তার তারার সম আখি”—এরকম কাব্যিক পঙক্তি বারেবারেই রচিত হয়েছে পূর্ববঙ্গ গীতিকায়। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ, সেখানকার মানুষের সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, সংস্কার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে পূর্ববঙ্গ গীতিকায়। প্রেমিক হিসেবে মহুয়া, তপস্বী হিসেবে চন্দ্রাবতী ইত্যাদি নারীচরিত্র উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এখানে। এইভাবে বাঙালি লােকায়ত জীবনের অসামান্য প্রকাশ হিসেবে পূর্ববঙ্গ গীতিকাসমূহ বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছে।

‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের বণিক খণ্ডের কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।

‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবির আত্মকাহিনির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের আখেটিক খণ্ডের কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।

মুকুন্দরামের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর জীবন ও কবি-প্রতিভা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।

বাংলা মঙ্গলকাব্যের ধারায় শিবায়ন কাব্যটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বিদ্যাপতি বাংলা ভাষায় কিছু লেখেননি, তবু তাকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেন?

কবি বিদ্যাপতির জীবন-পরিচয় দাও।

বিদ্যাপতির কবিপ্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

গােবিন্দদাসকে ‘বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য’ বলা হয় কেন?

বাংলার বৈষ্ণব পদসাহিত্যে চণ্ডীদাসের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

জ্ঞানদাসকে ‘চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য’ বলার যৌক্তিকতা বিচার করাে।

বৈষ্ণব পদাবলির যে-কোনাে একজনের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

বৈষ্ণব পদকর্তা গােবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

প্রাকচৈতন্য এবং চৈতন্য-পরবর্তী যুগের বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে তুলনামূলক আলােচনা করাে।

বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যদেবের প্রভাব আলােচনা করাে।

বাঙালির সমাজজীবনে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের গুরুত্ব আলােচনা করাে।

শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকাহিনি সংক্ষেপে লেখাে।

বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের সাধারণ পরিচয় দিয়ে কাব্যটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখাে।

কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যজীবনী কাব্যের সাধারণ পরিচয় দিয়ে কাব্যটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বাংলার ইতিহাসে আরাকান রাজসভার পরিচয় দাও।

বাংলা সাহিত্যে আরাকান রাজসভার অবদান লেখাে।

দৌলত কাজির জীবন ও কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

সৈয়দ আলাওলের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

কোন্ রাজসভার কোন্ কবি পদ্মাবতী রচনা করেন? এই কাব্যের বৈশিষ্ট্য কী?

অষ্টাদশ শতাব্দীর যুগবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।

রামপ্রসাদ সেনের কবিপ্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।