ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1600 খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই ভারতবর্ষে তাদের ব্যাবসাবাণিজ্যের পথ সুগম করতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রাচ্যবাদীদের মধ্যে লর্ড মিন্টোর প্রস্তাব ছিল ভারতের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1765 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করে।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 13নং ধারাটি ‘মিশনারি ধারা।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 43নং ধারাটি শিক্ষা বিষয়ক ধারা’।

1813 থেকে 1823 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি নিষ্ক্রিয়তার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 43 নং ধারায় বলা হয়েছে—“ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষে সামরিক, অসামরিক ও শিল্প বাণিজ্যের খরচ এবং সরকারি ঋণ ও তার সুদের জন্য খরচ বহন করার পরে রাজস্ব কর ও লাভের আয় থেকে যে পরিমাপ উদ্বৃত্ত হবে, তার থেকে অন্তত কমপক্ষে প্রতিবছর এক লক্ষ টাকা শিক্ষিত ভারতবাসীদের অধিকতর শিক্ষালাভের উৎসাহদানের জন্য ব্যয় করাই হবে সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের আইন সম্মত কাজ।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 13 নং ধারায় বলা হয়েছে— ‘ভারতবাসীদের মধ্যে প্রয়ােজনীয় জ্ঞানের বিস্তার ও তাদের নৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা প্রবর্তনে আগ্রহী যে-কোনাে সংস্থা বা ব্যক্তি ভারতবর্ষে যেতে পারবে এবং তাদের সবধরনের সুযােগসুবিধা প্রদান করা হবে।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 13 নং ধারায় পরােক্ষভাবে মিশনারিদের জয় ঘােষিত হয় কারণ তারা বিনা বাধায় ভারতে প্রবেশের এবং বসবাসের অধিকার লাভ করে। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের বিষয়েও তারা অনেকটা স্বাধীনতা লাভ করে।

1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের 13 নং ধারাটি হল মিশনারি ধারা এবং 43 নং ধারাটি হল শিক্ষা বিষয়ক ধারা।

1813 থেকে 1835 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যর দ্বন্দ্বের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

1833 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতবর্ষ শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কোম্পানি প্রতিবছর দশ লক্ষ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতবাসীর শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রতি বছর এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

1853 খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টারি এনকোয়্যারি কমিটি গঠন করা হয়।

পার্লামেন্টারি এনকোয়ারি কমিটির কয়েকজন সদস্য হলেন—মিস্টার ট্রেভেলিয়ন, স্যার আরস্কিন পেরি, জন ক্লার্ক মার্শম্যান, আলেকজান্ডার ডা এবং রেভারেন্ড জন উইলসন।

GCPI-এর সভাপতি মেকলে 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে উল্লিখিত শিক্ষাধারার ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে 1835 খ্রিস্টাব্দের 2 ফেব্রুয়ারি যে বিশেষ মন্তব্য পেশ করেন, তা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।

টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ছিলেন বড়লাট বেন্টিঙ্ক এর আইন পরিষদের সদস্য এবং শিক্ষা কমিটির সভাপতি। ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব যখন চরমে পৌঁছায় তখন বড়লাট বেন্টিঙ্ক মেকলে-কে 1834 খ্রিস্টাব্দে GCPI-এর সভাপতি নিযুক্ত করেন।

লর্ড বেন্টিঙ্ক 1835 খ্রিস্টাব্দের 7 মার্চ ‘মেকলে মিনিট অনুমােদন করেন।

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের সমাধানের জন্য মেকলে ভারতে এসেছিলেন।

ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রসঙ্গে মেকলে যে মন্তব্য করেছিলেন। তা হল ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ফলে এদেশে এমন এক শ্রেণির মানুষ সৃষ্টি হবে যারা রক্তে ও বর্ণে কেবল ভারতীয় থাকবে কিন্তু রুচি, মতামত, নীতি ও বুদ্ধিতে হবে ইং দর মতাে”।

1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন প্রবর্তিত হয়।

পার্লামেন্টারি এনকোয়ারি কমিটির রিপাের্টের ভিত্তিতে 1854 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাের্ড অব কনট্রোল’-এর সভাপতি চার্লস উড-এর নির্দেশে যে বিশেষ শিক্ষা সনদ রচিত হয়, তাই উড-এর ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।

উড-এর ডেসপ্যাচটি 1854 খ্রিস্টাব্দের 19 জুলাই ভারতে কোম্পানির শাসকদের কাছে প্রেরণ করা হয়।

উড-এর ডেসপ্যাচটি রচনা করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিশিষ্ট কর্মী বিখ্যাত দার্শনিক স্টুয়ার্ট মিল্।

