প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় ক্রীতদাস প্রথার প্রসার ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর প্রাচীনতম বিভিন্ন সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে স্থান এবং কালভেদে ক্রীতদাসদের অবস্থার পার্থক্য ছিল।
[1] সুমেরীয় সভ্যতায়: খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০৫০ অব্দের মধ্যে খােদিত একটি প্রাচীন সুমেরীয় ফলকে (পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলক) ক্রীতদাস সম্পর্কিত আইনবিধির (Code of Ur-Nammu) উল্লেখ রয়েছে।
[2] ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়: হামুরাবির আইনবিধিতে প্রাচীন ব্যাবিলন সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
[3] মেসোপটেমীয় সভ্যতায়: সুপ্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতায় কৃষিকাজে ক্রীতদাসরা নিযুক্ত হত বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়।
[4] পারস্য সভ্যতায়: প্রাচীন পারস্যে যুদ্ধবন্দি ও বিদ্রোহী সেনাদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
[5] মিশরে: প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। মিশরে অট্টালিকা ও পিরামিড নির্মাণে ক্রীতদাসরা নিযুক্ত হত।
[6] হিব্রু জাতির মধ্যে: প্রাচীন হিব্রু জাতির মধ্যেও ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ছিল বলে বাইবেল থেকে জানা যায়।
[7] গ্রিসে: প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। গ্রিক নগর-রাষ্ট্রগুলির জনসংখ্যার একটি বড়াে অংশই ছিল ক্রীতদাস। সেখানকার গৃহ, কৃষিক্ষেত্রে, কারখানা প্রভৃতি কাজে তারা নিযুক্ত হত।
[8] রোমে: প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস প্রথা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। রােমান অর্থনীতি মূলত ক্রীতদাস প্রথার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
[9] ভারতে: ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক যুগে অনার্যরা দাস বা ‘দস্যু বলে গণ্য হত। পরবর্তীকালে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ও অশােকের লেখমালাতে দাসপ্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। কুষাণ ও গুপ্তযুগেও দাসব্যবস্থা চালু ছিল বলে কু ঐতিহাসিক মনে করেন।
প্রাচীন রােমান সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস প্রথার বিভিন্ন দিকগুলি নীচে আলােচনা করা হল一
[1] ক্রীতদাস সৃষ্টি: রােমে যুদ্ধবন্দি, দারিদ্র্যের কারণে বিক্রীত বা পরিত্যক্ত শিশু, ঋণ পরিশােধে অক্ষম ব্যক্তি এবং ক্রীতদাসদের সন্তানদের (জন্মসূত্রে) ক্রীতদাসে পরিণত করা হত।
[2] ব্যাপকতা: খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সেখানকার কৃষিক্ষেত্রে ক্রীতদাসরা ব্যাপক পরিমাণে নিযুক্ত হতে থাকে। কোনাে কোনাে ধনী প্রভুর অধীনে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত ক্রীতদাস থাকত বলে জানা যায়।
[3] নির্যাতন: রােমের ক্রীতদাসদের কোনো ধরনের আইনগত বা নাগরিক অধিকার ছিল না। প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি এই ক্রীতদাসরা সীমাহীন নির্যাতন ভােগ করতে বাধ্য হত। প্রভু তাদের বিক্রি করতে, এমনকি হত্যাও করতে পারত।
[4] সাম্রাজ্যের পতনে ভূমিকা: নির্যাতিত ক্রীতদাসদের বারংবার বিদ্রোহের ফলে একসময় রােমান সাম্রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করেছিল। ক্রীতদাসদের শ্রমে রােমের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলেও শেষপর্যন্ত ক্রীতদাস প্রথা রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রস্তুত করে দিয়েছিল।
Leave a comment