‘কন্নড়’ ও ‘তেলুগু’ হল দ্রাবিড় গােষ্ঠীভুক্ত দুটি সাহিত্যগুণসম্পন্ন ভাষা।

কন্নড়: কর্নাটক রাজ্যের প্রধান ভাষা কন্নড়। তবে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল-এও এই ভাষার প্রচলন লক্ষ করা যায়। কন্নড় ভাষা তামিল থেকেই উদ্ভূত। তবে, প্রাচীনতম দ্রাবিড়ীয় শিলালিপি (৪০০ খ্রিস্টাব্দ) কন্নড় ভাষাতেই লেখা। তামিলের মতাে কন্নড় ভাষারও আঞ্চলিক রূপভেদ রয়েছে। যেমন-

  • মহীশূর,

  • চিত্রদুর্গ,

  • ধারওয়ার,

  • উত্তর কানাড়া,

  • দক্ষিণ কানাড়া,

  • হাসান,

  • বেল্লারি,

  • গুলবর্গা ইত্যাদি। 

মহীশূর ও ধারওয়ার অঞ্চলে প্রচলিত ভাষারূপটি নিয়েই গঠিত হয়েছে মান্য চলিত কন্নড় বা শিষ্ট কন্নড় ভাষা। কন্নড় লিপি তেলুগু ভাষার লিপির মতােই। ২০০১-এর জনগণনা অনুযায়ী কন্নড়ভাষীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি।

তেলুগু: নগগঠিত তেলেঙ্গনাসহ অন্ধ্রপ্রদেশের প্রধান ভাষা তেলুগু। তেলুগু ভাষার চারপ্রকার আঞ্চলিক রূপভেদ আছে। এই অঞ্চলগুলি হল—

  • শ্রীকাকুলম ও বিশাখাপত্তনম জেলা (উত্তরাঞ্চল),

  • কৃষ্ণ গুন্টুর ও গােদাবরী জেলা (মধ্যাঞ্চল),

  • আদিলাবাদ, করিমনগর, ওয়ারাঙ্গল, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি জেলা অর্থাৎ তেলেঙ্গানা অঞ্চল (পশ্চিমাঞ্চল) এবং

  • কোরমু, অনন্তপুরম, নেল্লোর ইত্যাদি জেলা (দক্ষিণাঞ্চল)।

মধ্যাঞ্চলে প্রচলিত তেলুগু র আঞ্চলিক রূপটিই মান্য চলিত তেলুগু অর্থাৎ শিষ্ট ভাষা। তেলুগু লিপি কন্নড় লিপির সঙ্গে অভিন্ন। ব্রাত্মী লিপি-উদ্ভূত পহুব লিপি থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই লিপি তৈরি হয়। ২০০১-এর জনগণনা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ তেলুগু ভাষায় কথা বলেন।

ভারতে আর্যদের আগমনের বহু আগেই মঙ্গোলয়েড জাতির লােক অর্থাৎ মঙ্গোলরা ভারতে প্রবেশ করেন। এই মঙ্গোল জাতির মানুষরাই ভােট-চিনা বা চিনা-তিব্বতীয় ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষাবংশের তিনটি শাখা—

  • চিনীয় (Chinese),

  • থাই (Thai) এবং

  • ভােট বর্মি (Tibeto-Burmese)।

একটি শাখা চীন দেশের হােয়াং হাে নদীর তীরে উন্নত এক সভ্যতার পত্তন করে। এটাই চিনীয় শাখা। দ্বিতীয় শাখা দক্ষিণে শ্যামদেশ (বর্তমান থাইল্যান্ড)-এ গিয়ে নতুন এক জাতিতে পরিণত হয়। এটাই থাই শাখা। তৃতীয় শাখার প্রথম দল ব্ৰহ্লাদেশ অর্থাৎ মায়ানমারে গিয়ে বর্মি জাতিতে পরিণত হয়। ভােট-বর্মি শাখার অন্য দলটি তিব্বতে যায়। তাদের মধ্যে একদল হিমালয় অতিক্রম করে হিমালয়ের পূর্বাংশের পাদদেশে এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে গিয়ে উপস্থিত হয়। এই তিনটি শাখা ছাড়াও য়েনিসি (Yenissi) নামক আরও একটি শাখা ভােট-চিনা ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত।

