প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন যুগে কৃষি ও শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি বাণিজ্যের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। একইভাবে মধ্যযুগের ইউরােপেও বাণিজ্যের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। নীচে ভারত ও ইউরোপের বাণিজ্যের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলােচনা করা হল一

ভারতের বাণিজ্য

  • প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যের বিকাশে ধর্মের প্রত্যক্ষ কোনাে ভূমিকা ছাড়াই প্রাচীনকালে ভারতের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যের যােগাযােগ গড়ে উঠেছিল।

  • প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের বিকাশে বিভিন্ন নগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। নগরগুলি বণিকদের বাসস্থান, পণ্যের লেনদেন, শ্রমিকের জোগান প্রভৃতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল।

  • প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এখানকার বণিক ও কারিগর-শ্রমিকদের গিল্ডগুলি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। গিল্ডগুলি বাণিজ্যের কাজে পণ্যের জোগান, শ্রমিকের জোগান, পণ্যের মূল্যমান রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

  • প্রাচীন ভারতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছিল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে খাদ্যশস্য, বিভিন্ন ধাতু ও দামি পাথর প্রভৃতি আমদানি-রপ্তানি চলত।

  • প্রাচীন ভারতের সঙ্গে স্থলপথে এবং সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতে বস্ত্র, ওষুধ, টিন, কাচ, দামি পাথর, রং প্রভৃতি আমদানি করা হত। ভারত থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হত হিরে, প্রবাল, তামা, লােহা, চন্দন কাঠ, সুতিবন্ত্ৰ, মসলিন, হাতির দাঁত, নীলকান্ত মণি, সুগন্ধি দ্রব্য, বনৌষধি প্রভৃতি।

  • প্রাচীনযুগে ভারতে প্রথমদিকে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে পণ্য বিনিময় হত৷ পরে গােধন এবং আরও পরে স্বর্ণ- খণ্ডের মাধ্যমে পণ্যের বিনিময় হত বলে মনে করা হয়।

  • প্রাচীন ভারতের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম। ছিল রাজগৃহ, বৈশালী, শ্রাবস্তী, মথুরা, তক্ষশিলা, বারাণসী, উজ্জয়িনী, কৌশাম্বী, সোপারা, কল্যাণ, তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি।

ইউরােপের বাণিজ্য

  • মধ্যযুগে ইউরােপে বাণিজ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিষয়, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

  • মধ্যযুগের ইউরোপের নগরগুলিও সেখানকার বাণিজ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল|নগরগুলি পণ্য চলাচল, শ্রমিকের জোগান, বণিকদের বাসস্থান প্রভৃতির কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

  • মধ্যযুগের ইউরােপের গিল্ডগুলি বাণিজ্যের কাজে পণ্যের জোগান, শ্রমিকের জোগান, পণ্যের মূল্যমান রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

  • মধ্যযুগের ইউরােপের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে, বিশেষ করে ইউরােপের পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য চলত।

  • মধ্যযুগের ইউরােপের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। আরব, মিশর, ভারত, চিন প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে ইউরােপের বণিকরা পণ্য লেনদেনের উদ্দেশ্যে পৌছে গিয়েছিল। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে ক্রীতদাস আমদানি করা হত।

  • মধ্যযুগে ইউরােপে সুনির্দিষ্ট মুদ্রাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। ফলে এই সময় মুদ্রার মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং পণ্য বিনিময়ের কাজ চলত।

  • মধ্যযুগের ইউরােপে প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল নেপলস, র্যাভেনা, পিসা, আমালফি, ভেনিস, জেনােয়া, মিলনা, পেভিয়া প্রভৃতি।