শিক্ষামনােবিজ্ঞান ফলিত মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা। শিক্ষাক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানের প্রয়ােগকেই শিক্ষামনােবিজ্ঞান বলে। কয়েকজন শিক্ষামনস্তত্ত্ববিদের দেওয়া শিক্ষামনােবিজ্ঞানের সংজ্ঞার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে一

  • অধ্যাপক স্যান্ডিফোর্ড (Sandiford) – এর মতে, শিক্ষা মনােবিজ্ঞান ফলিত মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা যা মনােবিজ্ঞানের নীতিগুলিকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়ােগ করে।

  • জাড় (Judd) বলেন, ব্যক্তির জন্ম থেকে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের বিকাশের বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনাই হল শিক্ষামনােবিজ্ঞান।

শিক্ষামনােবিজ্ঞানের সাধারণ লক্ষ্য হল শিক্ষককে তার পেশাগত ও সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যপূরণের জন্য সংগঠিত তথ্য সরবরাহ করা। এই সাধারণ লক্ষ্যকে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা যায়, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণগুলি নীচে বর্ণিত হল

(১) শিশুর বিকাশে সহায়তা: শিক্ষককে বুঝতে সাহায্য করা যে শিশুর বিকাশে, বিষয়বস্তু আয়ত্তীকরণে, উন্নত সামাজিক আচরণ এবং ব্যক্তির সুসংহত বিকাশে শিক্ষকের বিশেষ ভূমিকা আছে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ: শিক্ষণের ফলে বাতি আচরণ নির্দিষ্টকরণেঅর্থাৎ শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণে সাহায্য করা।

(২) শিশুর প্রতি নিরপেক্ষ এবং সহানুভূতিশীল হওয়া: শিশুদের প্রতি নিরপেক্ষ এবং সহানুভূতিশীল মনােভাব গঠন করতে সাহায্য করা যাতে নৈর্ব্যক্তিকভাবে তাদের আচরণ বিচার করা যায়।

(৩) সামাজিকীকরণ: সামাজিক সম্পর্কের প্রকৃতি এবং গুরুত্ব ভালােভাবে বুঝতে সাহায্য করা শিক্ষামনােবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য। শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক কার্যাবলি যেমন অন্যান্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা, দলগত কাজে অংশগ্রহণ ও সহযােগিতা করা ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তুলতে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(৪) শিক্ষাদানের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তথ্য সরবরাহ: শিক্ষাদানে যেসব সমস্যা দেখা যায় তার সমাধানের জন্য তথ্য ও নীতি সরবরাহ করা শিক্ষামনােবিজ্ঞানের আর-একটি লক্ষ্য।

(৫) শিখন প্রক্রিয়াকে সামগ্রিকভাবে বােঝা: শিখন-প্রক্রিয়াটিকে সামগ্রিক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝার জন্য যে পশ্চাৎপটের প্রয়ােজন হয় তার ব্যবস্থা করা এক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

(৬) আচরণ বিশ্লেষণ: শিক্ষামন্নস্তত্ত্ব শিক্ষককে তার নিজের এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকালীন আচরণ বিশ্লেষণ করতে প্রয়ােজনীয় তথ্য ও কৌশল সরবরাহ করে, যা অবশেষে শিক্ষার্থীর সংগতিবিধানে সহায়ক হয় এবং শিক্ষার্থীদের সুসংহত ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে।

(৭) শিক্ষাদান পদ্ধতি: প্রগতিশীল শিক্ষাদান পদ্ধতি, নির্দেশনা কর্মসূচি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ও প্রশাসনের ব্যাখ্যা এবং তাকে কার্যকরী করা ও স্থায়ী রূপ দেওয়ার কাজে শিক্ষককে সাহায্য করা শিক্ষামনােবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য।

ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষামনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য হল শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা, যাতে শিক্ষাপ্রক্রিয়াটিকে আরও উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত করে তােলা যায়।