মাধ্যমিক শিক্ষার জুটি বিষয়ে স্যাডলার কমিশনের বক্তব্য হল一

(১) নিম্নমানের শিক্ষা: সাধারণভাবে মাধ্যমিক শিক্ষার মান নিম্নগামী।

(২) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ: প্রচলিত পরীক্ষাব্যবস্থার দ্বারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা।

(৩) দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ: মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি শিক্ষাবিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা। ফলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযােগ থেকে বঞ্ছিত হয়।

(৪) উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার বাধা: মাধ্যমিক স্তরের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ শেষ দুটি শ্রেণিকে মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করে পড়ানাের ব্যবস্থা হওয়ায় এই স্তরের শিক্ষা অনেকখানি ব্যাহত হয়।

(৫) শিক্ষার্থীদের আর্থিক দুরবস্থা: আর্থিক দুরবস্থার কারণে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

(৬) বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অর্থাভাব: আর্থিক অভাবের কারণে বহু মাধ্যমিক বিদ্যালয় সঠিকভাবে শিক্ষা সম্প্রসারণের কাজ করতে পারে না।

(৭) অনুন্নত বেতনকাঠামাে: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাঠামাে ভালাে না হওয়ায়, মেধাবী ব্যক্তিরা এই পেশায় আসে না।

(৮) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জুটি নিবারণের বা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করেন। সেগুলি হল一

(১) ইন্টারমিডিয়েট স্তর গঠন: মহাবিদ্যালয়ের প্রথম দুই বছরের শিক্ষাক্রম যেহেতু মাধ্যমিক শিক্ষার অঙ্গ, তাই ওই অংশটুকু মহাবিদ্যালয় থেকে বাদ দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। ওই দুই বছরের শিক্ষাস্তরের নতুন নাম হবে ইন্টারমিডিয়েট’ স্তর।

(২) মাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষার দুটি পর্যায়ের প্রচলন: মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দুটি পৃথক পর্যায়ে গৃহীত হবে। প্রথমটি হবে দশম শ্রেণির পাঠ শেষ করার পর। এর নাম হবে ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ এবং দ্বিতীয়টি হবে আরও দুবছরের অতিরিক্ত পাঠ শেষ করার পর। এর নাম হবে ইন্টারমিডিয়েট।

(৩) ইন্টারমিডিয়েট’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: ইন্টারমিডিয়েট স্তরের জন্য দুবছরের মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় বহির্ভূত শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এদের নাম হবে ইন্টারমিডিয়েট’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান| ইন্টারমিডিয়েট স্তরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাখতে হবে। প্রয়ােজনে। কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির পর অতিরিক্ত দুবছরের পাঠক্রম চালু করতে হবে। ইন্টারমিডিয়েট স্তরে কলা, বিজ্ঞান, শিক্ষাতত্ত্ব, কৃষি, বাণিজ্য, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতির পঠনপাঠন চালু করা দরকার।

(৪) মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা পর্ষদ গঠন: মাধ্যমিক এবং ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা পরিচালনার জন্য প্রত্যেক প্রদেশে একটি পর্ষদ গঠন করতে হবে। এই পর্ষদ-এর নাম হবে ‘মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা পর্ষদ’ (Board of Secondary and Intermediate Education) এই পর্ষদ গঠিত হবে সরকারি, বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণের প্রতিনিধিদের নিয়ে। বাের্ড যাতে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয়, তার জন্য বেশিরভাগ সদস্য হবেন বেসরকারি। ওই বাের্ডে জনসাধারণের প্রতিনিধি হিসেবে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায় থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত করতে হবে।

(৫) বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ: ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হলেই কোনাে শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভরতির যােগ্যতা অর্জন করবে।

(৬) পাঠদানের মাধ্যম নির্ধারণ: ইংরেজি ভাষা ও গণিত-এই দুই বিষয়ে পাঠদানের মাধ্যম হবে ইংরেজি। অন্যান্য সকল বিষয়ে শিক্ষার মাধ্যম হবে শিক্ষার্থীর মাতৃভাষা।

(৭) সরকারি অনুদান বরাদ্দ: মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকারি তহবিল থেকে বার্ষিক অতিরিক্ত 40 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে হবে।

(৮) শিক্ষক-শিক্ষণ বিভাগ প্রবর্তন: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক- শিক্ষপ বিভাগ চালু করতে হবে। প্রয়ােজনে স্নাতক স্তরে সাধারণ পাঠক্রমে শিক্ষা তথা Education’কে একটি পাঠ্যবিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।