ভােট-চিনা ভাষাবংশের চিনীয় শাখার প্রধান ভাষা হল মান্ডারিন চাইনিজ। এই ভাষায় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি লোক কথা বলে। এরপরই উল্লেখ্য ক্যাস্টনিজ চাইনিজ। থাই শাখার ভাষা শ্যামদেশ বা থাইল্যান্ডের ভাষা ‘থাই’ (Thai) এবং আসাম অরুণাচলের খামতি। ভােট-বর্মি শাখার ভাষা হল তিব্বতি (Tibetan) বা ভােট এবং ব্রহ্মদেশ অর্থাৎ মায়ানমারের বর্মি (Burmese)। এ ছাড়া, হিমালয়ের পূর্বাংশের পাদদেশে এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশে প্রচলিত আছে মণিপুরি, বােড়া, কুকি, ভুটিয়া, মিজো, লেপচা, নাগা প্রভৃতি ভাষা। কাশ্মীরের লাদাখ, হিমাচল প্রদেশের লাহুল ও স্পিতি জেলায় ভােট-বর্মি শাখার ভাষাবৈচিত্র্য দেখা যায়। পূর্ব হিমালয়ের সিকিমে ভােটিয়া, ভুটানি, শেরপা ও কাগতেরা যেসব ভাষায় কথা বলে, তা-ও ভােট বর্মি উপশাখার ভাষা। চট্রগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত মােঘ ও ম্রু ভাষাও এই শাখার অন্তর্গত।

পৃথিবীতে মঙ্গোল জাতির মানুষরাই ভােট-চিনা বা চিনা-তিবৃতীয় ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেন। মাত্র এক কোটি মঙ্গোল ভারতবাসী ভােট-চিনা ভাষাবংশের অন্তর্গত ভােট বর্মি শাখার বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেন। ভােট-চিনা ভাষাবংশের ভারতীয় ভাষাগুলিকে ৪টি উপশাখায় ভাগ করা হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং মণিপুর অঞ্চলে প্রচলিত সেই উপশাখাগুলি হল-

  • বােরা বা বােড়াে: এই উপশাখায় অন্তত ২২টি ভাষা আছে। উল্লেখযােগ্য ভাষাগুলি হল কাছারি, রাভা, কোচ, গারাে, মেচ, টিপা (ত্রিপুরি উপজাতির ভাষা)।

  • নাগা: এই ভাষা-উপশাখার অন্তর্গত ভাষা হল আও, আঙ্গামি, সেমা, লােথা ইত্যাদি।

  • কুকিচিন: আসামের লুসাই পার্বত্যাঞ্চল, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচলিত এই উপশাখার অন্তর্গত ভাষাগুলি হল মণিপুরের মেইতেই, লুসাই বা মিজো, কুকি ইত্যাদি।

  • বর্মি: চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল মােঘ এবং ম্রু এই শাখার অন্তর্গত।

ভারতে প্রচলিত ভােট-চিনা ভাষাগুলির মধ্যে টিপা, মেইতেই (বঙ্গলিপিতে লিখিত) বাদে বাকি প্রায় সবই মৌখিক ভাষা। সেইসব ভাষাভাষীরা ক্রমে ক্রমে আর্য ভাষাকেই গ্রহণ করছে। তবুও এক কোটির মতাে ভারতবাসী এখনও এই ভাষাবংশের ভাষাগুলিতে কথা বলে।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্য বা ইন্দো ইরানীয় ভাষাভাষী জনগােষ্ঠীর একটি শাখা ভারতে প্রবেশ করে। এই ভাষাই ভারতীয় আর্য ভাষা নামে পরিচিত। ভারতীয় আর্য ভাষার ইতিহাসকে তিনটি প্রধান যুগে ভাগ করা হয়, তার প্রথমটি প্রাচীন ভারতীয় আর্য (Old Indo Aryan, O.I.A., আনু, ১৫০০ খ্রি.পূ. থেকে ৬০০ খ্রি.পূ.)।

প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার প্রথম নিদর্শন হল ঋগ্বেদের ভাষা বৈদিক। বৈদিক ভাষাকে দুভাগে ভাগ করা যায়-

