মধ্যযুগের দ্বিতীয়ার্ধে ইউরােপে বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এই সময় ইউরােপে নিজের শ্রেণিস্বার্থ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা বণিক সংঘ (Merchant Guild) এবং শিল্পী- কারিগররা কারিগর সংঘ (Craft Guild) গড়ে তুলেছিল।
[1] ব্যবসায়ীদের গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ
-
বিধান: মধ্যযুগে সর্বদা ব্যাবসাবাপিজ্য নিরাপত্তার অভাব, অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বণিকদের চিন্তিত করত। বাণিজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে গিল্ড বা সংঘ গড়ে তুলেছিল।
-
বেআইনি কর আদায় রােধ: সামন্তপ্রভুরা বিভিন্ন অজুহাতে বণিকদের কাছ থেকে সর্বদা বিভিন্ন বেআইনি বা অন্যান্য কর আদায় করত। এ ধরনের কর আদায় প্রতিরােধ করতে ব্যবসায়ীরা গিল্ডের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
-
দস্যুদের মােকাবিলা: বাণিজ্যপথে দস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বণিকরা নিজেদের খরচে ভাড়াটে রক্ষীবাহিনী নিয়ােগ করত। এই কাজ তদারকির উদ্দেশ্যে গিল্ড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
-
নগর ও বন্দরগুলিতে আধিপত্য: কলুসেডের পরবর্তীকালে সামন্ততন্ত্রের দুর্বলতার সুযােগে বণিকরা নগর ও বন্দরগুলিতে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই আধিপত্যকে আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে বণিকরা গিল্ড প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজন অনুভব করে।
[2] কারিগরদের গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ
-
শ্রেণি-স্বার্থ রক্ষা: বণিকরা যাতে কারিগরদের পণ্যের মূল্য বা শ্রমের মজুরি কম না দিতে পারে তার জন্য কারিগররা ঐক্যবদ্ধ সংগঠন গড়ে তােলে।
-
প্রতিদ্বন্দ্বিতা রােধ: কোনাে কোনাে কারিগর অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নিজের পণ্য কম দামে বিক্রি করত। ফলে উভয় প্রতিপক্ষেরই ক্ষতি হত। এই প্রবণতা রােধ করে পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে রেষারেষি বন্ধের উদ্দেশ্যে গিল্ডের প্রতিষ্ঠা হয়।
-
কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখা: সব কারিগরের পক্ষে সবসময় কাঁচামাল জোগাড় করে ওঠা সম্ভব হত না। তাই কাঁচামাল ও পণ্যের জোগান নিয়মিত রেখে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে গিল্ড গঠনের প্রয়ােজন হয়।
-
ক্রেতাস্বার্থ রক্ষা: অসাধু কারিগরদের হাত থেকে ক্রেতাদের রক্ষা করতে গিল্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অসাধু কারিগরদের চিহ্নিত করে যাতে তাদের শান্তির ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে গিল্ড সতর্ক দৃষ্টি রাখত।
উপসংহার: গিল্ডগুলি প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার তাগিদটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু গিল্ডের কর্মকর্তারা বাস্তবক্ষেত্রে শিল্পের চিরাচরিত প্রথার দিকে বেশি নজর দেওয়ার ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কার ও উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার বিশেষভাবে ব্যাহত হয়েছিল।
Leave a comment