উড-এর ডেসপ্যাচ রচনার ক্ষেত্রে মিশনারি ডাফ্-এর সর্বাধিক প্রভাব ছিল।

স্যার চার্লস উড পরবর্তীকালে লর্ড হ্যালিফ্যাক্স নামে প্রসিদ্ধ হন।

GCPI-এর পুরাে নাম হল জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন।

উড-এর ডেসপ্যাচের একটি উদ্দেশ্য ছিল—ভারতীয় জনগণের মধ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞানের বিস্তার ঘটানাে এবং ভারতের জনগণের বুদ্ধির বিকাশের পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্র গড়ে তােলা।

শিক্ষার বিষয়বস্তু সম্পর্কে উড-এর ডেসপ্যাচে বলা হয়—“প্রাচ্য বিজ্ঞান ও দর্শনের পরিবর্তে পাশ্চাত্য কলা, বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্যই হবে ভারতবাসীর কাছে শিক্ষার বিষয়বস্তু।

1854 খ্রিস্টাব্দে উড-এর ডেসপ্যাচে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য Grant-in-aid প্রথার প্রবর্তন করতে সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ অনুযায়ী এদেশে সর্বপ্রথম Grant-in-aid প্রথা চালু হয়েছিল।

উড-এর ডেসপ্যাচে কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি প্রদেশে একটি করে সরকারি শিক্ষাবিভাগ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ওই পাঁচটি প্রদেশ ছিল বাংলা, বােম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ।

উড সাহেবের দলিলের ঘােষণা অনুযায়ী কিছু শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়মিতভাবে সরকারি সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এই সাহায্য দানকে বলা হয় Grant-in-aid।

‘চুইয়ে পড়া’ নীতি বলতে উপরতলার কতিপয়ের শিক্ষার মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য ছিটেফোটা শিক্ষাকে বােঝায়।

উড-এর ডেসপ্যাচের দুটি উল্লেখযােগ্য প্রভাব হল- সরকারি শিক্ষাবিভাগ স্থাপন ও শিক্ষা অধিকর্তা (D.P.I) এই বিভাগের প্রধান হিসেবে গ্রহণ, সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রবর্তন।

Grant-in-aid-এর সুযােগ গ্রহণ করতে হলে, বিদ্যালয় গুলিকে যেসব শর্তপূরণ করতে হয়, তার দুটি হল বিদ্যালয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটি আইনানুগভাবে নির্বাচিত হবে।

উড-এর ডেসপ্যাচে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আইন, চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের সুপারিশ করা হয়।

উড-এর ডেসপ্যাচে বলা হয় যে, এদেশে স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ঘটেনি, অথচ উপযুক্ত স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ছাড়া জনশিক্ষার অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই উডের ডেসপ্যাচে অধিক সংখ্যক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

পাঠশালায় গুরুমশাইরা উচ্চশ্রেণির যােগ্য ছাত্রদের হাতে নিম্নশ্রেণির পাঠদানের ভার ছেড়ে দিতেন। একে সর্দার পড়াে প্রথা বলা হত।

উড-এর ডেসপ্যাচে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয় যে— শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নর্মাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ কালে তাদের বৃত্তিদানের সুপারিশও করা হয়।

সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রসঙ্গে উড-এর ডেসপ্যাচে কিছু সুপারিশ করা হয়। মুসলমানদের জন্য পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তােলার সুপারিশ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছে সহজে পৌছানাের জন্য উড ডেসপ্যাচে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের ইংরেজিতে লেখা বইগুলি দেশীয় ভাষায় অনুবাদের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

উড-এর ডেসপ্যাচে বলা হয়—স্তরবিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থার চূড়ায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ মহাবিদ্যালয়সমূহ, মাঝে থাকবে হাইস্কুল শিক্ষা তথা মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সর্বনিম্নস্তরে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা।

উড-এর ডেসপ্যাচে ভারতের তিনটি অঞ্চলে—কলকাতা, বােম্বাই এবং মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

উড-এর ডেসপ্যাচ বলা হয়—কলকাতা, বােম্বাই এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন একজন আচার্য, একজন উপাচার্য এবং কয়েকজন সরকার মনােনীত সদস্যের দ্বারা গঠিত ‘সিনেট।

উড-এর ডেসপ্যাচে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।

উড-এর নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ‘ম্যাগনা কার্টা’ বলা হয়।

‘ম্যাগনা কার্টা’ হল ইংল্যান্ডের জনসাধারণের একটি অধিকার পত্র। 1215 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা জনের কাছ থেকে ব্রিটিশ জনসাধারণ স্বাধিকার সম্পর্কিত এই সনদপত্রটি আদায় করেন।

