সূচনা: ম্যান্ডারিনরা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী চিনের আমলা। চিনা শাসনতন্ত্রে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে তারা সম্রাটের সহযােগী ছিলেন।

[1] ম্যান্ডারিনদের যোগ্যতা: চিনা উচ্চপদস্থ আমলা অর্থাৎ ম্যান্ডারিনদের বেশ কিছু যােগ্যতার অধিকারী হতে হত।

  • রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা: প্রার্থী ইতিপূর্বে স্থানীয় বা প্রাদেশিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত থেকে কোনাে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন কি না তাও দেখা হত।

  • ধ্রুপদি চিনের ঐতিহ্যের ধারণা: ম্যান্ডারিন পদপ্রার্থীর ধ্রুপদি চিনের ঐতিহ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার ছিল।

  • অন্যান্য যােগ্যতা: জেলখাটা আসামি, শ্রমিক, অভিনেতা, গায়ক, পাহারাদার, ক্রীতদাস, ভিক্ষুক প্রমুখ ম্যান্ডারিন পদপ্রার্থী হতে পারতেন না।

[2] নিয়ােগ ও পদচ্যুতি: ম্যান্ডারিন পদপ্রার্থীদের নিয়ােগ করার আগে যােগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা নেওয়া হত। এই পরীক্ষায় কনফুসীও আদর্শ, তাওবাদ, সাহিত্য, কাব্য, সাধারণজ্ঞান, রাজনীতি এবং ধ্রুপদি চিনের ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রশ্ন রাখা হত। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রথমে স্থানীয়, প্রাদেশিক বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী হিসেবে নিয়ােগ করা হত। সাধারণত ম্যান্ডারিনদের একই জায়গায় দীর্ঘদিন না রেখে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করে দেওয়া হত। ম্যান্ডারিনরা তাদের কাজে অবহেলা দেখালে বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে বা সাম্রাজ্য বিরােধী কাজে লিপ্ত হলে প্রমাণ সাপেক্ষে তারা সম্রাট কর্তৃক পদচ্যুত হতেন।

[3] মর্যাদা ও বেশভূষা: চিনের সমাজে উচ্চস্তরের ম্যান্ডারিনগণ যথেষ্ট সম্মানের অধিকারী ছিলেন। বিশেষত চিনের কিং বংশের রাজাদের আমলে চিনের সমাজে রাজপরিবার ও প্রধানমন্ত্রীর পরেই মর্যাদা ভােগ করতেন। উচ্চস্তরের ম্যান্ডারিনগণ উচ্চস্তরের ম্যান্ডারিনগণ মূল্যবান ধাতুর অলংকারযুক্ত ও রত্নখচিত পােশাক পরতেন। তারা দামি পদ্মরাগমণিযুক্ত টুপি মাথায় দিতেন। মধ্য ও নিম্ন স্তরের ম্যান্ডারিনগণও যথেষ্ট ব্যয়বহুল জীবন যাপন করতেন। তারাও জমকালাে পােশাক পরতেন এবং প্রবাল, লাপিস- লাজুলি, সােনা, রুপা প্রভৃতি রত্নখচিত টুপি মাথায় দিতেন।

[4] অবসান: উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষাধারার অনুপ্রবেশ ঘটলে চিনে ম্যান্ডারিনদের নিয়ােগ পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয় (১৯০৫ খ্রি.)। চিনে কিং রাজবংশের পতন ঘটার (১৯১১ খ্রি.) পর সামগ্রিকভাবে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটে।

[1] কার্যাবলি: চিনের কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্যসচিবালয়ের অধীনে ম্যান্ডারিনদের একাধিক কাজ করতে হত। যেমন-

  • প্রশাসন পরিচালনায় সাহায্য: চিনের ম্যান্ডারিনরা প্রশাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে যাবতীয় কাজ পরিচালনা করতেন।

  • রাজকার্যে সাহায্য: সর্বোচ্চ স্তরের ম্যান্ডারিনগণ যেহেতু চিনা সম্রাটের প্রধানমন্ত্রীর সমগােত্রীয় ছিলেন, তাই তারা প্রত্যক্ষভাবে রাজাকে সহায়তা করার সুযােগ পেতেন।

  • সাম্রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা: মধ্যে ও নিম্ন স্তরের ম্যান্ডারিনগণ প্রদেশ বা স্থানীয় অঞ্চলগুলিতে শান্তিগৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নিতেন।

  • অন্যান্য কাজ: ম্যান্ডারিনরা ব্যাবসা বানিজ্যে তদারকি করা, আর্থিক ক্ষেত্রে সচলতা রক্ষা করা, সাহিত্য-সংস্কৃতির দিকটি দেখাশােনা করা প্রভৃতি কাজও করতেন।

[2] গুরুত্ব

  • সাম্রাজ্যের যুগের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে: চিনের সাম্রাজ্যের যুগের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ম্যান্ডারিনগণ। খ্রিস্টপূর্ব একবিংশ শতক থেকে সিয়া রাজবংশের মাধ্যমে চিনে যে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছিল তাকে দীর্ঘস্থায়ী করার ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল।

  • জেন্ট্রি সম্প্রদায়ের উত্থানে: চিনের সমাজে ম্যান্ডারিনগণ বিশেষ সুবিধাভােগী এবং বিশিষ্ট সম্প্রদায় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই ম্যান্ডারিনদের থেকেই পরবর্তীকালে চিনে জেন্ট্রি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটেছিল।