বর্তমানে মনস্তত্ত্বের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিখনকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেমন, আচরণবাদীদের মতে, অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের পরিবর্তনকেই শিখন বলে জ্ঞানমূলক তত্ত্বের সমর্থকদের মতে, শিখন হল জ্ঞান, বােধ, দক্ষতা ইত্যাদি অর্জন। নির্মিতিবাদীদের মতে (যেমন পিয়ার্জে), শিখন হল জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া। সামাজিক নির্মিতিবাদীদের মতে (যেমন ভাইগটস্কি), শিখন জ্ঞান নির্মাণের সামাজিক প্রক্রিয়া।

শিখন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণালাভের জন্য এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করা প্রয়ােজন一

(১) উদ্দেশমুখী: প্রথাগত শিক্ষায় শিখন উদ্দেশমুখী অর্থাৎ পূর্বনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আয়ত্ত করার জন্যই শিক্ষার্থীরা শেখে।

(২) বিকাশমান: শিখন হল একটি ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া। জন্মকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে শিখনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

(৩) অভিযােজনমূলক: শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখে এবং নতুন কোনাে সমস্যায় পড়লে সমাধানের পথ খুঁজে বার করে।

(৪) চাহিদা নির্ভর: শিখন প্রক্রিয়া চাহিদানির্ভর অর্থাৎ চাহিদাপূরণ শিখনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(৫) ব্যক্তি ও সমাজ নির্ভর: শিখন যেমন ব্যক্তির চাহিদার ওপর নির্ভর করে তেমনি সমাজের চাহিদার দ্বারা শিখন প্রভাবিত। সমাজ তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা শিখনের মধ্য দিয়েই পূরণ করে।

(৬) আচরণগত পরিবর্তন: ব্যক্তি যখন কোনাে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বার্জিত আচরণের দ্বারা তা সমাধানের চেষ্টা করে, কিন্তু তাতেও সফল না হলে সে নতুন আচরণের দ্বারা সমাধানের চেষ্টা করে। এভাবেই তার। আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

(৭) স্থায়ী পরিবর্তন: শিখনের ফলে যে পরিবর্তন হয় তা স্থায়ী প্রকৃতির। অন্যান্য অস্থায়ী বা সাময়িক পরিবর্তনের সঙ্গে (ক্লান্তি, মাদক গ্রহণের ফলে যা দেখা যায়) শিখনজাত পরিবর্তনের এখানেই পার্থক্য।

(৮) মানসিক উন্নতিতে সহায়ক: শিখনের ফলে ব্যক্তি যে কেবলমাত্র কয়েকটি কৌশল অর্জন করে তা-ই নয়, শিখনের ফলে ব্যক্তির মানসিক উন্নতিও ঘটে।

(৯) অনুশীলনসাপেক্ষ: পুরােনাে আচরণ ত্যাগ করে নতুন নতুন আচরণ আয়ত্ত করার জন্য ব্যক্তিকে বারবার অনুশীলন করতে হয়। অনুশীলন ছাড়া শিখন স্থায়ী হয় না।

(১০) শিখনের হার: পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রথম দিকে শিখন খুব দ্রুত ঘটে। পরে এর হার হ্রাস পায় এবং এমন এক সময় আসে যখন অনুশীলনের ফলেও শিখনের উন্নতি হয় না। একেই শিখনের অধিত্যকা বলে। তবে অতিরিক্ত প্রেষণা এবং পদ্ধতির পরিবর্তনে অধিত্যকা অতিক্রম করা যায়।

(১১) অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন: প্রতিটি শিখনেই অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন ঘটে। অর্থাৎ প্রতিটি শিখনেই পুরােনাে অভিজ্ঞতা নতুন পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত হয়ে কার্যকরী হয়।

(১২) সক্রিয় প্রক্রিয়া: ব্যক্তি নিজে সব্রিয় না হলে শিখন সম্ভব নয়৷ শিখনের জন্য চাই প্রচেষ্টা প্রচেষ্টায় অভাব দেখা দিলে যথাযথ শিখন হয় না।