  • কথ্য বৈদিক ভাষা বা কথ্য প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা এবং

  • লেখ্য প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা বা সাহিত্যিক প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা বা ছান্দস।

কথ্য বৈদিক ভাষার চারটি আঞ্চলিক রূপভেদ ছিল—

  • প্রাচ্য উদীচ্য

  • মধ্যদেশীয় এবং

  • দাক্ষিণাত্য।

এরপর আনুমানিক ৫০০ অব্দে পাণিনি রচনা করেন বৈদিক ভাষার ব্যাকরণ-গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ী। পাণিনি বহু শাখায় বিভক্ত জটিল বৈদিক ভাষাকে বিশ্লেষণ করে, সেই ভাষাকে একটি শিষ্ট ভাষায় পরিণত করেন। বৈদিক ভাষার সংস্কারকৃত রূপই হল সংস্কৃত ভাষা। কালিদাস, অশ্বঘােষ, ভবভূতি, ভারবি, বিশাখদত্ত, শূদ্রক, বাণভট্ট প্রভৃতি কবি নাট্যকার-গদ্যকারের পৃথিবী বিখ্যাত রচনাগুলি এই ভাষাতেই রচিত।

অস্ট্রিক ভাষাবংশ এবং অস্ট্রিক ভাষাভাষীদের সাধারণ পরিচয় দাও। অস্ট্রিক ভাষাবংশের অস্ট্রোনেশীয় (Austronesian) ভাষা শাখাটির পরিচয় দাও।

ভারতে প্রচলিত অস্ট্রিক ভাষার উপশাখাটির নাম কী? এই উপশাখাটির বিস্তৃত পরিচয় দাও।

দ্রাবিড় ভাষাবংশের বিস্তৃত আলােচনা করাে।

ভারতে প্রচলিত সাহিত্যগুণসম্পন্ন দ্রাবিড় ভাষাগুলির মধ্যে তামিল ও মালয়ালমের পরিচয় দাও।

বৈদিক ভাষা থেকে কীভাবে সংস্কৃত ভাষার জন্ম হয়েছে তা আলােচনা করে এই ভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের নাম এবং সময়কাল লেখাে।

মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার সময়কাল উল্লেখ করে এই পর্বটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার বিস্তৃতিকাল লেখাে। এর আদি স্তরের পরিচয় দাও।

মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার মধ্য ও অন্ত্য স্তরের পরিচয় দাও।

পৈশাচী, মহারাষ্ট্রী এবং অর্ধমাগধী অপভ্রংশ-অবহটঠ ভাষা থেকে সৃষ্ট নব্য-ভারতীয় আর্যভাষাগুলির পরিচয় দাও।

শৌরসেনী অপভ্রংশ-অবহট্ঠ ভাষা থেকে সৃষ্ট নব্য- ভারতীয় আর্য ভাষাগুলির পরিচয় দাও।

মাগধী অপভ্রংশ-অবহট্ঠ ভাষা থেকে সৃষ্ট নব্য-ভারতীয় আর্য ভাষাগুলির পরিয় দাও।

ওড়িয়া, বাংলা ও অসমিয়া ভাষার পারস্পরিক সম্পর্ক আলােচনা করে এই তিনটি ভাষার পরিচয় দাও।

‘সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার জননী’—এই মত গ্রহণযােগ্য কি না তা যুক্তিসহ আলােচনা করাে।

বাংলা ভাষার ইতিহাসে যুগের বিন্যাস দেখিয়ে প্রত্যেক যুগের সময়সীমা নির্দেশ করাে।

ভারতীয় আর্য ভাষা বলতে কী বােঝ? এই ভাষার ক্রমবিকাশের স্তর কটি ও কী কী? প্রতিটি স্তরের সময়সীমা নির্দেশ করাে।

উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলা ভাষার চারটি ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে। এই ভাষার দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

ভারত চার ভাষাবংশের দেশ—এই চার ভাষাবংশের পরিচয় দাও।

হিন্দুস্থানি ভাষা অর্থাৎ হিন্দি ও উর্দু ভাষা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা লেখাে।

প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বাংলা ভাষা উদ্ভবের ধারাটি উদাহরণসহ আলােচনা করাে।