উড-এর ডেসপ্যাচের ফলে সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের শিক্ষার বিষয়ে দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছিল। মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও ক্ষোভ প্রশমনের ব্যবস্থা হয়েছিল।

1854 খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচে কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি প্রদেশে একটি করে সরকারি শিক্ষা বিভাগ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

ইংল্যান্ডে যে Board of Control গঠিত হয়েছিল, তার সভাপতি ছিলেন চার্লস উড৷

“শিক্ষিত ভারতবাসীই হবে ভারতে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার স্তম্ভম্বরূপ”—এই মন্তব্যটি পার্লামেন্টারি এনকোয়্যারি কমিটি (1853)-র সদস্যদের।

প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্যার উইলিয়ম উইলসন হান্টার।

হান্টার কমিশন গঠনের আট মাস পরে সরকারের কাছে রিপাের্ট পেশ করা হয়।

1870 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রাথমিক শিক্ষা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনে আসে।

1882 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারি ভাইসরয় লর্ড রিপন প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়ােগ করেন।

প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের চারজন ভারতীয় সদস্য হলেন—আনন্দমােহন বসু, মহারাজ যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভূদেব মুখােপাধ্যায়, জাস্টিস কে. তেলাং এবং সৈয়দ মামুদ।

হান্টার কমিশনের ওপর প্রদত্ত প্রধান দুটি দায়িত্ব হল দেশের প্রাথমিক শিক্ষা পর্যবেক্ষণ করে কমিশন প্রয়ােজনীয় সুপারিশ দান করবে। দেশের সরকারি বিদ্যালয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আগামী দিনে ভারতের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ওই বিদ্যালয়গুলির কী ভূমিকা হবে সে সম্পর্কে কমিশন মতামত দেবে।

হান্টার কমিশন 1883 খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছে 222টি প্রস্তাব সমন্বিত প্রতিবেদন জমা দেয়।

হান্টার কমিশনের রিপাের্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল প্রায় 600।

হান্টার কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে সুপারিশের ক্ষেত্রগুলি হল— —শিক্ষানীতি, প্রশাসন, অর্থ, পাঠক্রম, শিক্ষক-শিক্ষা ইত্যাদি।

প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব ও পরিচালনার ভার জেলা বাের্ড ও মিউনিসিপ্যাল বাের্ডগুলির ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয় সম্পর্কে হান্টার কমিশনের একটি সুপারিশ হল—প্রত্যেক জেলা বাের্ড এবং মিউনিসিপ্যাল বাের্ডকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি করে পৃথক তহবিল গঠন করতে হবে। স্থানীয় ও প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে একটা বড়াে অংশ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ হল—প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা বা মাতৃভাষা।

হান্টার কমিশনের মতে প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে থাকবে দেশীয় গণিত, হিসাব শিক্ষা, জরিপ, ভৌতবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্পকলা, কৃষিবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়সমূহ।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক ও চারিত্রিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা, ব্যায়াম, স্কুলড্রিল ইত্যাদি বিষয়গুলিকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রসঙ্গে হান্টার কমিশনের সুপারিশ হল—শিক্ষক শিক্ষণের জন্য প্রত্যেক মহকুমায় একটি করে নৰ্যাল স্কুল স্থাপন করতে হবে এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে এর দায়িত্ব এবং ব্যয়ভার গ্রহণ করতে হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব ধীরে ধীরে বেসরকারি কর্তৃপক্ষবা সংস্থার উপর ন্যস্ত করতে হবে এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মতাে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।

হান্টার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে A কোর্স এবং B কোর্স নামে দুটি কোর্স চালু করার প্রস্তাব দেন।

হান্টার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, A কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রস্তুতির জন্য তত্ত্বমূলক শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং B কোর্সের শিক্ষার্থীরা ব্যাবহারিক বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাগ্রহণ করবে।

কমিশন ধর্মশিক্ষার বিষয়টি বিচারবিবেচনা করে ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিক শিক্ষাদানের সুপারিশ করে। এককথায় কমিশন ধর্মকে শিক্ষার বাইরে রাখার সুপারিশ করেন।

ভারতে প্রথম শিক্ষা কমিশনটির নাম হান্টার কমিশন।

লর্ড কার্জন 1901 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার জন্য সিমলার শিক্ষা সম্মেলন আহবান করেন।

লর্ড কার্জন 1902 সালের 27 জানুয়ারি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নিয়ােগ করেন।

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন স্যার টমাস র্যালের নেতৃত্বে নিয়ােগ হয়।

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন 1902 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তাদের রিপাের্ট প্রকাশ করে।

লর্ড কার্জন 1904 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ একটি সরকারি সিদ্ধান্তের আকারে তার শিক্ষানীতি প্রকাশ করেন।

লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি Government of India’s Resolution on Education Policy, 1904’ নামে পরিচিত ছিল।

1904 খ্রিস্টাব্দের 21 মার্চ ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’-এ প্রথম ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিল উপস্থাপন করেন।

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে সিন্ডিকেট।

1917 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের লিডস্ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মাইকেল স্যাডলার-কে সভাপতি করে ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন করা হয়।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ‘স্যাডলার কমিশন’ নামে পরিচিত।

‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনে’ ভারতীয় সদস্য হিসেবে ছিলেন-স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় এবং ড. জিয়াউদ্দীন আহম্মদ।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অভারতীয় সদস্য হলেন—স্যার ফিলিপ হার্টগ, ডক্টর গ্রেগরি, এবং অধ্যাপক মুর।

স্যাডলার কমিশনের রিপাের্ট 1919 খ্রিস্টাব্দে তেরোটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়।

ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় স্যাডলার মশন 1917 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট স্তরের সুপারিশ করে।

দশম শ্রেণির পাঠ তথা ম্যাট্রিকুলেশনের পরের আরও দুই বছরে অতিরিক্ত পাঠ হল ইন্টারমিডিয়েট স্তর।

1944 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে যুদ্ধোত্তর ভারতের জন্য স্যার জন সার্জেন্ট-এর তত্ত্বাবধানে শিক্ষা পরিকল্পনার যে খসড়া বা রিপাের্ট প্রস্তুত করা হয়, তা সার্জেন্ট পরিকল্পনা বা সার্জেন্ট রিপাের্ট নামে পরিচিত।

সার্জেন্ট পরিকল্পনার রিপাের্টটি প্রকৃতপক্ষে ‘Report on Post War Educational Development in India-1944’ at প্রকাশিত হয়েছিল।

সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল-মাধ্যমিক শিক্ষা হবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল শিক্ষার শেষে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য কর্মসংস্থান কেন্দ্র (Employment Exchange Centre) প্রতিষ্ঠা করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই জাতীয় সংস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় শিক্ষা প্রশাসন বিষয়ে একটি সুপারিশ হল শিক্ষা প্রশাসন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার যৌথ ভাবে আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

জনগণকে দেশের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তােলার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক স্কুল কমিটি এবং স্কুলবাের্ড গঠন করতে হবে। এই বিষয়টি সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়।

CABE-এর পুরাে কথাটি হলো Central Advisory Board of Education।

সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস প্রবর্তনের ব্যবস্থা সম্পর্কে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় সুপারশি করা হয়।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রসঙ্গে সার্জেন্ট রিপাের্টে বলা হয়-মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব প্রতিটি প্রাদেশিক সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।

পরাধীন ভারতবর্ষের সার্জেন্ট পরিকল্পনায় (1944) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ (CABE)-কে যথেষ্ট ক্ষমতা ও দায়িত্ব দানের সুপারিশ করা হয়।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়—মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা, ড্রিল, ব্যায়াম, শরীরচর্চা প্রভৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যাবলি পরিচালনার সুযােগ সৃষ্টি করতে হবে।

সার্জেন্ট রিপাের্টে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকুরির ক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়।

সার্জেন্ট রিপাের্টে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রসঙ্গে বলা হয়-প্রতিবন্ধীদের প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের জন্য বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরশিক্ষাকে আবশ্যিক করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা বিষয়ে বলা হয়- প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিক্ষালয়ে ভর্তির সময়ে, নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষা শেষে এবং ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষে স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়।

প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে সার্জেন্ট পরিকল্পনার একটি সুপারিশ হল 3 থেকে 6 বছর বয়সের শিশুদের জন্য পৃথক নার্সারি বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়ােজন।

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক প্রসঙ্গে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়—প্রাথমিক শিক্ষায় পুরুষ-শিক্ষকের পরিবর্তে অধিক সংখ্যক মহিলা-শিক্ষক নিযুক্ত করতে হবে।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষাকে দুটি স্তরে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল নিম্নবুনিয়াদি এবং বুনিয়াদি।

সার্জেন্ট পরিকল্পনায় মাধ্যমিক স্তরে যে দুই ধরনের বিদ্যালয় গঠনের কথা বলা হয়, তা হল- অ্যাকাডেমিক বিদ্যালয় এবং টেকনিক্যাল বিদ্যালয়।

সার্জেন্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, অ্যাকাডেমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ কলা এবং বিজ্ঞান শাখার পঠনপাঠনের সুপারিশ করা হয়।

সার্জেন্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকনিক্যাল বিদ্যালয়ে ফলিত বিজ্ঞান, শিল্প ও বাণিজ্য শাখার পঠনপাঠনের সুপারিশ করা হয়।